thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস

২০১৩ নভেম্বর ০৭ ০৮:৪২:১৩
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস

মাহমুদুল হাসান দিরিপোর্ট২৪ : ৭ নভেম্বর। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সংঘটিত সিপাহী ও জনতার বিপ্লবের স্মরণে এই দিবসটি পালিত হয়। এদিন সিপাহী-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঢাকা সেনানিবাসের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে আনেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে।

এ দিনটিকে মূলত জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল বিএনপি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে। এ ধারাবাহিকতায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় বিএনপির পক্ষ থেকে সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। একই দিন সকাল ১০টায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের কারিগর ছিলেন তাহের। যার ফলে ক্ষমতায় বসেন জিয়া। ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানে জেনারেল খালেদ মোশাররফ রক্তপাতহীন ক্যু করতে গিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তার নিজ বাসভবনে গৃহবন্দি করেন। কর্নেল (অব.) আবু তাহের সে সময় চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। কর্নেল তাহের ছিলেন জিয়াউর রহমানের একজন বিশেষ শুভাকাঙ্ক্ষী। তিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। সৈনিক-অফিসার বৈষম্য তার পছন্দ ছিল না। তার এই নীতির জন্য তাহের সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈনিকদের মাঝেও দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন। কর্নেল তাহের বিশ্বাস করতেন জিয়াও তারই আদর্শের লোক। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কর্নেল তাহের হত্যা নিয়ে জিয়াউর রহমানকে জড়িয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে।

জিয়া তার বাসভবনে বন্দি হয়ে থাকেন। খালেদ মোশারফের নির্দেশে তাকে বন্দি করে রাখেন তরুণ ক্যাপ্টেন হাফিজুল্লাহ। জিয়ার বাসার টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু ক্যাপ্টেন হাফিজুল্লাহ একটি ভুল করেন। তিনি ভুলে যান বেডরুমেও একটি টেলিফোন আছে। জিয়া কৌশলে বেডরুম থেকে ফোন করেন তাহেরকে। খুব সংক্ষেপে বলেন, ‘সেভ মাই লাইফ’।

তাহের জিয়ার আহ্বানে সাড়া দেন। তিনি ঢাকায় তার অনুগত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিপাহীদের পাল্টা প্রতিরোধ গড়ার নির্দেশ দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা রওনা হন। এ সময় তার সফরসঙ্গী ছিল শত শত জাসদ কর্মী। কর্নেল তাহেরের এই পাল্টা অভ্যুত্থান সফল হয় ৭ নভেম্বর। কর্নেল তাহের জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। ওইদিনই পাল্টা অভ্যুত্থানে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা জেনারেল খালেদ মোশারফকে হত্যা করে।

প্রসঙ্গত, কথা ছিল, জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে আনা হবে। তারপর জাসদের অফিসে তাকে এনে তাহেরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হবে। পরে সিপাহী-জনতার এক সমাবেশ হবে। সেখানে বক্তব্য রাখবেন জিয়া আর তাহের। কিন্তু মুক্ত হওয়ার পরে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। জিয়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হতে সম্মত হন না। ঊর্ধ্বতন সামরিক অফিসাররা তাকে পরামর্শ দিতে থাকেন। তাহের জিয়াকে ভাষণ দিতে বলেন। জিয়া ভাষণ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাহের বুঝতে পারেন জিয়া তাদের সঙ্গে আর থাকছেন না। তিনি পুনরায় সংগঠিত হতে থাকেন। কিন্তু জিয়া বুঝতে পারেন ক্ষমতায় টিকতে হলে তাহেরসহ জাসদকে সরাতে হবে। সেই অনুযায়ী গ্রেফতার হতে থাকেন জাসদের সব নেতা। তাহেরও গ্রেফতার হন। শুরু হয় এক প্রহসনের এক বিচার। গোপন আদালতে চলতে থাকে সেই বিচার। ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়। অন্য নেতাদের বিভিন্ন
মেয়াদে জেল হয়।

কর্নেল (অব.) আবু তাহেরের নেতৃত্বে সংঘটিত এই বিপ্লব জেনারেল খালেদ মোশাররফের ৩ দিনের সরকারের পতন ঘটায়। এই বিপ্লবের ফলে জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান এবং পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় আসেন। কোনো কোনো সময়ে ৭ নভেম্বর সরকারি ছুটি হিসেবে পালিত হয়েছে। কিন্তু ২০০৭ সালে ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ দিনের সরকারি ছুটি বাতিল করে এবং দিবসটি পালন করা থেকে বিরত থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারও তা পালন করছে না। এর আগে ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারও দিবসটি পালন করা থেকে বিরত ছিল। বাতিল করেছিল সরকারি ছুটি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। কিন্তু খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতার নেপথ্যে ছিলেন ১৫ আগস্টের ঘটনার মূল নায়কেরা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশারফ (বীরউত্তম) এই ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেননি। তিনি তার অনুগত সৈন্যবাহিনী নিয়ে ৩ নভেম্বর মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটান। অভ্যুত্থানটি প্রাথমিকভাবে সফলও হয়। কিন্তু তার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৩ দিন। বস্তুত খালেদ মোশাররফ রক্তপাত এড়াতে চেষ্টা করেছিলেন, যা পরবর্তী সময়ে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

(দিরিপোর্ট২৪/এমএইচ/নভেম্বর ০৭, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর