thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ১১ জানুয়ারি 25, ২৮ পৌষ ১৪৩১,  ১১ রজব 1446

উপজেলা নির্বাচন

চৌগাছার ৩ গ্রামে তাণ্ডব, বিজিবি মোতায়েন

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২৪ ১৭:৫৭:৫৬
চৌগাছার ৩ গ্রামে তাণ্ডব, বিজিবি মোতায়েন

যশোর অফিস : উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে যশোরের চৌগাছা উপজেলার তিনটি গ্রামে বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট করেছে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। ঘটনার সময় পুলিশও এ তাণ্ডবে অংশ নেয় বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর।

হামলায় তিনটি গ্রামের অন্তত ১০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ১০ জনকে। গ্রাম তিনটির বিএনপি সমর্থকরা এখন চরম আতঙ্কে রয়েছেন।

এদিকে নির্বাচনী সহিংসতা প্রতিরোধ এবং ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সোমবার যশোরের চার উপজেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি ২৬ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান বলেন, ‘মেজর আজাদের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা চৌগাছা পৌঁছে গেছে। পরবর্তী যে কোনো ঘটনা মোবাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে তারা।’

বিএনপি নেতারা এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। তবে তাণ্ডবে অংশ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে পুলিশ। আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বলছেন, ঘটনাটি ব্যক্তিগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট হতে পারে।

হামলার কথা জানতে পেরে সোমবার যশোরের একদল সাংবাদিক চৌগাছার কাবিলপুর, সৈয়দপুর ও শাহজাদপুরে যান। গ্রাম তিনটির বেশ কিছু বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট হওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে জখম অবস্থায় দেখতে পান তারা। এ সময় গ্রামবাসী রবিবার রাতের তাণ্ডবের বর্ণনা দেন।

গ্রামবাসী জানান, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে যাতে কেন্দ্রে যেতে না পারে সে জন্য রবিবার সকাল থেকে বিএনপি সমর্থকদের হুমকি দিতে থাকে স্থানীয় ইউপি মেম্বার শফিকুল ও মোস্তর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আশ্রিত সন্ত্রাসীরা। তারা প্রথমে কাবিলপুর বাজারে রাফিউল ইসলাম নামে এক বিএনপি কর্মীকে ছুরি মারে।

আহত রাফিউলের ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, এরপর দিনের বেলা আর তেমন কোনো ঘটনা না ঘটলেও রাত সাড়ে ৮টার দিকে ৮০ থেকে ১০০ জনের একটি দল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে গ্রাম তিনটিতে। তারা গ্রামগুলোর বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িগুলোতে একের পর এক হানা দিতে থাকে। ঘরের টিন, বেড়া থেকে শুরু করে আসবাবপত্র এমনকি গাছ পর্যন্ত কেটে সয়লাব করে দেয়। নগদ টাকা, গহনা, সেলাই মেশিনসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায় তারা।

এ সময় ঘটনাস্থলে দশপাখিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই তারেক উপস্থিত ছিলেন। গ্রামবাসীর অভিযোগ, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে মিলে পুলিশও এই তাণ্ডবে অংশ নেয়।

সন্ত্রাসীদের হামলায় কাবিলপুরের সাদ্দাম হোসেন ও মনিরের দোকান, সরোয়ার হোসেন, মতিয়ার, জিন্নাত, শফিকুল, শাহজাদপুরের আবদুল খালেক, জাকির হোসেনের বাড়িঘর ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে বলে সাংবাদিকরা সরেজমিনে দেখতে পান। এ ছাড়া কাবিলপুরের আনোয়ার হোসেনের সেচ পাম্প, শফিকুলের বাড়ি থেকে একটি ছাগল, সেলাই মেশিন এমনকি কবুতর পর্যন্ত ধরে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা।

ক্ষতিগ্রস্ত শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তার বাড়িতে হামলায় পুলিশের এসআই তারেক নেতৃত্ব দেন। এ সময় তিনি বাড়ির নারীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলেও অভিযোগ করেন শফিকুল।

ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সাংবাদিকদের ঘিরে ধরে তাদের ক্ষোভের কথা জানান। এ সময় বেশ কয়েকজন গৃহবধূ কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তারা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলোর বাসিন্দাদের ঘরে এখন বালিশ-কাঁথা পর্যন্ত নেই। তারা এ ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগ আশ্রিত সন্ত্রাসীদের দায়ী করে অবিলম্বে এদের বিচার দাবি করেন।

ঘটনার সঙ্গে পুলিশের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী পোস্টার ছেড়াকে কেন্দ্র করে দু’দলের সংঘর্ষ হয়েছে শুনে আমি দশপাখিয়া ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই তারেককে ঘটনাস্থলে পাঠাই। তারেক তো ভালো ছেলে। সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশ নেবে বলে আমার বিশ্বাস হয় না।’

যোগাযোগ করা হলে যশোরের পুলিশ সুপার জয়দেবকুমার ভদ্র বলেন, ‘ঘটনার ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী থানায় অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কেউ ঘটনার সঙ্গে পুলিশের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনেননি। তবু যখন অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

তিন গ্রামে সন্ত্রাসী তাণ্ডবের ব্যাপারের সোমবার দুপুরে চৌগাছা উপজেলা বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘নারকীয় হামলা লুটপাটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী একতরফা ভোটের আয়োজন করতে চাইছেন। বিএনপিকে কর্মীশূন্য করে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চান।’

অ্যাডভোকেট সাবু বলেন, ‘আওয়ামী প্রার্থীর কারণে চৌগাছায় নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অবস্থার উন্নতি না হলে মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে না।’

উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘জনগণের রায় ছিনিয়ে নিতে নিরীহ গ্রামবাসীদের অত্যাচার করা হচ্ছে। এই অবস্থা সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়।’

তবে ঘটনার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কর্মীরা জড়িত নয় বলে দাবি করেন দলটির সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম হাবিবুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থল একেবারে ভারত সীমান্তে। সীমান্ত অঞ্চলে প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এ সব ব্যক্তিগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়।’

ঘটনার ব্যাপারে মূল অভিযুক্ত শফিকুল মেম্বার ও মোস্তকে চেনেন কিনা জানতে চাইলে এসএম হাবিব হ্যাঁ-সূচক জবাব দেন। তবে তিনি বলেন, ‘এরা আওয়ামী লীগের কোনো পোর্টফোলিও হোল্ড করে না।’

(দ্য রিপোর্ট/একে/এনডিএস/আরকে/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর