thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ জুন 25, ৩ আষাঢ় ১৪৩২,  ২০ জিলহজ 1446

‘গুন্ডে’তে পরিবর্তন আনবে না নির্মাতারা

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২৪ ২২:৫৭:৪১
‘গুন্ডে’তে পরিবর্তন আনবে না নির্মাতারা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বলিউডের হিন্দি ছবি 'গুন্ডে'-তে যেভাবে ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধকে বর্ণনা করা হয়েছে, তার জন্য ছবিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যশরাজ ফিল্মস দুঃখ প্রকাশ করলেও ছবিটির প্রদর্শন বাতিল করা বা তাতে পরিবর্তন আনার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। মুম্বাই থেকে যশরাজ ফিল্মস কর্তৃপক্ষ এ কথা নিশ্চিত করেছে। খবর বিবিসির।

তবে ভারতের চিত্রপরিচালকদের অনেকেই বলছেন, এই ছবিতে সত্যিই ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো ইতিহাসবিদ মনে করছেন, একটা ‘সামান্য ব্যাপারে’ বাংলাদেশ একটু বেশিই প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।

বাংলাদেশে সমালোচনা : ১৯৭১ সালে ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের’ পরিণামেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্ম– গুন্ডে ছায়াছবিতে এই বিতর্কিত মন্তব্যকে ঘিরেই গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে তোলপাড় চলছে।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তীব্র প্রতিবাদের পর ঢাকায় এই ইস্যুতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। প্রতিবাদ জানিয়ে ইতোমধ্যেই ভারতকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘যারাই ছবিটি বানিয়ে থাকুন, তারা চরম অশিক্ষিত বলতেই হবে। বিন্দুমাত্র ইতিহাস জ্ঞান নেই তাদের। অথচ এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে ছবি বানিয়েছেন– বাংলাদেশে প্রতিবাদ হওয়াটাই তো স্বাভাবিক।’

গুন্ডের ভাষ্য অনুযায়ী ১৯৭১ সালে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে তৃতীয় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ৯০ হাজার পাকিস্তানি সেনা ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বড়মাপের আত্মসমর্পণ আর হয়নি। তারপরই জন্ম হয় নতুন এক দেশের– বাংলাদেশ যার নাম।

নির্মাতাদের বক্তব্য : ছবিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যশরাজ ফিল্মস দিনকয়েক আগেই তাদের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছে– 'এ বিষয়ে অনেক বাংলাদেশি ভাই তাদের উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন এবং গুন্ডেতে যেভাবে গল্প বলা হয়েছে তা যদি তাদের অমর্যাদা করে থাকে বা আঘাত দিয়ে থাকে, তার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।'

সংস্থার একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানান, এর বাইরে তাদের আর আপাতত যোগ করার কিছু নেই।

কিন্তু ভারত ও বিদেশের হাজার হাজার সিনেমা হলে ছবিটি এখন চলছে। ফলে তার প্রদর্শন বাতিল করা বা ছবির প্রিন্টে এখন কোনো রদবদল করা যে অসম্ভব, সেটাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন তিনি।

বর্ষীয়ান চিত্রপরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বলেছেন, 'ছবি আপনি যে কোনো বিষয় নিয়েই বানাতে পারেন, সেই স্বাধীনতা সবারই আছে। কিন্তু ইতিহাসকে বিকৃত করার স্বাধীনতা আপনার নেই, আর যখন সে ইতিহাস খুব দূরেরও নয়।'

তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমকালীন ইতিহাসের অধ্যাপক ড. শান্তনু চক্রবর্তী মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভারতের তৈরি বিভিন্ন সিনেমার কাহিনী বা সংলাপ নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিক্ষোভ কিন্তু নতুন ঘটনা নয়। অতীতে 'তেরে বিন লাদেন', 'বিশ্বরূপম' বা 'বর্ডার' ছবি নিয়েও প্রতিবেশী দেশগুলোতে সমস্যা হয়েছিল।

বিশেষ করে তিনি উল্লেখ করছিলেন 'চাঁদনি চক টু চায়না' ছবি নিয়ে বিতর্কের কথা, যে ছবিতে ভারতকে গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান হিসেবে উল্লেখ করার পর নেপালে তুমুল বিক্ষোভ হয়েছিল। সে দেশে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ছবিটির প্রদর্শন।

ড. শান্তনু চক্রবর্তী তাই এক্ষেত্রেও মনে করছেন, গুন্ডেকে নিয়ে বাংলাদেশ যে প্রতিবাদ দেখাচ্ছে তারও একটা সঙ্গত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে।

ভারত সরকার অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে গুন্ডে বিতর্ক নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।

সাউথ ব্লকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের চিঠিটি ভালো করে খুঁটিয়ে পড়ার পরই তারা প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন।

(দ্য রিপোর্ট/একে/এএল/এমডি/এজেড/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জলসা ঘর এর সর্বশেষ খবর

জলসা ঘর - এর সব খবর