thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ১৭ জমাদিউল আউয়াল 1446

তরুণ শিল্পী সোহেলের জন্য এগিয়ে আসুন

২০১৭ আগস্ট ১৯ ২১:২৭:৩২
তরুণ শিল্পী সোহেলের জন্য এগিয়ে আসুন

মহিউদ্দীন মোহাম্মদ, দ্য রিপোর্ট : যখন শিল্পী সোহেল রানা প্রাণনের তুলি নিয়ে ক্যানভাসে ব্যস্ত থাকার কথা, সেসময় এই শিল্পী বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে শামিল। আশা ও নিরাশার দোলাচালে দুলছেন তিনি। আবার ফিরবেন সবার মাঝে, আবার আঁকবেন ছবি। এই স্বপ্নের কথাও শোনাচ্ছেন সবাইকে। কিন্তু স্বজন ও বন্ধুদের ভগ্ন মনোরথ। তার চিকিৎসার জন্য শেষ পর্যন্ত অর্থের যোগান হবে তো? কেবলই এই জিজ্ঞাসা সবার। একজন স্বপ্নসারথী ও সমাজেরই সজ্জন ব্যক্তি প্রাণন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ তরুণ শিল্পী তিনি। বহুগুণে গুণান্বিত এই মানুষটি জীবনের কঠিন পরীক্ষা দিতে শুরু করেছে। আগে বুঝতে পারেনি কিছুই। হঠাৎ জ্বর আর কাশির কারণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তিনি। তারই পরামর্শে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে জানা গেল সেই দুঃসহ সংবাদটি। শিল্পীর দুটি কিডনি পুরোপুরি বিকল হয়ে পড়েছে।

এমন খবরে তার শিল্পী সহধর্মিণী, তার মা, স্বজন, বন্ধু বান্ধব সকলে মুষড়ে পড়েছেন। না, এটা মেনে নেওয়া কারোর জন্যই সম্ভব নয়। প্রাণন প্রথমে ভর্তি হয়েছিলেন ধানমণ্ডির একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন । কিছুদিন বাদে ফিরে গেছেন শিল্পী মোহাম্মদপুরের বাসায়। বর্তমানে দুদিন পর পর চলছে ডায়ালাইসিস। স্ত্রী,স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা অধীর অপেক্ষায় ।প্রাণানন্তকর চেষ্টা চালাচ্ছেন তার চিকিৎসার জন্য অর্থ সংকুলানের। অর্থের যোগান হলেই তবে তাকে নেওয়া হবে ইন্ডিয়ার ভেলোরে । কিন্তু সেই অপেক্ষা শেষ হবে কবে, কখন, কে জানে? নাকি অনন্তকালের জন্য একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র নিষ্প্রভ হয়ে যাবে; একটা সম্ভাবনাকে হারিয়ে ফেলবে সবাই?

সোহেল,তিনি তার তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে গল্প শুনিয়েছেন, কবির মত বয়ান দিয়েছেন, মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, প্রণোদনা জুগিয়েছেন। তার তুলিতে বাংলার নৈসর্গিক চিত্র যেমন উঠে এসেছে, তেমনি অনেক মানুষের প্রতিকৃতি এঁকেছেন সযত্নে। এঁকেছেন গভীর মমতায় জাতির জনকের প্রতিকৃতিও। তার তুলিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে বহু বন্ধুর মুখ। এঁকেছেন পাবলো পিকাসোকে, এঁকেছেন জয়নুল আবেদীন, এসএম সুলতান, কামরুল হাসান রামকিংকর বেইজ,রবী ঠাকুর, কবি নজরুল,ভ্যানগঘ, চেগুয়েভারা,ফ্রিদা কালো, চিত্র নায়িকা সুচিত্রা সেন, ববিতাসহ বহু লিজেন্ডের মুখাবয়ব। এঁকেছেন নানা ঘরাণার ছবি। তার চিত্রকলার বিষয় বাংলার প্রকৃতি, মানুষের মুখ, জনজীবনের কর্মিষ্ঠ ও অলসায়িত রূপ। এছাড়া নদী, খাল, বাড়ির আঙ্গিনা, প্রাঙ্গণ,মাঠ, প্রাণনের পর্যবেক্ষণের বিশেষ দিক।

এই শিল্পীর কাজ সম্পর্কে শিল্পসমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ বলেন, ‘নাঈভ বা সরলা স্বভাবের শিল্পী মনের কাছে পথিবীর মহামানবেরা বিশেষ অভিব্যক্তি পেয়ে থাকে। প্রাণনের মধ্যেও কাজ করেছে সেই বোধ। প্রকৃতি যেমন তার মনোমুকুর,সৃজন পথের মহাজনরাও তার কাছে দর্শন বিশেষ। তাদের মুখে সৃজনধর্মের সূত্রে যে অভিব্যক্তি আছে তা নিরীক্ষণ করেছেন প্রাণন। মাইকেল মধুসূদন, সুলতান, ফ্রিদা কালো, চে গেভারা, লুই আই কান, ভ্যানগঘ, উত্তম, সুচিত্রা, ববিতা প্রমুখ মানুষের চোখ ও মুখের ভঙ্গি পাঠ করেছেন শিল্পী। এই মানুষেরাও আইকন বা প্রতিমা। এঁরা আধুনিক মানুষের পূজনীয় দেবতা। এই মহাজনরা প্রাণনের অন্তরে বিরাজ করেন।…..‘স্বভাবকবির মত স্বভাব শিল্পীর বৈশিষ্ট্যে পরিকীর্ণ প্রাণনের কাজ। শিল্পে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেও একাডেমী বা কোনো গুরুর ধারার অনুবর্তী হতে চাননি এই তরুণ।…প্রাণন এভাবে শিল্পের নানা মাত্রা অনুভব করতে চেয়েছেন।’

ফ্রিল্যান্স চিত্র শিল্পী সোহেল রানা প্রাণন ১৯৭৮ সালে যশোরে জন্ম গ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ডেভলপমেন্ট অল্টারনেটিভ’ধানমণ্ডি থেকে ড্রইং এন্ড পেইন্টিং-এ মাস্টার্স অফ ফাইন আর্ট ডিগ্রি অর্জন করেন।তার আগে ২০০৪ সালে একই বিষয়ে ব্যাচেলার ডিগ্রি নেন খুলনা আর্ট কলেজ থেকে।

এই শিল্পী কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বেশকিছু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ২০০৯ সালে ‘মুক্তচোখ’ শীর্ষক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় তিনি থার্ড প্রাইজ পান। এর আগে ২০০৬ সালে ১১তম বার্জার তরুণ পেইন্টার প্রতিযোগিতায় ফিফথ হন। সোহেল সলো বা একক চিত্রপ্রদর্শনী করেছেন ।

এর মধ্যে ঢাকাতে ২০১৬ সালে শিল্পাঙ্গন আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয় ‘এক্সিসটেন্স’ শীর্ষক তার তৃতীয় একক চিত্র প্রদর্শনী।একই বছর যশোরের প্রাচ্য সংঘে ‘রুট’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী হয়। ২০১৩ তে ঢাকা আর্ট সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় ‘রূপ শিল্পের দেশে’ শীর্ষক তার দ্বিতীয় একক চিত্র প্রদর্শনী। এছাড়া শিল্পীর নিজ বাসভূম যশোর ২০০০-এ যশোর পাবলিক লাইব্রেরির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী। এছাড়া শিল্পী সোহেল প্রাণন বৃহৎ পরিসরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতেসহ ১৬টি যৌথ চিত্রপ্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে ২০১৫তে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ২১তম জাতীয় চিত্রপ্রদর্শনী,একই বছর ঢাকার গ্যালারী কসমসে ‘সফট রিফ্লেকশন’ শীর্ষক সমসাময়িক শিল্পীদের সাথে প্রদর্শনীতে অংশ নেন। এর আগে ২০১২তে সাম্প্রতিক ড্রইং-এর ওপর ‘ম্যাজিক অফ লাইনস’ কসমস গ্যালারিতে,২০১১ সালে বর্ণিকা আর্ট স্টুডিও’র আয়োজনে ক্যাফে ম্যাংগোতে উডকাট শোতে অংশ নেন। একই বছর আরো তিনটি প্রদর্শনীতে অংশ নেন তিনি। বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের সার্ধশত বার্ষিকী উপলক্ষে শিল্পকলার আয়োজনে চিত্র প্রদর্শনীতে তিনি অংশ নেন। এছাড়া ঢাকার শিল্পাঙ্গন আর্ট গ্যালারীতে ‘প্রেজেন্ট পারফেক্ট কন্টিনিয়াস’ শীর্ষক এবং শিল্পকলায় জাতীয় চিত্র প্রদর্শনীতে শিল্পী সোহেল প্রাণন অংশ গ্রহণ করেন। এসব প্রদর্শনীগুলেfত তার চিত্রকলা শিল্পবোদ্ধাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। একইভাবে শ্রেণিভেদে নানা দর্শক তার কাজের ভুয়সী প্রশংসা করেন। শিল্পকর্মে আরো দক্ষতা অর্জনের জন্য তিনি বিভিন্ন দেশের ও আর্ন্তজার্তিক গুণী শিল্পীদের সাথে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৩টিরমত ওয়ার্কশপে অংশ নিয়েছেন। চারুশিল্পের নানা মাধ্যমে মুন্সিয়ানা অর্জন করেছেন ওইসব কর্মশালা থেকে। পাশাপাশি মতবিনিময়ের মাধ্যমে ঋদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিল্পীদের অনেকগুলো আর্টক্যাম্পে অংশ নিয়েছেন প্রাণন। এসব ক্যাম্পে দেশী-বিদেশী খ্যাতিমান শিল্পীদের অংশগ্রহণ ছিল। তার স্ত্রীও চিত্র শিল্পী। সান্ত্বনা শাহরিন নিনি। তিনি তাকে উৎসাহ জুগিয়ে যান নতুন কিছু করার জন্য। তাদের একটি স্টুডিও আছে। বর্ণিকা আর্ট স্টুডিও। মোহাম্মদপুরের কাদিরাবাদ হাউজিংএ ।

শিল্পীর অনেক স্বপ্ন-তার নিজবাসভূম যশোরে একটা স্টুডিও করার। পৃথিবীর লিজেন্ড শিল্পীদের যেমন থাকে,ছিল। এর অধীনে আঁকা-আঁকি শিখবে সবাই। পাশাপাশি স্টুডিওকে কেন্দ্র করে শিল্পী-সাহিত্যিকরা মিলিত হবে। সবাই সবার চিন্তা-ভাবনা শেয়ার করবে। সুন্দরের সাধনায় জীবনটাকে নিমগ্ন রাখবার এ এক নিরন্তর প্রচেষ্টা তার। তাই ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে শিল্পী পালবাড়ীর গাজীর ঘাট রোডের নিজের বাড়িতে তৈরি করেছেন শিশুর জন্য চিত্রকলা শিক্ষালয়। চলছিল ভালই, সাড়া পড়েছিল সবখানে। বর্ণিকা আর্ট স্টুডিওর সাথে সম্পৃক্ত করলেন শিশুদের ওই আর্টস্কুলটি। সুলতানের পথ ধরেই স্বপ্নের ডানা মেলেছেন তিনি। গোড়াতেই শিশুদের ভেতরে চারুকলার বীজ বপন করা গেলে তবেই না সুন্দর বিকশিত হবে। স্বার্থক হবে চিত্রকলার চর্চা। এমনই ভাবনা সোহেল প্রাণনের। কিন্তু হায়! নিয়তির নির্মম পরিহাস! কখন যে শরীরে ঘুণ পোকা বাসা বেঁধেছে টেরই পান নি শিল্পী । শেষমেশ সনাক্ত হলো তার কিডনি দুটি বিকল হয়ে গেছে। তার পরিবারের তেমন সামর্থ নেই যে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করবে। এমন অবস্থায় শিল্পীর মা, তার স্ত্রী, বন্ধু বান্ধবরা সমাজের নানা স্তরের মানুষের উদার সহযোগিতা চেয়েছেন। এই শিল্পীকে বাঁচানো দরকার। শিল্পী এখনও দৃঢ়চেতা। তার বিশ্বস কিচ্ছু হয়নি । খুব শিগগিরই সুস্থ হয়ে ফিরবেনই আঁকা-আঁকিতে। যেহেতু সোহেল এখনও তরুণ-তার জাতিকে দেওয়ার আছে অনেক কিছু।

পরিবার ও স্বজনদের প্রত্যাশা শিল্পীকে বাঁচাতে সকলে এগিয়ে আসবেন। এমন একজন প্রতিভাধর ব্যক্তি দেশ ও জাতির অনেক বড় সম্পদ। রাষ্ট্রেরও উচিত হবে তার চিকিৎসার ব্যয়ভারের দায়িত্ব নেওয়া। আমাদের দেশের উদারচিত্ত,সুযোগ্য মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবিনীত নিবেদন তিনিও যেন সদয় হন। শিল্পীকে সবাই মিলিয়ে বাঁচানো দরকার। সোহেল প্রাণন শুধু ছবি আঁকেন না। গান লেখেন, নিজেই সুর দেন নিজের গানে। তার শিল্পভাবন নিয়ে লেখেন প্রবন্ধ। আউট ডোরে কাজ করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়-তা অবলিলায় প্রকাশ করেন তার সরল গদ্যে।

এই শিল্পী এসএম সুলতানকে পূণাঙ্গ আদর্শ মানেন। আর তার পথ অনুসরণ করে অনেকটা দূর হেঁটে এসেছেন। আরো দূরে যেতে চান তিনি। কাজ করতে চান মানুষের জন্য, জাতির জন্য, রাষ্ট্রের জন্য।

প্রতিভাবানরাই রাষ্ট্রের মুখ উজ্জ্বল করে। জাতির শীরদাড়া উঁচু হয় তাদেরই বদান্যতায়। রাষ্ট্রের কর্ণধরদের কাছেও একই মিনতি শিল্পীকে বাঁচান। একটা কিছু ব্যবস্থা নিন সবাই। সোহেল বাঁচবে, তাকে বাঁচাতে হবে-এখন একমাত্র এই মিনতি । সকলে সদয় হোন, এগিয়ে আসুন শিল্পীর জন্য।

সহায়তা পাঠান এই ঠিকানায় :

মুহাম্মাদ শামসুজ্জামান (সঞ্চয়ী হিসেব নম্বর : ১৩৮২১০৪০০১৭৭৭৯, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, আসাদ গেইট শাখা, ঢাকা)

বিকাশ নম্বর : ০১৭১৪১৬৬৭১১

(দ্য রিপোর্ট/এজে/আগস্ট ১৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

শিল্প ও সংস্কৃতি এর সর্বশেষ খবর

শিল্প ও সংস্কৃতি - এর সব খবর