thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

বাংলা হলো রাষ্ট্রভাষা

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২৭ ১২:৩৩:১৯
বাংলা হলো রাষ্ট্রভাষা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : নানা ঘটনা, জুলুম-নির্যাতনে একটি বছর কেটে যায়। চলে আসে আরেকটি ২১ ফেব্রুয়ারি। ১৯৫৩ সালে কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় কর্মপরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগও দিবসটি পালনে সম্মত হয়।

এ উদ্দেশে ১৯৫৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে দিবসটি পালনে প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি করে। ভাষা আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে সারা দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ দিবস পালিত হয়।

ভাষা সংগ্রাম কমিটি দিবসটি পালন উপলক্ষে সমাবেশ ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রকাশিত হয় বিশেষ পত্রিকা। আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি কবিতা আকারে লিফলেটে প্রকাশিত হয়।

অধিকাংশ অফিস, ব্যাংক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। রেলওয়ের কর্মচারীরা ধর্মঘট পালন করেন। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষ প্রভাতফেরী ও কালো ব্যাজ ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আসেন। প্রায় লক্ষ লোকের উপস্থিতিতে আরমানিটোলায় বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে দাবি জানানো হয়, ভাষার দাবির পাশাপাশি মাওলানা ভাসানীসহ রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।

পরের বছরটি বাঙলার ইতিহাসে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৫৪ সাল ছিল পূর্ব বঙ্গের রাজনৈতিক ও ভাষা আন্দোলনের ব্যাপক পট পরিবর্তনের বছর। এই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারির রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ছাদে কালো পতাকা উত্তোলনের সময় পুলিশ কিছু ছাত্রকে গ্রেফতার করে।

এ বছর এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট এবং আওয়ামী লীগ বৃহত্তর প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের প্রস্তাবে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ নিন্দা জানায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা ভাষা আন্দোলন দিবসের আগে যুক্তফ্রন্টের অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। ৩ এপ্রিল মাওলানা ভাসানী, এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট পূর্ব-পাকিস্তানের প্রাদেশিক শাসনভার গ্রহণ করেন। বলা যায়, ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব-বাংলার জনগণের যে জাগরণ শুরু হয় এটাই তার ফল।

অন্যদিকে করাচিতে ভাষা সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনের মুসলিম লীগের সংসদীয় কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী সভাপতিত্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাংলা ভাষাকে উর্দু ভাষার সমমর্যাদা দিয়ে রাষ্ট্রভাষা করে হবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের ছয়টি ভাষাকে একই মর্যাদা দেওয়ার দাবি উঠে। ‘বাবা উর্দু’ নামে পরিচিত আবদুল হক এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অনড় থাকেন। প্রতিবাদে তার নেতৃত্বে ২২ এপ্রিল করাচিতে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ মিছিলে অংশ নেয়। সেখানে সিন্ধি ভাষায় প্রকাশিত দৈনিক আল ওয়াহিদ পত্রিকার অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে ২৭ এপ্রিল বাংলা ও অন্যান্য ভাষাকে সমমর্যাদা দেয়ার দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে গণপরিষদে অধিকাংশ আসন জয় করে যুক্তফ্রন্ট। তাদের ক্ষমতায় আসার পর বাংলা একাডেমি গঠন করা হয়। এ প্রতিষ্ঠান বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, গবেষণা এবং মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করবে বলে গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়। ৭ মে মুসলিম লীগের সমর্থনে বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।

১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকারের সহযোগিতায় ২১ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। শহীদ মিনার নতুনভাবে তৈরি করতে সরকার একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে পাকিস্তানের গণপরিষদে কার্যক্রম পাঁচ মিনিট বন্ধ রাখা হয়। সারাদেশব্যাপী পালিত হয় শহীদ দিবস এবং বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। আরমানিটোলায় এক বিশাল সমাবেশের নেতৃত্ব দেন মাওলানা ভাসানী।

অবশেষে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ১৯৫৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। সংবিধানের ২১৪(১) অধ্যায়ে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে লেখা হয়- [২১৪. (১) উর্দু এবং বাংলা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/ এমডি/ ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর