thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ১৮ মে 24, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ১০ জিলকদ  1445

ধর্মগুরু রাম রহিম সিং ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত, সংঘর্ষে নিহত ২৮

২০১৭ আগস্ট ২৫ ১৭:৩৭:০৩ ২০১৭ আগস্ট ২৫ ২১:৪০:০০
ধর্মগুরু রাম রহিম সিং ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত, সংঘর্ষে নিহত ২৮

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : পনের বছর আগে দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণ করার দায়ে দোষী সাব্যস্থ হয়েছেন ভারতের জনপ্রিয় স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিং। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) চণ্ডিগড়ের পাঁচকুলার একটি বিশেষ আদালত এই রায় ঘোষণা করেছে বলে সংবাদ দিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। ধর্ষণের দায়ে পঞ্জাবের ধর্মীয় গোষ্ঠী ডেরা সাচ্চা সওদার প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের কী সাজা হবে, আদালত সেই সিদ্ধান্ত জানাবে সোমবার।

এদিকে, এ রায় ঘোষণার পর রাম রহিম সিংয়ের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে।শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘর্কষে মপক্ষে ২৮ জন নিহত হয়েছেন।

হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে স্থানীয় পুলিশের বরাতে বলা হয়েছে, রাম রহিমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর পঞ্চকূলা শহরে সংঘর্ষে কয়েকজন নিহত হন। তবে নিহত ব্যক্তিদের ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। পঞ্চকূলা বেসামরিক হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের দেহে গুলির আঘাত রয়েছে।

রায় ঘোষণার পর পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্য জুড়ে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে, নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হরিয়ানা জুড়ে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার শহরের আকাশে চক্কর দিচ্ছে এবং রাস্তার দু’ধারে সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে।

নিজেকে একজন আধ্যাত্মিক গুরু হিসাবে দাবি করা রাম রহিম সিংয়ের ভক্ত সংখ্যা প্রায় কয়েক লক্ষ।

পনেরো বছর আগে নিজের আশ্রমেই দু'জন নারী ভক্তকে ধর্ষণ করার অভিযোগ রয়েছে রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে। আদালতের রায় তার বিরুদ্ধে গেলে গুরমিত রাম রহিম সিং-এর লক্ষ লক্ষ ভক্ত আইন অমান্য করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধাতে পারে বলে প্রশাসনের আশঙ্কা ছিল। এর আগেও ওই সম্প্রদায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

গুরমিত রাম রহিমের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নাম তার আশ্রমের নাম অনুসারেই ডেরা সাচ্চা সৌদা। হরিয়ানার সিরসা শহরে ওই হাই-টেক আশ্রমটি অবস্থিত।

পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্য দু'টিতে জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নেমেছে ৫৭ হাজার পুলিশ কর্মী - যাদের মধ্যে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ যেমন আছে, তেমনই রয়েছে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীও।

দুই রাজ্যের মধ্যে দিয়ে চলাচল করে এমন দু'শোরও বেশি ট্রেন পরবর্তী তিনদিনের জন্য বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। সব স্কুল-কলেজ আর প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে।

পাঁচকুলা আর চন্ডীগড়ের স্টেডিয়াম ও স্কুলগুলিকে প্রশাসন নিজেদের দখলে নিয়ে অস্থায়ী কারাগার তৈরি করেছে, যাতে প্রচুর সংখ্যায় ওই 'গুরুজী'র ভক্তদের গ্রেফতার করতে হলে তাদের রাখার ব্যবস্থা করা যায়।

প্রশাসন প্রথমে গুরমিত রাম রহিমের ভক্তদের বিপুল সংখ্যায় জমায়েত নিয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিলেও বৃহস্পতিবার পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টের নির্দেশে রাত থেকে নিরাপত্তার চূড়ান্ত কড়াকড়ি শুরু করে। চণ্ডীগড়-পাঁচকুলা পৌঁছানোর সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়, প্রতিটা গাড়িতে তল্লাশী চলতে থাকে। অন্যদিকে রাতভর পুলিশ কর্মকর্তারা মাইক হাতে রাস্তায় ঘুরে বেরিয়েছেন জমায়েত হওয়া ভক্তদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে।

অনেক রাতে গুরমিত রাম রহিমের একটি ভিডিও বার্তা ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়, যাতে তিনি শান্তি বজায় রাখার এবং ভক্তদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ ভক্তর কাছেই সেই বার্তা পৌঁছায়নি বলে প্রশাসন মনে করছে।

শুক্রবার সকালে ২০-২৫টি গাড়ির বহর নিয়ে নিজের আশ্রম থেকে রওনা হন গুরমিত রাম রহিম সিং। সঙ্গে ছিল তার নিজস্ব কম্যান্ডো বাহিনী।

গুরমিত রাম রহিম হরিয়ানায় গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন। বিজেপির অনেক নেতা-মন্ত্রী-সংসদ সদস্যই ওই ধর্মগুরুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা সামাজিক মাধ্যমে নানা সময়ে প্রকাশ করেছেন। এই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণে লক্ষ লক্ষ ভোট রয়েছে বলে মনে করা হয়।

তবে বিতর্ক কখনই পিছু ছাড়েনি গুরমিত রাম রহিমের।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/আগস্ট ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর