thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

‘গরুর চামড়ার সাথে ছাগলের চামড়া যেন ফ্রি’

২০১৭ সেপ্টেম্বর ০৭ ২২:১৩:৩৮
‘গরুর চামড়ার সাথে ছাগলের চামড়া যেন ফ্রি’

বিধান সরকার, বরিশাল : বরিশালে গরুর চামড়ার বেচাকেনা হলেও ছাগলের চামড়ার কোনো দাম নেই। রাজধানীর ট্যানারি মালিকরা বিগত ৩ বছর ধরে পাওনা টাকাই দিচ্ছেন না স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। তাই পূঁজির সংকটে চাহিদা মতো চামড়া কিনতে পারছেন বরিশালের ব্যবসায়ীরা। সে কারণেই চামড়ার দাম পড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা্। তবে অনেকে সাধ্য অনুযায়ী চামড়া লবণজাত করে রাখছেন ভবিষ্যতে দাম পাওয়ার আশায়।

নগরীর পদ্মাবতী চামড়ার বৃহৎ মোকামে যেয়ে দেখা হয় চরমোনাই ইউনিয়নের রাজারচর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, কোরবানীর আগেই ১০/১২ জন ক্রেতা বসে থাকতেন চামড়া কেনার জন্য। মাদ্রাসা বা এতিমখানায় দেওয়ার কথা জানালে বলতেন, আমাদের কাছে বিক্রি করে টাকা নিয়ে যান। সেই টাকা মাদ্রাসায় দিয়েন। ক্রেতার উপস্থিতি বেশী হওয়াতে চামড়ার দাম ভালোই পাওয়া যেত। কিন্তু এবছর কোন ক্রেতার দেখাই মেলেনি।

নগরীর হাউজিং থেকে আসা মাওলানা নূরুল ইসলাম বলেন ‘ গড়ে সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচশ’ টাকায় চামড়া কিনেছি। এখানের আড়তদাররা বলছেন কেনা দামের চেয়ে চামড়া প্রতি একশ’ টাকা কম। তার ওপর চামড়া আনতে রিক্সাভাড়া । এতে করে চামড়া প্রতি দেড়শ’ টাকা নাই। আর আড়তদাররা ছাগলের চামড়ার কোন দামই বলে না। মাত্র ত্রিশ টাকায় দুটো চামড়া বিক্রি করেছি। সহজ কথায় গরুর চামড়ার সাথে ছাগলের চামড়া যেন ফ্রি বা কোন দাম নেই ।’

প্রতিবছরের মতো এবারো গলাচিপা উপজেলার কালিকাপুর গ্রাম থেকে খলিল সিকদার পদ্মাবতী মোকামে এসেছেন ।তার সঙ্গে সহযোগী শ্রমিকরাও।পদ্মাবতীর চামড়া ব্যবসায়ী শামীম মিয়ার আড়তে তারা চামড়া ছিলা ও লবন দেয়ার কাজ করেন। বিগত বছরগুলোতে কোরবানীর দিন সকাল থেকে তারা চার-পাঁচদিন টানা কাজ করতেন। এতে করে প্রতিদিন হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার ওপরে মজুরী পেতেন। এবছর মালিক টাকার সংকটে চামড়া কিনছেন না বলে মাত্র দেড় দিনও কাজ করতে হয়নি তাদের। দশমিনা উপজেলা থেকে দলবল নিয়ে আসা ফোরকান মৃধা বলেন, তিনি আট বছর ধরে কোরবানীর চামড়া ছিলা ও লবন দেওয়ার কাজ করেন। এবারের মতো এত কম চামড়া আসেনি পদ্মাবতীর আড়তগুলোয়। তাদের আড়তে এবারে ৩টি চামড়ার লট বা গাদিতে লবন মাখিয়েছেন। চামড়া ঠিকমত কিনলে এখানে দশটি লট হতো। এই শ্রমিকের হিসেবে তিন ভাগের একভাগ চামড়া এসেছে মাত্র। আড়তদারদের সমস্যার কারণে এবার তারা বাড়তি পয়সা বা বখশিস চাওয়ার কথা মনেই আনতে পারছেন না।

চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ার নেপথ্যের কারণ হিসেবে জিল্লুর রহমান মাসুম নামের একজন ব্যবসায়ী জানালেন, রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারী স্থানান্তর করে হেময়েতপুরে নেওয়া হয়েছে। সেখানে ২২০টি ট্যানারীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১২ কি ১৪ টি ট্যানারী উৎপাদনে যেতে পেরেছে। চাহিদার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি না পাওয়ার কারণে অন্যরা বসে আছেন। এছাড়াও ভবন নির্মাণে তাদের বাড়তি টাকা খরচ হওয়াতে বরিশাল বা অন্য মোকাম থেকে কেনা চামড়ার দাম ৩ বছর ধরে শোধ করতে পারছেন না। এজন্য তাদের পাওনার ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ ভাগ টাকা পাঠিয়েছেন। তাও ঈদের আগের রাতে বিকাশ করে পাঠিয়েছেন। পূঁজির এই সংকটের কারণে চামড়া মিললেও তারা কিনতে পারছেন না। এখানের শামীম মিয়া নামের আরেক ব্যবসায়ী জানালেন, সরকার চামড়ার দাম ভালোটার স্কয়ারফুট ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু চামড়ার কোয়ালিটি ৪ ধরণের হওয়াতে তাদের গড় হিসেবে পাইকারদের কাছ থেকে কিনতে হয়। এছাড়াও চামড়ার পুরুত্বের ওপর নির্ভর করে দর দাম। উদাহরণ দিয়ে বলেন, যেমন ষাঢ় গরুর চামড়া গাভীর চেয়ে পুরু হয় বলে দামও বেশী থাকে। গড়ে একটি গরু থেকে ২০ থেকে ২২ ফুট চামড়া মেলে। তবে ছাগলের চামড়ায় স্কয়ারফুট ১৫ টাকা দর ধরলেও পয়সার অভাবে গরুর চামড়া কিনতে পারছে না বলে এর দামও নেই।

বরিশাল ট্যানারী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শাহিন জানালেন, টাকার অভাবে তারা চাহিদার চামড়া কিনতে পারছেন না। রাজধানীর ট্যানারী মালিকদের কাছে তার পাওনা ৭০ লাখের বিপরীতে এবছর পেয়েছেন মাত্র ৫ লাখ টাকা। তাই সরকার কোরবানীর চামড়া ক্রয়ের জন্য ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ৩ মাসের জন্য ঋণ দেওয়ার দাবি তোলেন তিনি। শহিদুর রহমান আরো বলেন, দাম কম পাওয়াতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লবন দিয়ে চামড়া রেখে দিচ্ছেন পরবর্তীতে যদি দাম পাওয়া যায় এই আশাতে। তিনি শঙ্কা করে বলেন, লবনজাত চামড়া সর্বোচ্চ ২ মাস রাখা যায়।তারপর বিক্রি করতেই হবে। তখন দাম না থাকলে ফের লোকসান দিয়েই তবে চামড়া বিক্রি করতে হবে ব্যবসায়ীদেরকে।

(দ্য রিপোর্ট/তৌমি/জেডটি/সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর