thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ১৬ জমাদিউল আউয়াল 1446

হেপাটাইটিস বি : দুই বাংলাদেশির উন্নততর ওষুধ উদ্ভাবন

২০১৭ অক্টোবর ২৪ ১৯:৩৭:২৬
হেপাটাইটিস বি : দুই বাংলাদেশির উন্নততর ওষুধ উদ্ভাবন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় বাংলাদেশী দু’জন গবেষক অধিক কার্যকর ও উন্নততর ওষুধ উদ্ভাবন করেছেন। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন পেলে আগামী বছরের শুরুতেই এটি বাজারে আসবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মামুন-আল-মাহতাব এবং জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য নতুন ধরনের এই ওষুধ ‘ন্যাসভ্যাক’উদ্ভাবন করেন। এদেশেরই একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানী এ ওষুধটি প্রস্তুত ও বাজারজাত করবে। বাজারে প্রচলিত হেপাটাইটিস বি’র অন্যান্য ওষুধের তুলনায় এর দাম কম এবং সহজলভ্য হবে।

অধ্যাপক ডা. মামুন-আল-মাহতাব বলেন, ‘ন্যাসভ্যাক কোন যাদুকরী ওষুধ নয়। কিন্তু এই ওষুধের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত শতকরা ৫০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। আর লিভারের প্রদাহে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আরোগ্য লাভের হার ১শ ভাগ।’

ডা. মাহতাব এই ওষুধের কার্যকারিতা যাচাইয়ের প্রধান পরীক্ষক এবং ডা. আকবর এই ওষুধ উদ্ভাবনের জন্য মৌলিক গবেষণা সম্পন্ন করেন।

জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আকবর গত ২৫ বছর ধরে হেপাটাইটিস বি চিকিৎসায় নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছেন। তার গবেষণার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, হেপাটাইটিস বি’র বিরুদ্ধে মানুষের নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিয়ে ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করা।

ডা. আকবর প্রথমে ইঁদুরের ওপর গবেষণা করেন। পরে জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে হেপাটাইটিস বি রোগীদের ওপর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করেন। পরবর্তীতে আরো গবেষণার জন্য ডা. মাহতাব বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার হেপাটাইটিস বি রোগীর ডাটাবেজ তৈরি করেন।

২০০৯ সালে বাংলাদেশে ১৮ জন ক্রনিক হেপাটাটিস বি রোগীর ওপর ন্যাসভ্যাক-এর প্রথম ও দ্বিতীয় দফা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালিত হয়। এতে আশাব্যাঞ্জক ফলাফল পাওয়ায় ২০১১ সালে পুনরায় ১৫১ জন রোগীর ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করা হয়।

তৃতীয় দফায় এই ১৫১ জন ক্রনিক হেপাটাইটিস বি রোগীকে দুই দলে ভাগ করে, তাদেরকে যথাক্রমে ন্যাসভ্যাক ও পেগাইলেটেড ইন্টারফেরনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। ট্রায়ালটিতে সর্বমোট ৭৫ জন রোগীকে মোট ১৫ বার ‘ন্যাসভ্যাক’ আর অন্য ৭৬ জন রোগীকে মোট ৪৮ বার পেগাইলেটেড ইন্টারফেরন প্রয়োগ করা হয়।

ডা. মাহতাব বলেন, ‘এ পরীক্ষায় দেখা যায় ন্যাসভ্যাক পেগাইলেটেড ইন্টারফেরন-এর চেয়ে অধিক কার্যকর।’

তিনি বলেন, ‘এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়া প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে এর চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল দেয়া হয়েছে।’

ডা. মাহতাব বলেন, ‘কিউবার ওষুধ প্রশাসন ইতিমধ্যেই ন্যাসভ্যাক-কে অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাশি বেলারুশ, ইকুয়েডর, নিকারাগুয়া এবং এঙ্গোলাতেও হেপাটাইটিস বি’র চিকিৎসায় ন্যাসভ্যাক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।’

বর্তমানে হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ থেকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ্য করে তোলার মতো কোন ওষুধ নেই। চিকিৎসকরা এ রোগের চিকিৎসার জন্য প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির আশ্রয় নেন। যাতে এসব রোগী ধীরে ধীরে সংক্রমণ থেকে আরোগ্য লাভ করে এবং লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত না হয়।

ডা. মাহতাব বলেন, ‘এমনকি এ ধরনের চিকিৎসাও দীর্ঘ দিন কোন রোগীর ওপর প্রয়োগ করলে তার নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে ন্যাসভ্যাক-এর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে এটি ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে অনেক বেশি কার্যকর।’

তিনি বলেন, ‘ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় আরো প্রমাণিত হয়েছে যে, ন্যাসভ্যাক কেবলমাত্র হেপাটাইটিস বি’র চিকিৎসার জন্যই কার্যকর নয়, যেকোন ক্রনিক ইনফেকশনের জন্যও এটি কার্যকর।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)’র তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ২ কোটি ৪০ লাখ লোক ক্রনিক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত।

একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার উল্লেখ করে ডা. মাহতাব বলেন, দেশে ৫ কোটির বেশি লোক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ৮০ লাখ লোক ক্রনিক হেপাটাইটিস বি দ্বারা সংক্রমিত এবং তাদের লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার হওয়ার আশংকা রয়েছে।

সূত্র : বাসস

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/অক্টোবর ২৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ খবর

স্বাস্থ্য - এর সব খবর