thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ১১ জানুয়ারি 25, ২৮ পৌষ ১৪৩১,  ১১ রজব 1446

৮ বছর ‘স্টিয়ারিং’ না ধরেও বেতন গুনছেন রাবি’র বাসচালক সাত্তার

২০১৭ নভেম্বর ০১ ১০:৩৩:৫১
৮ বছর ‘স্টিয়ারিং’ না ধরেও বেতন গুনছেন রাবি’র বাসচালক সাত্তার

মঈন উদ্দীন, রাবি প্রতিনিধি: কর্মস্থলে প্রায় ৮ বছর ধরে উপস্থিত না থেকেও প্রতিমাসে বেতন ভোগ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বাস চালকের বিরুদ্ধে।

ওই বছরগুলোতে তিনি একদিনের জন্যও বাসের ‘স্টিয়ারিং’ ধরেননি বলে জানা গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় লোক হওয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তিনি এ ‘অপরাধ’ করে যাচ্ছেন।

অভিযুক্ত কর্মচারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দফতরের বাস চালক আব্দুস সাত্তার। এছাড়া তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি। ৮ বছর ধরে বাস না চালিয়েও তিনি বেতনভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাদি নিয়মিত ভোগ করেছেন। এতদিন ধরে বাস না চলিয়েও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।

তার বিরুদ্ধে যখনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে গেছে প্রতিবারই স্থানীয় উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরে ছাড়া পেয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাস চালক সাত্তার ২০০৯ সালের শুরুতে বাস চালানো বন্ধ করেন। মূলত, ২০০৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করার পর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাত্তার দলীয় ক্ষমতা জাহির করে আর বাস চালাননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বাস চালক জানান, গত আট বছর তিনি এক দিনের জন্যও চালকের আসনে বসেননি। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, পরিবহন দফতরের এমন অনেক কর্মচারী আছেন যারা সাত্তারের নাম শুনলেও তাকে চিনেন না। ওই বছরগুলোতে দাফতরিকভাবে কোনো ছুটির আবেদন জমা দেননি তিনি। এমনকি অসুস্থতার কথা জানিয়েও (মেডিকেল লিভ) কোনো কাগজপত্র বা আবেদন করেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবহন দফতরের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, রাজশাহী শহরের প্রায় ২৬টি রুটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলে। প্রতিটি রুটের বাসের জন্য একজন চালক ও একজন হেল্পার নির্ধারিত থাকে। গত আট বছর ধরে সাত্তারের স্থলে অন্য কোন চালক এমনকি বাসের হেল্পারও বাস চালিয়েছেন। বর্তমানে সাত্তারকে বাস চালানোর জন্য ‘বিশ্ববিদ্যালয়-বিজিবি ক্যাম্প’ রুটে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাত্তারের স্থলে গত দুই মাস ধরে বাস চালাচ্ছেন ওই রুটের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হেল্পার কামরুল।

বাসের হেল্পার কামরুল বলেন, ‘পরিবহন দফতর থেকে আমাকে সাত্তারের স্থলে বাস চালাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত দুই মাস ধরে তার স্থলে গাড়ি চালাচ্ছি। এজন্য প্রতি ট্রিপের জন্য সাত্তার আমাকে ২০০ টাকা করে দেন। দুই মাস গাড়ি চালিয়ে তার কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা পেয়েছি।’

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সাত্তার বাস না চালালেও উপস্থিতির খাতায় স্বাক্ষর করেন। কয়েকদিন পর পর এসে তিনি অনুপস্থিতির দিনগুলোতে স্বাক্ষর করে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দফতরের নতুন প্রশাসক ড. এফ এম আলী হায়দার নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি কয়েকদিন আগে সাত্তারকে দাফতরিকভাবে শোকজ করেন।

পরিবহন দফতরের প্রশাসক ড. এফ এম আলী হায়দার বলেন, ‘সে দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি চালায়নি। আমি পরিবহন দফতরের প্রশাসক পদে সম্প্রতি দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখি সে অনেকদিন ধরে অনুপস্থিত। তাকে ডেকে পাঠিয়ে গাড়ি চালানোর জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেই। কর্মচারিদের হাজিরা খাতায় বেশ কয়েকবার অনুপস্থিতও দেখানো হয় তাকে। তারপরও সে অনুপস্থিত থাকলে অফিসিয়ালি শোকজ করা হয়। শোকজ করার পর থেকে সে বাস চালাচ্ছে।’

দফতরের প্রশাসক শোকজ করার পর থেকে সাত্তার বাস চালাচ্ছেন বলে দাবি করলেও অনুসন্ধানে দেখা যায়, সাত্তারের স্থলে এখনো হেল্পার কামরুল গাড়ি চালাচ্ছেন। গত এক সপ্তাহে ধরে ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজিবি ক্যাম্প’ রুটের বাসটি কামরুলকে চালাতে দেখা গেছে।

বাস চালক সাত্তার বলেন, ‘আমার চাকুরির মেয়াদ শেষের দিকে। আগামী বছর অবসরে যাব। এই সময় একটু-আধটু সবাই এমনটা করে। শুধু আমি একা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকেই আছে যারা নিজের পরিবর্তে অন্যকে দিয়ে কাজ করায়।’

‘কিন্তু আপনি তো একদিন-দু’দিন নয়, অনেকদিন ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন না’- এই প্রশ্ন তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।

শোকজ করার পরও কেন গাড়ি চালাচ্ছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাস আমিও চালাচ্ছি আবার কখনো কখনো কামরুলও (হেল্পার) চালাচ্ছে।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘বিষয়টি পরিবহন দফতরের প্রশাসক দেখবেন। প্রশাসকের সাথে কথা বলুন।’

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/নভেম্বর ০১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর