thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউল আউয়াল 1446

রথীশের স্ত্রীকে আগেই 'দোষী ' বানানো কতটা আইনসংগত?

২০১৮ এপ্রিল ০৬ ০০:৩৯:৩৬

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক:

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীর দিক থেকে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে অনায়াসে 'দোষী সাব্যস্ত' করার প্রবণতাও অনেকদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে।
রংপুরের আইনজীবীরথীশ চন্দ্র ভৌমিক নিখোঁজ হবার পর র‍্যাবের তৎপরতা প্রশংসা কুড়ালেও যেভাবে ঘটা করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মি: ভৌমিকের স্ত্রীকে 'দোষী সাব্যস্ত' করা হয়েছে - সেটি কতটা আইনসংগত?

মি. ভৌমিকের লাশ উদ্ধারের পর র‍্যাব-এর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে পরিষ্কারভাবে নিহতের স্ত্রী এবং তাঁর কথিত প্রেমিককে সে খুনের জন্য দায়ী করা হয়।শুধু এ ঘটনাই নয়, বিভিন্ন সময় পুলিশ কিংবা র‍্যাব এ ধরনের কাজ করছে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, চাঞ্চল্যকর অপরাধের ক্ষেত্রে সন্দেহভাজনদের আটক করার করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরেই পুলিশ কিংবা র‍্যাব বেশ ঘটা করে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

বাংলাদেশে অতীতে হরহামেশাই বিভিন্ন ব্যক্তিকে সন্দেহের বশে আটকের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বুকে - চোর, ডাকাত, জঙ্গি ইত্যাদি শব্দ লিখে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করতো।

কিন্তু হাইকোর্টের একটি রায়ের পর সে চর্চা অনেকটাই বন্ধ হয়েছে। সে রায়টি দিয়েছিলেন তখনকার হাইকোর্টের বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, যিনি পরবর্তীতে আপীল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে অবসর নিয়েছেন।
কিন্তু এখনও বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ঘটনায় র‍্যাব, পুলিশ কিংবা অন্য কোন গোয়েন্দা সংস্থা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অবলীলায় কাউকে দোষী সাব্যস্ত করছে।
বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে এ নিয়ে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
রংপুরের আইনজীবী রথীশ চন্দ্র হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতি বিচারপতি মানিক বিবিসিকে বলেন, "এটা শুধু বেআইনি নয়, এটা আইনের শাসনেরও পরিপন্থী বটে। যেটা ম্যাক্সিমাম তারা বলতে পারে যে এ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ সন্দেহের জালে রয়েছে, বা সন্দেহের কারণে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।"
মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে কখনো কখনো বিচারকের মনও প্রভাবিত হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বিবিসিকে বলেন, "আইনের দৃষ্টিতে এটার মোটেও গ্রহণযোগ্যতা নেই। আইনের কোথাও এ রকম বিধান নাই যে ওনারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ধরনের গোপনীয় তথ্যগুলো ডিসক্লোজ করতে পারেন ।"
মি: বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের রায়ে এ ধরনের বিষয়কে 'মিডিয়া ট্রায়াল' হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁর মতে, এ মিডিয়া ট্রায়াল শুধু যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করছে তা নয়, গণমাধ্যমও নিজের প্রয়োজনেও এ ধরনের কাজ করে।
আইনজীবী মি: বড়ুয়া বলেন, "বিচারের আগেই সিদ্ধান্ত দেয়া হচ্ছে - অমুক ব্যক্তি চোর, অমুক ব্যক্তি ডাকাত ইত্যাদি। ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরিবর্তে মিডিয়া যদি সিদ্ধান্ত দিতে শুরু করে, তাহলে সেটা মিডিয়া ট্রায়ালে পরিণত হচ্ছে।"
তিনি বলেন, তদন্তের গোপনীয়তা রক্ষা না করলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ যে কোন ধরনের চাঞ্চল্যকর ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের দিক থেকে বরাবরই জানার আগ্রহ থাকে - আসলে কী ঘটেছে? নিরাপত্তা বাহিনীগুলো কী করছে? সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার সম্ভব হয়েছে কিনা? ইত্যাদি প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মনে ঘুরপাক খেতে থাকে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, জনগণের জানার অধিকার যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি তদন্তের স্বার্থও রক্ষা করতে হবে। "এ দুটোর মাঝে একটা ভারসাম্য আনতে হবে"
পুলিশ বা র‍্যাবের পক্ষ থেকে সন্দেহভাজন ধরে মিডিয়ার সামনে হাজির করার বহু ঘটনা রয়েছে।
পুলিশ বা র‍্যাবের পক্ষ থেকে সন্দেহভাজন ধরে মিডিয়ার সামনে হাজির করার বহু ঘটনা রয়েছে
মি: হুদা বলেন, " আমি যদি অনেক কিছু আগেই বলে দিই যেগুলো আদালতে বলার কথা, তাহলে এ কেসগুলো চালাতে প্রসিকিউশনের অসুবিধা হবে।"
প্রাথমিক তদন্তের পরেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনের করে তথ্য উপস্থাপন করা চূড়ান্ত বিচারে কোন সহায়তা করছে বলে তিনি মনে করেন না।
কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এ ধরনের কাজ কেন করে? এ পেছনে তাদের কী ধরনের মনোভাব কাজ করে?
সাবেক আইজিপি মি: হুদার বর্ণনায়, "এ সমস্ত বাহিনীতে যারা কাজ করেন তারা অ্যাচিভমেন্ট ওরিয়েন্টেড হন। তারা যে কাজ করছেন সেটা দেখাতে চান। আমাদের সমাজে তাদের ওপর মানুষ প্রত্যাশা করে। নিরাপত্তা বাহিনীকে যারা নিয়ন্ত্রণ করছেন তারাও চায়। অনেক সময় রাজনৈতিক ফায়দাও দেয়।"

দ্য রিপোর্ট/তৌমি/৬ এপ্রিল,২০১৮

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর