thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউল আউয়াল 1446

পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করার নির্দেশ হাই কোর্টের

২০১৮ মে ২১ ১৯:৩৮:০৭
পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করার নির্দেশ হাই কোর্টের

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: পাস্তুরিত দুধ নিরাপদ কি না- তা বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে হাই কোর্ট।

খাদ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিব ও বিএসটিআই-এর মহাপরিচালককে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছে আদালত।

জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেয়।

বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ নিয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) একটি গবেষণা প্রতিবেদন বুধবার দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।সেখানে বলা হয় বাংলাদেশে পাস্তুরিত দুধের ৭৫ শতাংশে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

প্রকাশিত এসব প্রতিবেদন যুক্ত করে নিরাপদ পাস্তুরিত দুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।

রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ, ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন হানিফ (ফরহাদ) ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান।

পরে তানভীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠনের পর বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে এক মাসের মধ্যে খাদ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিব ও বিএসটিআইটি মহাপরিচালককে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া আইসিডিডিআর,বির প্রকাশিত প্রতিবেদনও আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

নিরাপদ পাস্তুরিত দুধের নিশ্চয়তা দিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করেছে হাই কোর্ট।

খাদ্য সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিএসটিআই মহাপরিচালক, আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ও পুলিশ প্রধানকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে ক্রমবৃদ্ধি এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের উন্নতি করতে বলা হয়েছে সংবিধানে। একইভাবে জনগণের পুষ্টি নিশ্চিত করে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব।

কিন্তু আইসিডিডিআর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাজারে থাকা ৭৫ শতাংশ পাস্তুরিত দুধে ভেজাল ধরা পড়ছে। জনস্বাস্থ্যের এটা মারাত্মক ঝুঁকি। তার মানে হচ্ছে জনস্বাস্থ্য নিরাপদ করতে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা রয়েছে এবং একই সঙ্গে তা সংবিধানের ১৫(ক), ১৮(১) ও ৩২ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।

সংবিধানের অনুচ্ছেদে ১৮ (১) এ বলা হয়েছে, জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলে গণ্য করবে এবং বিশেষতঃ আরোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ছাড়া মদ ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

২৭ জুন বিষয়টি পরবর্তী আদেশের জন্য রাখা হয়েছে বলে জানান তানভীর আহমেদ।

আইসিডিডিআরবি জানিয়েছে, কেয়ার বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় ‘স্ট্রেনদেনিং দ্য ডেইরি ভ্যালু চেইন (এসডিভিসি)’ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের বগুড়া, গাইবান্ধা, নীলফামারী, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, রংপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলার মোট ১৮টি উপজেলায় তাদের এই গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণার ফলাফল ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ফুড মাইক্রোবায়োলজিতেও প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় দুগ্ধ শিল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে দুধের অণুজীববিজ্ঞানগত মান যাচাই করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের দুধ উৎপাদকারী, হিমাগার ও স্থানীয় রেস্তোরাঁ থেকে কাঁচা দুধের ৪৩৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া ঢাকা ও বগুড়ার বিভিন্ন দোকান থেকে বাণিজ্যিকভাবে প্রক্রিয়াজাত দুধের ৯৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক দুধ উৎপাদনকারী পর্যায়ে ৭২ শতাংশে কলিফর্ম এবং ৫৭ শতাংশ নমুনায় ফিক্যাল কোলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। নমুনাগুলোর ১১ শতাংশ উচ্চসংখ্যায় ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া দূষিত।

ফিক্যাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং দুধে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির ফলে বোঝা যায় যে, দুধ জীবাণু বা রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা দূষিত, যা উষ্ণ রক্তের প্রাণীর মলে থাকতে পারে বা দুধ দোয়ানোর সময় দুধে মিশতে পারে।

পরীক্ষিত পাস্তুরিত দুধের নমুনার প্রায় ৭৭ শতাংশে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা উচ্চমাত্রার, যা বিএসটিআইয়ের মানদণ্ডকে ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া ৩৭ শতাংশ নমুনায় কলিফর্ম এবং ১৫ শতাংশ নমুনায় মলবাহিত কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।

দুধ পানের জন্য নিরাপদ করে তোলার জন্য একে পাস্তুরিত করা হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় মানদণ্ডে পাস্তুরিত দুধে এ ধরনের মলবাহিত কোলিফর্মের উপস্থিতি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়,’ বলা হয় গবেষণা প্রতিবেদনে।

এই গবেষণার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক আইসিডিডিআর,বির ফুড মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরির প্রধান ড. মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি দেখে এটি স্পষ্ট বোঝা যায় যে, দুধের মূল গুণ অর্থাৎ এর পুষ্টিগত গুণাগুণ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/মে ২১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর