thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫ পৌষ ১৪৩১,  ১৭ জমাদিউস সানি 1446

থাইরয়েড সমস্যার কারণ, লক্ষন ও চিকিৎসা

২০১৮ মে ২৪ ২০:৪৩:৩০
থাইরয়েড সমস্যার কারণ, লক্ষন ও চিকিৎসা

ডা. শাহজাদা সেলিম: বিশ্ব থাইরয়েড দিবস ২৫ মে। বাংলাদেশে থাইরয়েড সমস্যার সকল ধরণকে এক সাথে হিসেব করলে তা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি হবে। ভারতের অবস্থা অনেকটা এরকমই। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে থাকে। দিবসটি উপলক্ষে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম এর পাঠকদের জন্য থাইরয়েড সমস্যার কারণ ও করণীয় সম্পর্কে লিখেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শাহজাদা সেলিম।

থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে সাধারণত দু‘ধরনের সমস্যা দেখা যায়- গঠনগত ও কার্যগত। গঠনগত সমস্যায় থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যায়, যেটাকে গয়টার বলা হয়। কার্যগত সমস্যা দু’রকমের হয়- হাইপারথায়রয়ডিজম ও হাইপোথায়রয়ডিজম। হাইপারথায়রয়ডিজমে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বেশি মাত্রায় সক্রিয় হয়ে পড়ে, আর হাইপোথায়রয়ডিজমে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড কাজ করে না।

কারণ

* হাইপোথায়রয়ডিজম মূলত তিনটি কারণে দেখা যায়। সদ্যোজাত শিশুদের মধ্যে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড তৈরী না হলে, কনজেনিটাল হাইপোথায়রয়ডিজম দেখা যায়। এছাড়া অটোইমিউন হাইপোথায়রয়ডিজম দেখা যায়। থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি সক্রিয় হলে, থাইরয়েড গ্ল্যান্ড খারাপ হয়ে যায়। তখন থাইরয়েড গ্ল্যান্ড কাজ করে না। চিকিৎসাজনিত কারণেও এই অসুখ হতে পারে। অপারেশনের কারণে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বাদ দিতে হলে বা ‘রে’ দেওয়ার কারণে থাইরয়েড নষ্ট হয়ে গেলে এই সমস্যা হতে পারে।

* অ্যান্টিবডি অতিরিক্ত মাত্রায় থাইরয়েড গ্ল্যান্ডকে স্টিমুলেট করলে হাইপারথায়রয়ডিজমের সমস্যা দেখা যায়। চূড়ান্ত পর্যায়ের পর ওষূধের ডোজ বেশি হলে, তার থেকে হাইপারথায়রয়ডিজম হতে পারে। থায়রয়ডাইটিসে রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। ইনফেকশন হলে তাৎক্ষণিকভাবে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ভেঙে হরমোন বেরোতে শুরু করে, ফলে রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়।

* যে সব অঞ্চলে আয়োডিনের অভাব রয়েছে, সেখানে আয়োডিনের অভাবজনিত কারণে হাইপোথায়রয়ডিজম দেখা যায়।

লক্ষণ (হাইপোথায়রয়ডিজম)

প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ, মহিলাদের মধ্যে ৩.৯ শতাংশ থেকে ৯.৪ শতাংশ হারে হাইপোথায়রয়েডিজম থাকতে পারে।

হাইপোথায়রয়ডিজমে যে লক্ষণগুলো দেখা যায়, সেগুলো হল:

* ভাল না লাগা, সঙ্গে লেথার্জিভাব

* ত্বক খসখসে হয়ে যায়।

* পা অল্প ফুলে যায়

* খিদে ভাব কমে যায়

* চুল পড়তে শুরু করে

* ওজন অল্প বেড়ে যায়। ৫-৬ কিলো ওজন বাড়তে পারে

* স্মৃতিশক্তি কমে যায়

* খিটখিটে ভাব

* কনস্টিপেশনের সমস্যা হয়

* ব্লাড প্রেশার বাড়তে পারে

* বন্ধ্যাত্বর সমস্যা হতে পারে

* প্রেগনেন্সির সময় অ্যাবর্শন হতে পারে

* কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়ডিজমে শিশুর ব্রেনের বিকাশ হয় না

* শীতশীত ভাব দেখা যায়

* পিরিয়ডসে সমস্যা হতে পারে।

লক্ষণ (হাইপারথায়রয়ডিজম)

প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের প্রায় ২ শতাংশ এবং পুরুষদের প্রায় ০.২ শতাংশ এ রোগে ভোগে। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি।

হাইপারথায়রয়ডিজমে যে লক্ষণগুলো দেখা যায়, সেগুলো হল:

* খিদে বেড়ে গেলেও ওজন কমতে থাকে

* প্রচণ্ড গরম লাগে

* বুক ধড়ফড় করে

* মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়ে

* পিরিয়ডসের সমস্যা হয়

* ত্বক কালো হয়ে যায়

* হার্টের সমস্যা হতে পারে

* ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়

* হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়। বেশি বয়সে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে

* চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসে

* বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

চিকিৎসা

* থায়রয়েডের সমস্যা নির্ধারণের জন্যে ব্লাড টেস্ট করা হয়।

*হাইপোথায়রয়ডিজমের চিকিৎসা ওষুধের মাধ্যমে করা হয়। হাইপারথায়রয়ডিজমের চিকিৎসায় ওষুধ দেওয়া হয়। ওষুধে কাজ না করলে, তখন সার্জারি বা রেডিওঅ্যাক্টিভ আয়োডিন থেরাপির কথা ভাবা হয়।

* গয়টারের সমস্যা হলে ফোলা অংশ ম্যালিগনেন্ট কি না তা নির্ণয় করা হয়। FNAC টেস্ট করা হয়। ম্যালিগনেন্ট নির্ধারিত হলে এবং শুরুর দিকে ধরা পড়লে রেডিওঅ্যাক্টিভআয়োডিন পদ্ধতির মাধ্যমে থাইরয়েড ক্যানসার নিরাময় সম্ভব।

* আয়োডিনের অভাবজনিত কারণে থায়রয়েডের সমস্যা হলে আয়োডাইজড সল্ট খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

ইউরিনারিট্র্যাক্টকীকাজকরে

আমাদের শরীরে কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ও জল শুষে নিয়ে ইউরিন তৈরি করে। প্রতিদিন এই ইউরিন আমাদের শরীর থেকে বেরিয়ে গিয়ে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কিডনি থেকে বেরিয়ে ইউরিন এক সরু টিউবের মধ্যে দিয়ে গিয়ে ইউরিনারি ব্লাডারে জমা হয়। বাচ্চার বয়েসের উপর নির্ভর করে কতটা ইউরিন ব্লাডারে জমা থাকবে। এরপর ব্লাডার থেকে জমা ইউরিন ইউরেথ্রার মধ্যে দিয়ে গিয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

কেনইনফেকশনহয়

ইউরিনারি ট্র্যাক্টে এমনিতে কোনও ব্যাক্টেরিয়া থাকে না। কোনও কারণে ব্যাক্টেরিয়া ব্লাডারে ঢুকে গেলে ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ইনফেকশন হতে পারে। ব্লাডার ফুলে যায়, পেটের নিম্নাংশে যন্ত্রণা হতে পারে। যদি ব্যাক্টেরিয়া কোনও ভাবে কিডনি পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তা হলে কিডনিতেও ইনফেকশন হতে পারে। সাধারণত অ্যানাস বা ভ্যাজাইনার আশপাশে এই ধরণের ব্যাক্টেরিয়া পাওয়া যায়। কোনও কারণবশত যদি ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ঠিকমতো কাজ না করতে পারে তা হলে ব্যাক্টেরিয়া ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ঢুকে যায়। ফলে ইনফেকশন হতে পারে।

* কিছু বাচ্চার মধ্যে জন্ম থেকেই ভেসিকোইউরেটেরাল রিফ্লাক্স বলে একধরনের সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যায় ইউরিন ব্লাডার থেকে বেরিয়ে ইউরেটার হয়ে আবার কিডনিতে পৌঁছে যায়। ফলে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকটেড হয়ে পড়ে।

* মায়েলোমেনিঙ্গোসিল, হাইড্রোসেফালসের মতো ব্রেন বা নার্ভাস সিস্টেমের অসুখ থাকলে ব্লাডার পুরোপুরি খালি হতে পারে না। স্পাইনাল কর্ডে চোট লাগলেও এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। এর থেকে ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ইনফেকশন হয়।

* জন্ম থেকেই যদি ইউরিনারি ট্র্যাক্টের গঠনে কোনও ত্রুটি থাকে, তা হলে ব্যাক্টেরিয়া সহজেই ইউরিনারি ট্র্যাক্টকে ইনফেক্টেড করে দিতে পারে।

* বাচ্চার যদি বাথরুম যেতে অনীহা থাকে, বাথরুম যাওয়ার পর যদি কেউ নিজেকে ঠিকমতো পরিস্কার না করে, তা হলে ইনফেকশন হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

* ঘন ঘন বাবল বাথ নিলে ইনফেকশন হতে পারে। খুব বেশি টাইট জামাকাপড় পরলেও এই ধরনের সমস্যা দেখা যেতে পারে।

উপসর্গ

ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ইনফেকশন হলে ব্লাডার ইউরেথ্রা, ইউরেটার ও কিডনিতে অস্বস্তি (ইরিটেশন) হয়। ঠিক যেমন ঠাণ্ডা লাগার পর নাক ও গলায় ইরিটেশন হয়। যেহেতু বাচ্চারা সব সময় বলে বোঝাতে পারে না, তাই বাচ্চার ব্যবহারে যদি হঠাৎ পরিবর্তন দেখেন, তা হলে বুঝবেন যে বাচ্চার শরীরে কোনও অস্বস্তি হয়ে থাকতে পারে। ইউটিআই হলে সাধারণত কিছু বিশেষ উপসর্গ দেখা যায়:

* জ্বর হতে পারে, বাচ্চা অকারণে বিরক্তি প্রকাশ করে, খেতে চায় না, বমি করে।

* ইউরিনে দুর্গন্ধ হতে পারে।

* বারবার বাথরুম যেতে হয়। বাথরুম করার সময় ব্যথা হতে পারে বা জ্বালা করতে পারে।

* তলপেটে বা পিঠের নিম্নাংশে ব্যথা হয়

* অনেক সময় ইউরিনে রক্ত বেরতে পারে।

* টয়লেট ট্রেনিং থাকলেও বাচ্চা ইউরিন কন্ট্রোল করতে পারে না, অনেক সময়ই বিছানা ভিজিয়ে ফেলে।

যদি কোনভাবে কিডনিতে ইনফেকশন ছড়িয়ে যায় তাহলে,

- বাচ্চার কাঁপুনি হতে পারে।

- খুব বেশি জ্বর আসে।

- ত্বক লাল হয়ে যায়।

- মাথা ঘোরে, বমি হয়,

- পাজরে ব্যথা হতে পারে।

প্রিভেনশন

* বাচ্চাকে বেশি বাবল বাথ করতে দেবেন না। ঢিলেঢালা অন্তর্বাস ও জামাকাপড় পরা ভাল।

* বাচ্চা যাতে প্রচুর পরিমাণ পানি খায়, সে দিকে নজর দেবেন।

* বাচ্চাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার গুরুত্ব বোঝান। বাথরুম করার পর জেনিটাল পরিষ্কার করা জরুরি।

* বাচ্চাকে দিনে একাধিকবার বাথরুম যাওয়া শেখান।

রোগনির্ণয়

* ইউরিনের স্যাম্পল টেস্ট করা হয়।

* কেন ইনফেকশন হয়েছে বা কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না দেখার জন্যে কিডনির আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়। এ ছাড়া ইউরিনেশনের সময় বিশেষ পদ্ধতি দ্বারা এক্স-রে করা হয়।

* বাচ্চার মেডিকেল হিষ্ট্রি নেওয়া হয়। ডাক্তাররা জানতে চান বাচ্চার বয়স কত, আগে কখনও ইনফেকশন হয়েছে কি না, ইনফেকশন কতটা জটিল, বাচ্চার আর কোনও অসুখ আছে কি না, স্পাইনাল কর্ড বা ইউরিনারি ট্র্যাক্টে কোনও সমস্যা আছে কি না। এর উপর নির্ভর করে ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নেন যে চিকিৎসার ধরন ঠিক কীরকম হবে।

চিকিৎসা

* প্রথমেই বাচ্চাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় যাতে ইনফেকশন কিডনি পর্যন্ত পৌঁছতে না পারে। একদম ছোট বাচ্চাদের হসপিটালে ভর্তি করে ইনজেকশনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। বড় বাচ্চাদের অবশ্য ওষুধ খেতে দেওয়া হয়। ইনফেকশন কতটা জটিল তার ওপর নির্ভর করে অ্যান্টিবায়োটিক কতদিন খেতে হবে।

* ইউটিআই হলে বাচ্চাকে প্রচুর পানীয় খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা।

লেখক

ডাঃ শাহজাদা সেলিম

সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ

কমফোর্টডক্টরচেম্বার

১৬৫-১৬৬, গ্রীনরোড, ঢাকা

ফোন: ৮১২৪৯৯০, ৮১২৯৬৬৭ এক্স- ১১৯

মোবা: ০১৭৩১৯৫৬০৩৩, ০১৫৫২৪৬৮৩৭৭, ০১৯১৯০০০০২২

Email: selimshahjada@gmail.com

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ খবর

স্বাস্থ্য - এর সব খবর