thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫ পৌষ ১৪৩১,  ১৭ জমাদিউস সানি 1446

রমজান মাসে টুথপেস্ট ও টুথব্রাশ ব্যবহার

২০১৮ জুন ১০ ১০:৩৫:৫৪
রমজান মাসে টুথপেস্ট ও টুথব্রাশ ব্যবহার

ডা. শেখ আনোয়ার উল্লাহ খন্দকার: রমজান মাসের রোজাদার মুসলিমদের একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে রোজা রেখে টুথপেস্ট ব্যবহার করা যাবে কি না? সাধারণত আলেমগন বলেন রোজামুখে পেস্ট ব্যবহার করলে রোজা মাখরু হয়ে যাবে কারণ পেস্টের একটা বিশেষ স্বাদ থাকে। আবার অনেকেই একটা ভুল ধারনা পোশন করেন যে পেস্ট-ব্রাশ এর থেকেও মেসওয়াক লাঠিই দাঁত ও মাড়ির জন্য বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। প্রথমত রোজা মুখে পেস্ট ব্যবহার করতে হবে না। যদি একটা সময় তালিকা করে নিতে পারেন।

মাগরিবের আজান বা ইফতারের শুরুর সময় থেকে শুরু করে পরের দিন ফজরের আজান বা সেহরীর শেষ সময়সীমা পর্যন্ত সময় আছে আপনার হাতে। যদি অন্যান্য দিনের দাঁত মাজার সময়তালিকার সাথে তুলনা করি তাহলে সকালের দাঁত মাজার পরিবর্তে ইফতারের আগে/পরে দাঁত ব্রাশ করা যেতে পারে, আগে করতে পারলে বেশী ভাল হয়। আবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তো দাঁত মাজার কোনও বাঁধাই নেই। সেহরীর শেষে তৃতীয়বার দাঁত মাজাটাও জরুরি, এতে দিনে তিনবার দাঁত মাজার আদর্শ নিয়ম তালিকাও পূর্ণ করতে পারবেন, এতে রোজারাখা অবস্থায় পরদিনও মুখ অনেকটাই ফ্রেশ থাকবে।

অনেকের আবার খাবার সাথে সাথে দাঁত মাজতে গেলে বমিবমি ভাব লাগে, আমারও এক সময় হত, সেক্ষেত্রে সেহরী খাওয়া যদি ৫-১০ মিনিট থাকতে শেষ করতে পারেন তাহলে খাওয়ার পর কিছু সময় অপেক্ষা করে (অবশ্য আজানের আগে দিয়েই) দাঁত মেজে নিতে পারবেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ আর রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষা করার কথাও বারবার বলা হয়, সুতরাং রমজান মাসেও টুথপেস্ট ও টুথব্রাশ দিয়ে ভালভাবে দাঁত মাজার বিকল্প নেই।

দাঁতের যত্নে আর পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য বর্তমানে অনেক প্রকারের প্রসাধনী আর প্রযুক্তি সহজলভ্য।

দন্ত চিকিৎসা এখন মোটামুটি এগিয়ে গেছে। নিজ গৃহে নিজে নিজে নিয়মিত দাঁতের যত্ন নেওয়ার জন্য আর ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন প্রসাধনী এখন পাওয়া যায়। যার মধ্যে সহজলভ্য থেকে শুরু করে ব্যয়বহুল আর জটিল প্রকারের বিভিন্ন প্রসাধনী রয়েছে।

এছাড়া দাঁত পরিষ্কার করার জন্য যে সকল সামগ্রী সচারচর ব্যবহৃত হয় যেমন টুথব্রাশ-টুথপেস্ট, টুথপাউডার, নিমের মাজন, কালো মাজন, মেসওয়াক আর নিমের ডাল এর মধ্যে টুথব্রাশ আর টুথপেস্টই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। অন্যান্য সামগ্রী সমুহের চাইতে এই দুটি সামগ্রী বিশেষ উপযোগী যেখানে অন্যগুলোর উপযোগিতার পাশাপাশি কিছু ঋণাত্মক দিকও আছে যা টুথব্রাশ ও টুথপেস্টের ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে।

পেস্ট-ব্রাশই শ্রেষ্ঠ সেটা বুঝতে গেলে পেস্ট ও ব্রাশ আর দুইটার কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে কিছু কথা জানার প্রয়োজন। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে বর্তমানকালের ব্যস্ততার যুগে সাধারণত ডেন্টিস্টগন প্রায়ই রোগীর আধিক্যেতার কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলা সব রোগীর কাছে বর্ণনা করতে সময় পান না। ডেন্টিস্ট্রি বা দন্তচিকিৎসা বিজ্ঞানে Dentifrice (ডেন্টিফ্রিস) বলে একটি শব্দ আছে, এটির দ্বারা এক কথায় টুথপেস্ট, জেল, টুথপাউডার ও মাউথ ওয়াশ-এর মত মুখ পরিষ্কার রাখার সামগ্রী গুলোকে বুঝানো হয়। টুথপেস্টের প্রধানত চারটি উপাদান থাকে ১. abrasives বা খশখশে উপাদান যা অনেকটা শিরিশ কাগজের মত কাজ করে ও দাঁতের ময়লা উঠাতে সাহায্য করে। ২. surfactants, এই উপাদানের কারণে টুথপেস্টের আচরন সাবান বা ডিটারজেন্টের মত হয়, অর্থাৎ পানি মিশিয়ে মাজলে ফেনীয়ে উঠে। ৩. humectant, এই উপাদানটি ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে। ৪. binder, এটি টুথপেস্টের উপাদান গুলোকে ধারন করে আর জড়িয়ে রাখে। ৫. flavors, শিশুদের মুখে যাতে পেস্টের টেস্ট বেশী ঝাঁঝালো আর অসহ্য না লাগে সেজন্য কিছু মিষ্টি, ফলের, চকোলেটের বা অন্যান্য মুখরোচক ফ্লেভার যোগ করা হয়। এছাড়াও কিছু কিছু বিশেষ বিশেষ টুথপেস্ট আছে যেগুলাতে দীর্ঘ সময় মুখ সতেজ রাখা, দাঁতের ক্ষয়রোধ, ক্ষয় হয়ে যাওয়া দাঁতের পুনরায় সুস্থতা লাভ, দাঁতের শিরশিরানি নিরাময়, দাঁতে অতিরিক্ত ময়লা জমা হওয়া প্রতিরোধ করা ও দাঁত উজ্জ্বল করা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে বিশেষ বিশেষ ঔষধি উপাদান মিশানো হয়। প্রথমত, টুথপেস্টের/জেলের মত নরম ক্রিম বা জেলের মত মাধ্যম না থাকায় ও শুকনো গুঁড়ার রূপে থাকায় পাউডার জাতীয় দাঁতের মাজন যেমন টুথপাউডার বা নিমের মাজনের "abrasive" বৈশিষ্ট্য টি একটু বেশী কার্যকর থাকে, যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে অসাবধানতা বশত পাউডার দিয়ে বেশি ঘষে দাঁত মাজলে দাঁত ক্ষয় হতে শুরু করবে।

তাই এ ক্ষেত্রে পেস্টই বেশী উপযুক্ত, আর পাউডার জাতীয় মাজন ব্যবহারে এক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, মেসওয়াক বা নিমের ডালের মত মাজন উপকরণগুলোর ভেষজগুণ থাকলেও সেগুলো ব্রাশের মত কার্যকর ভাবে মুখ পরিষ্কার করতে পারবে না। ব্রাশের মত সুক্ষ্ম ও নমনীয় না হওয়ায় নিমের ডাল বা মেসওয়াক দিয়ে দাঁতের ফাঁক ফোকরে পরিষ্কার করা যায় না। বরং পাউডারের মতই মেসওয়াক ও নিম ডালের উপর্যুপরি ব্যবহার ও প্রয়োজনের অধিক জ্বোর লাগিয়ে দাঁত মাজলে হিতে বিপরীতই হবে।

দীর্ঘদিন এমন করলে দাঁতের গোড়া ও মাড়ি উলটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। অপর পক্ষে ব্রাশের সাহায্যে টুথপেস্ট ও ফেনা অতি সহজেই দাঁতের ফাঁকে ঢুকে পরিস্কার করতে পারে। আবার মাউথওয়াশ, ফ্লসিং আর টুথপিক হলো পেস্ট ও ব্রাশের পরিপূরক মাত্র। মাউথওয়াশ ব্রাশের মত সলিড ময়লা সরাতে পারবে না, আর ফ্লসিং বা টুথপিক এর মাধ্যমে টুথপেস্টের রোগ প্রতিরোধী ও দীর্ঘ সময় ধরে ময়লা প্রতিহত করার সুবিধা পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ ফ্লস, টুথপিক আর মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হবে ব্রাশ ও পেস্টের পাশাপাশি (বিকল্প হিসেবে নয়)। অর্থাৎ মেসওয়াক বা টুথপাউডার ব্যবহার করলেও পেস্ট ও ব্রাশের স্থায়ী বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা মটেও উচিৎ নয়। যাদের মেসওয়াক আর নিম পছন্দ তারা চাইলে মেসওয়াক আর নিমের নির্যাশ যুক্ত ভেষজ টুথপেস্টও ব্যবহার করতে পারেন। অবশ্য এর মানে এই নয় যে মেসওয়াক, নিমের ডাল, টুথপাউডার, নিমের মাজন বা কালো মাজন একেবারেই বর্জন করতে হবে। এর প্রত্যেটার বিশেষ বিশেষ গুন আছে যার কারণে মাঝেমাঝে হালকা পরিমাণ ব্যবহার করলে উপকারিতা অবশ্যই পাওয়া যাবে। শুধু অতিরিক্ত কোনও কিছুই ব্যবহার করা উচিৎ নয়। আর টুথপেস্ট ও টুথব্রাশের বিকল্প হিসেবে নয় বরং পরিপুরক হিসেবে এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।

লেখক

ডা. শেখ আনোয়ার উল্লাহ খন্দকার, বি.ডি.এস. পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জুন ১০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ খবর

স্বাস্থ্য - এর সব খবর