thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১,  ২৬ জমাদিউস সানি 1446

ফ্রান্স : বেলজিয়াম

দুই পড়শির অগ্নিপরীক্ষা

২০১৮ জুলাই ১০ ০৯:৫১:৩৭
দুই পড়শির অগ্নিপরীক্ষা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ফ্রান্স-বেলজিয়াম কখনও যুদ্ধে জড়ায়নি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুই দেশের সম্পর্ক বরং সব সময়ই বন্ধুত্বপূর্ণ। তবু পৃথিবীর ইতিহাসের নাড়িয়ে দেওয়া যুদ্ধের প্রসঙ্গ এলে একসঙ্গে চলে আসে প্রতিবেশী এ দুই দেশের নাম। ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তার সাফল্যে ভরা সামরিক জীবনে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছিলেন যেখানে, সেই ওয়াটারলুর অবস্থান এখনকার বেলজিয়ামে। কেবল ইতিহাসে নয়, ফ্রান্স-বেলজিয়াম জড়িয়ে আছে বর্তমানেও। দুই ভাষায় ভাগ হয়ে যাওয়া বেলজিয়ামে প্রায় অর্ধেক অংশের মানুষই ফ্রেঞ্চ-ভাষী। খুব চেনাজানা আর খুব ঘনিষ্ঠ এ দুই পড়শি দেশই আজ সেন্ট পিটার্সবার্গে নামছে ফুটবলযুদ্ধে। যুদ্ধটা বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠার। বেলজিয়ামের জন্য প্রথম, ফ্রান্সের জন্য দ্বিতীয়। শিরোপামঞ্চে ওঠার আগের ধাপে কে হাসবে শেষ হাসি- এডেন হ্যাজার্ডদের বেলজিয়াম, নাকি হুগো লরিসের ফ্রান্স? উত্তর জানা যাবে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় শুরু ম্যাচের শেষে।

এ যাবৎ রাশিয়া বিশ্বকাপে দু'দলের যা পারফরম্যান্স, তাতে গতিময় এক ম্যাচের আশা করতে পারে ফুটবল বিশ্ব। বিশ্নেষকদের চোখে চলতি বিশ্বআসরে সবচেয়ে গতিশীল, কুশলী ও রোমাঞ্চকর ম্যাচ খেলা সেরা দুটি দলই হচ্ছে ফ্রান্স আর বেলজিয়াম। গড় ২৬ বছর বয়সী দল নিয়ে নামা ফ্রান্স সেমিতে ওঠার পথে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, পেরু, আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়েকে। ড্র করেছে গ্রুপ পর্বের ডেনমার্কের সঙ্গে। উরুগুইয়ানদের বিপক্ষে খেলেছে আধিপত্য দেখিয়ে, দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনাকে হারানোর ম্যাচে দেখিয়েছে উত্তেজনাপূর্ণ ফুটবলের প্রদর্শনী। অন্যদিকে বেলজিয়াম শেষ চারে উঠেছে তিউনিসিয়া, পানামা, ইংল্যান্ড, জাপান ও ব্রাজিলকে হারিয়ে। এর মধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ডের জাপান আর কোয়ার্টারের ব্রাজিল ম্যাচে ছিল রোমাঞ্চকর সমাপ্তি। একটিতে দুই গোলে পিছিয়ে যাওয়ার পর পাল্টা তিন গোলে জয়, আরেকটিতে দুই গোলে এগিয়ে গিয়ে রক্ষণে ব্যতিব্যস্ত থাকতে থাকতে মাইলফলক ছোঁয়ার জয়। আপাতদৃষ্টিতে বেলজিয়ামের পথচলাই ছিল বেশি চ্যালেঞ্জিং। রেড ডেভিলস নামে পরিচিত দলটির বর্তমান স্কোয়াডকে বলা হচ্ছে বেলজিয়াম ইতিহাসের 'সোনালি প্রজন্ম'। হ্যাজার্ড, ডি ব্রুইন, লুকাকুদের নিয়ে গড়া এই প্রজন্মের হাত ধরেই ৩২ বছর পর বিশ্বকাপ সেমিতে খেলছে পশ্চিম ইউরোপের দেশটি। সেমির পথ হয়ে প্রথম ফাইনাল এবং প্রথম শিরোপারও অন্যতম ফেভারিট তারা। কিন্তু কাজটা খুব সহজ হবে না প্রতিপক্ষ ফ্রান্স বলে।

দিদিয়ের দেশমের অধীনে থাকা তরুণ ফরাসি দল শুরু থেকেই শিরোপার বড় দাবিদার। কিলিয়ান এমবাপ্পে, আন্তোনিও গ্রিজম্যান, অলিভিয়ের জিরুদ, পল পগবা, উসমান ডেম্বেলের দলটি আক্রমণভাগে খুবই ছন্দময়। বিশ্বকাপের আগের দেখায়ও বেলজিয়ামের চেয়ে এগিয়ে ফরাসিরা। ১৯৩৮ ও ১৯৮৬- বিশ্বযজ্ঞে দেখা হয়েছে দু'বার। উভয়বারই জিতেছে ফ্রান্স। তবে সার্বিক সাফল্যে এগিয়ে আবার বেলজিয়ানরা। ফিফা সংরক্ষিত তথ্য অনুসারে, সব ধরনের ম্যাচ মিলিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফ্রান্স-বেলজিয়াম মুখোমুখি হয়েছে ৭৩ বার। যেখানে ফরাসিদের ২৩ জয়ের বিপরীতে বেলজিয়ানদের জয় ৩০টি। ম্যাচ খেলার দিক থেকে ফ্রান্সের সবচেয়ে চেনা প্রতিপক্ষও বেলজিয়ামই। প্রতিবেশী হওয়া একটি কারণ, আরেকটি অর্ধেক মানুষের একই ভাষাভাষী হওয়াও। বেলজিয়ানদের কাছে ফরাসিরাও যে কত বেশি চেনা, তা বোঝা যায় হ্যাজার্ডের কথায়। ফ্রেঞ্চ-অধ্যুষিত অঞ্চলে জন্ম নেওয়া বেলজিয়ামের নাম্বার টেন বলেন, 'আমি আর আমার ভাই সমর্থন যতটা না বেলজিয়ামকে করতাম, তারচেয়ে বেশি করতাম ফ্রান্সকে। আমরা বড় হয়ে উঠেছি ১৯৯৮ বিশ্বকাপের সময়টায়। তখন বেলজিয়ামের জার্সি খুব একটা পাওয়া যেত না। আমরা তাই ফ্রান্সের জার্সি পরতাম।' তবে অতীত-স্মৃতিতে যতই ফরাসি-ছোঁয়া থাকুক, হ্যাজার্ডদের আজ দেশের টানেই ফ্রান্সবিরোধী হতে হবে। পূর্বসূরিরা বিশ্বকাপে হারানোর যে কাজটি করতে পারেনি, তা তাদের করতেই হবে এবার। প্রেরণার দিক হচ্ছে, ফ্রান্স-বেলজিয়ামের সর্বশেষ তিনটি প্রীতি ম্যাচের কোনোটিতেই হারেননি হ্যাজার্ডরা। এমনকি ২০১৫ সালে প্যারিসে ৪-৩ ব্যবধানে জেতা ম্যাচটিতে খেলা দলের অধিকাংশও আছেন এখনকার দলটিতে। তবে লীগ ওয়ানে খেলা পিএসজি ডিফেন্ডার থমাস মিউনিয়েরকে আজ একাদশে পাচ্ছে না বেলজিয়াম। দুই হলুদ কার্ডের খÿে পড়ে তাকে বসে থাকতে হবে বেঞ্চে।

একই দায়ে কোয়ার্টার ফাইনাল মিস করা ব্লেইজ মাতুইদিকে ফিরে পাচ্ছে ফরাসিরা। দু'দলের শুরুর একাদশ নির্ভর করছে দেশম আর মার্টিনেজের ট্যাকটিকসের ওপর। নিজেদের সামর্থ্যের সঙ্গে দু'দলের চিন্তায় আছে প্রতিপক্ষরাও। ফ্রান্স ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানে যেমন হ্যাজার্ড, লুকাকুদের কথা বললেন আলাদাভাবে, 'বেলজিয়াম খুব পরিপকস্ফ। লুকাকু কেবল শারীরিকভাবেই যে কোনো রক্ষণভাগকে সমস্যায় ফেলতে পারে। তার মতো খেলোয়াড়কে জায়গা দেওয়া যাবে না। আর হ্যাজার্ডও দারুণ খেলোয়াড়। ভালো ড্রিবল করতে পারে। ওকেও জায়গা দেওয়া যাবে না। আমাদের দল হিসেবে ভালো খেলতে হবে।' ব্রাজিলের বিপক্ষে দ্বিতীয় গোলটি করা ডি ব্রুইনের কথায় মনে হলো প্রতিপক্ষের চেয়ে নিজেদের নিয়েই বেশি ভাবছে বেলজিয়াম, 'বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কখনোই সাধারণ প্রতিপক্ষ পাওয়া যায় না। দুই দলই সমান। আমাদের চেষ্টা থাকবে শারীরিক ও মানসিকভাবে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার।'

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুলাই ১০,২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

খেলা এর সর্বশেষ খবর

খেলা - এর সব খবর