thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি 25, ৮ মাঘ ১৪৩১,  ২১ রজব 1446

বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ্‌র মন্তব্য

আসামের এনআরসির বিরোধিতা মানে  অবৈধ বাংলাদেশীদের মদদ দেয়া

২০১৮ জুলাই ৩১ ২২:১৯:৩৭
আসামের এনআরসির বিরোধিতা মানে  অবৈধ বাংলাদেশীদের মদদ দেয়া

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ভারতের আসামে বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক তালিকা বা এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশকে ঘিরে সে দেশের রাজনীতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ মঙ্গলবার পার্লামেন্টে সরাসরি অভিযোগ করেছেন, যে সব বিরোধী দল এনআরসি-র প্রতিবাদে মুখর তারা আসলে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদেরই সমর্থন করছেন।

এনআরসি নিয়ে বাগবিতন্ডার জেরে এদিন মুলতুবি হয়ে গেছে রাজ্যসভার অধিবেশনও।

কংগ্রেস বা তৃণমূলের মতো বিরোধী দলগুলো অবশ্য বলছে বছরের পর বছর ধরে যারা ভারতের বাসিন্দা, তারা শুধু তাদের নাগরিক অধিকারের পক্ষেই কথা বলছেন।

তবে এটা স্পষ্ট যে এনআরসি-কে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনীতিতে আবার বাংলাদেশ থেকে কথিত অনুপ্রবেশ-জনিত বিতর্ক মাথাচাড়া দিচ্ছে।

বিবিসি জানায়, আসামের এনআরসি-র সুবাদেই ভারতীয় রাজনীতির এই পুরনো ও স্পর্শকাতর ইস্যু পার্লামেন্টে আবার নতুন করে ঝড় তুলছে।

যেমন, এনআরসি-র চূড়ান্ত খসড়া থেকে বাদ পড়া যে ৪০ লক্ষ মানুষের হয়ে পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলো সরব হয়েছে, তাদের সরাসরি বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বলেই চিহ্নিত করেছে বিজেপি।

এনআরসি নিয়ে লোকসভায় মুলতুবি প্রস্তাব এনেছে যে তৃণমূল কংগ্রেস, তাদের সিনিয়র এমপি কাকলি ঘোষদস্তিদার অবশ্য বিবিসিকে বলছেন, ভারতের মাটিতে ওভাবে বিদেশি শনাক্ত করা যায় বলে তারা বিশ্বাস করেন না।

তার কথায়, "হাজার হাজার বছর ধরে ভারতের একটা ঐতিহ্য হল বিভিন্ন জাতি-ধর্মের মানুষকে এদেশে আশ্রয় দেওয়া। আমরা অতিথিকে সম্মান করি, বলি অতিথি দেবো ভব।"

"আমাদের স্বাধীন দেশেও নেহরু-লিয়াকত চুক্তি হয়েছে, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি হয়েছে। আর পার্টিশনের আগে এই সব দেশগুলো তো একটাই ভারত ছিল। এই পটভূমিতে আপনি দুম করে কোন মানদন্ডের ভিত্তিতে বলেন যে কয়েক লক্ষ লোক আমাদের দেশের নাগরিক নন?"

'ব্যাপক অনিয়মের কারণে' ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদের পরিবারের লোকজন পর্যন্ত যে আসামের নাগরিক তালিকায় ঠাঁই পাননি, সে কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন মিস ঘোষদস্তিদার।

অন্যদিকে বিজেপিও এনআরসি ইস্যুতে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়ে মঙ্গলবার দাবি করেছে এর মাধ্যমে তারা আসাম চুক্তি বাস্তবায়নের সাহস দেখিয়েছে।

বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ পার্লামেন্টে বলেন, "আসাম চুক্তিতে বলা হয়েছিল অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করে তাদের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে - আর এনআরসি ঠিক সেটাই করেছে। কংগ্রেসের তা বাস্তবায়নের সাহস হয়নি, আমাদের হিম্মত ছিল বলে করে দেখিয়েছি।"

সভায় তুমুল গন্ডগোলের মধ্যে তিনি আরও দাবি করেন, "বিরোধীরা আসলে এস বলে অবৈধ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদেরই ('ঘুসপেটিয়া') বাঁচাতে চাইছেন।"

জবাবে কাকলি ঘোষদস্তিদার বলছেন, "অনুপ্রবেশের কথাই যদি তোলেন, তাহলে চার বছরের ওপর আপনারা ক্ষমতায় আছেন - বর্ডার সিল করলেন না কেন? অনুপ্রবেশ হয়ে থাকলে সেই ব্যর্থতা তো আপনাদেরই।"

বরং বিজেপির নীতির কারণে লক্ষ লক্ষ পরিবার এখন শিক্ষা-স্বাস্থ্য-খাদ্যের মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে এবং নারী ও শিশুরা গভীর বিপদে পড়বে বলেও তিনি মনে করছেন।

তৃণমূল কংগ্রেসের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট তারা সমস্যাটাকে একটা মানবিক বিপর্যয় হিসেবে দেখাতে চাইছেন - অন্যদিকে বিজেপির লক্ষ্য গোটা এনআরসি বিতর্কের ন্যারেটিভটাই অবৈধ অনুপ্রবেশ ইস্যুতে বদলে দেওয়া।

এনআরসি তৈরির কাজ যে কংগ্রেস আমলেই শুরু হয়েছিল তারা আজ সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে - যদিও অনুপ্রবেশ প্রশ্নে বিজেপির দ্বিচারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন আসামের শিলচরের এমপি ও কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র সুস্মিতা দেব।

সুস্মিতা দেব বলেন, "লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদী শিলচরে ভাষণ দিতে এসে বরাকের বাঙালিদের উদ্দেশে বলেছিলেন তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে আসামের সব ডিটেনশন ক্যাম্প ভেঙে দেবেন - অর্থাৎ কি না বাংলাদেশীদের আসামে থাকতে দেবেন।"

"সেই একই লোক ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় গিয়ে - যেখানে অসমিয়া লোকজন বেশি - বলেছিলেন যে আমি সব বাংলাদেশীদের বের করে দেব। এটা তো পরিষ্কার ভন্ডামি - ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।

কংগ্রেস বিদেশিদের মদত দিচ্ছে, এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তিনি আরও বলছেন, "নাগরিকত্ব বিলও তো আমরা আনিনি - বরং বিজেপিই ওই বিল এনে বাংলাদেশী হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তো ওই হিন্দুরা কি বিদেশি নন?"

"আসলে বিদেশি হিন্দুদের ব্যাপারে ওরা একরকম কথা বলছে। আবার এনআরসি বেরোনোর পর বিপদে আছে বলে বিদেশিদের নিয়ে অন্য রকম কথা বলছে", মন্তব্য সুস্মিতা দেবের।

এই অভিযোগ পাল্টা-অভিযোগের মধ্যেও যেটা স্পষ্ট, তা হল এনআরসি বিতর্কের জের ধরে ভারতের রাজনীতি এখন আগামী বেশ কিছুদিন এই অনুপ্রবেশ বা হিন্দু-মুসলিম বিভাজনকে ঘিরেই আবর্তিত হবে।

অন্তত আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত তো বটেই।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর