thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৬ জমাদিউল আউয়াল 1446

শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরতে আহ্বান ডিএমপি'র

২০১৮ আগস্ট ০২ ১৬:৫৫:৫০
শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরতে আহ্বান ডিএমপি'র

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পঞ্চম দিনেও রাস্তায় নেমে আসা শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতি এই আহ্বান জানান।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করছি তারা যেন কারও উস্কানিতে কান না দেয়। সবাইকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে, নিজ নিজ ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করছি। কোমলমতি শিশুরা যেন কোনও অপপ্রচারে কান না দেয়, বিভ্রান্ত না হয়। আমরা তাদের সব দাবি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।’

মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতোমধ্যে সব দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ তৎপর রয়েছে। সড়কে যানবাহন কয়েকবার করে চেকিং করা হচ্ছে।’

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সড়ক ব্যবস্থাপনায় আগে অনিয়ম ছিল। আমরা সেসব অনিয়ম অনেক দূর করেছি। উল্টোপথে চলা অনেক প্রভাবশালীর গাড়িও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফুটপাতে গাড়ি চালানো বন্ধ করা হয়েছে। আমাদের আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও নাগরিকদের অসেচতনতার কারণে পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা বিলম্বিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘গাড়ি চেকিংয়ের কারণে দুর্ভোগ তৈরি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা গাড়ি চেকিংয়ের নামে যা করছে তা কাম্য নয়। দুর্ভোগ হচ্ছে বিশেষ করে যারা হজযাত্রী এবং রোগীদের। তাদের গাড়ি আটকানোর কারণে তারা বিপদে পড়ছেন। শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করবো, যেন তারা স্ব-স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যায়। তারা যেন ঘরে ফিরে যায়। পর্যায়ক্রমে দাবিগুলো মেনে নেওয়া হবে। পাশাপাশি অভিভাককদেরও অনুরোধ করবো, আপনারা আপনাদের সন্তানদের ঘরে নিয়ে যান। সঙ্গে শিক্ষকদেরও অনুরোধ করবো তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। আর পরিবহনে যে সমস্যা তা তো রাতারাতি সমাধান হবে না। আমরা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’

মনিরুল বলেন, ‘যে নিয়মগুলো তাৎক্ষণিকভাবে মেনে নেওয়ার যোগ্য সেগুলো এখনি ইম্পলিমেন্ট করবে সরকার। আগামী মন্ত্রিসভায় নিরাপদ সড়ক আইন উত্থাপন করা হবে। আমরা যতদূর জেনেছি, মাত্রা অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনার দায়ীদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান থাকছে এই আইনে।’

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন প্রশাসন ও বিআরটিএ’র জন্য চপেটাঘাত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের থেকেও শিক্ষা নিতে হয়। তারা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে যেসব বিষয় দেখিয়ে দিয়েছে সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করবো।’

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এখন পর্যন্ত কোনও অস্ত্র প্রয়োগ করিনি। লেথাল, সেমি-লেথাল বা নন-লেথাল অস্ত্র ব্যবহার করিনি। আমরা তাদের আন্দোলনকে মানবিক এবং সহানুভূতির সঙ্গে দেখছি।’

পুলিশের নিজেদের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে চাই, পুলিশের যারা গাড়িচালক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন তাদের প্রত্যেকের লাইসেন্স রয়েছে। অনেক সময় আমাদের এমটি (মোটর ট্রন্সপোর্ট) বিভাগ বদলি বা চালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য লাইসেন্স অফিসে রাখা হয়। এজন্য অনেকের সঙ্গে লাইসেন্স পাওয়া যায়নি। আমরা ভবিষ্যতে পুলিশের চালকদের লাইসেন্স অফিসে জমা না রেখে সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা করবো।’

উস্কানিদাতাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কোমলমতি শিশুদের আন্দোলনে নামার পর একটি স্বার্থনেষী মহল এর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। এই আন্দোলনের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কিছু গ্রুপ বা পেজ খুলে উস্কানি ছড়ানো হচ্ছে। এই সুযোগসন্ধানীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তারা ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। তারপরও তাদের বলবো, এসব বন্ধ করুন। আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের আন্দোলনে আমাদের সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিনের আন্দোলনে ৩০০ গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। এছাড়াও ৮টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। যারা গাড়ি ভাঙচুর করছেন তারা ছাত্র হতে পারে না। এ কারণে তাদের থেকে শিক্ষার্থীদের সাবধান থাকার অনুরোধ করবো।’

দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে যে গাড়িটি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী তা জব্দ করেছি। বিআরটিএ ইতোমধ্যে এই কোম্পানির রুট পারমিট বাতিল করেছে। এই গাড়ির চালক ৭ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছিল। আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান করার জন্য ইতোমধ্যে মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনায় দায়ীরা যেন সর্বোচ্চ শাস্তি পায় আমরা সেই ব্যবস্থা করবো।’

রবিবার দুপুরে বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বেপোরায়া গতিতে চালিয়ে আসা তিন বাসের প্রতিযোগিতার সময় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী আব্দুর করিম রাজীব ও দিয়া আক্তার মিম নিহত হয়। তারা দুজনই শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিল। এই ঘটনার জের ধরে পাঁচদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ ও আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/আগস্ট ০২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর