thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউল আউয়াল 1446

শিক্ষার্থীদের মামলা প্রত্যাহার দাবি উপাচার্যদের, শিক্ষামন্ত্রীর 'না'

২০১৮ আগস্ট ০৯ ০০:০৬:৪০
শিক্ষার্থীদের মামলা প্রত্যাহার দাবি উপাচার্যদের, শিক্ষামন্ত্রীর 'না'

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নামে হওয়া মামলা ও রিমান্ড প্রত্যাহার করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন ভিসিরা। তারে সাধারণ ক্ষমা করতেও তারা অনুরোধ করেছেন।

তবে তাৎক্ষণিক এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি ভিসিদের বলেছেন, এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার-বহির্ভূত। স্কুল শিক্ষার্থীরা যা কিছু ভুল করেছে সবই ক্ষমার যোগ্য। কারণ তারা কোমলমতি শিশু। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ম্যাচিউরড। তারা যা করেছে, বুঝেশুনেই করেছে। তাদের ক্ষমা করার সুযোগ নেই। আর ক্ষমা করার এখতিয়ারও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেই। কেউ ফৌজদারি অপরাধ করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। তবে নিরপরাধ কেউ যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা দেখব।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। এতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা নির্বিঘ্ন রাখতে ভিসিদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষামন্ত্রী এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক বেনজীর আহমেদসহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং বিওটি সভাপতি ও সদস্যরা বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

মতবিনিময়ে ৬ আগস্ট আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দেওয়ার পরামর্শ দেন ভিসি ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সদস্যরা। তারা বলেন, এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তারা নিজেদের ভুলও বুঝতে পারবে।

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মাফ করার প্রশ্ন এখানে নেই। আমরা কাউকে মুক্তি দেওয়ার অধিকার রাখি না। কেউ বেআইনি কাজ করলে কে তাদের মাফ করবে? বিষয়টি আইনি। যারা গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে নিষ্পাপ শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া যেতে পারে। এ রকম কেউ হয়রানির শিকার হলে তা দেখা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীও সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ভিসিদের পাঁচটি নির্দেশনা দেন। সেগুলো হচ্ছে- কেউ জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নন। তাকেও জবাবদিহি করতে হয়। ভিসিদেরও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে ও অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে জবাবদিহি করতে হবে। শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে কি-না, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে সচেতন হতে হবে। সঠিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে হবে। শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। সমস্যা সমাধানে ট্রাস্টি বোর্ডকে সম্পৃক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের কেউ যেন ফায়দা হাসিলের জন্য ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য তাদের মোটিভেশন করতে হবে। এতে শিক্ষকদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ৬ আগস্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছে, তা কোনো সময় সমর্থন করব না। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান।

সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে আছি। একটি শিক্ষার্থীও ক্ষতিগ্রস্ত হোক- তা চাই না। চাই না তারা কারও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হোক।

ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, বিমানবন্দর সড়কে শিক্ষার্থীদের ওপর বাস তুলে দিয়ে খুন করা হয়। আরও কয়েকজন আহত হয়। ওই ঘটনার রেশ ধরে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আক্রান্ত হয়েছে। পঠন-পাঠন বিঘ্নিত হয়েছে। কয়েকটি বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এক ঘণ্টার জন্যও বন্ধ হোক- তা চাই না।

ভিসিদের বক্তব্য: সভায় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভিসি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীরা কোমলমতি। না বুঝে অনেকে অপরাধ করেছে। তাদের বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। সবাইকে সাধারণ ক্ষমা করে দেওয়া হোক- আমি শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই।

সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ আল আমিন মোল্লা বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো তাদের প্রতিষ্ঠানেও কিছু ছাত্র বিভ্রান্ত হয়েছিল। বিষয়টি টের পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শিক্ষকদের টিম করে দেওয়া হয়। এভাবে তারা সফল হন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বেনজীর আহমেদ ভিসিদের উদ্দেশে বলেন, সমিতির পক্ষ থেকে যে কোনো ধরনের সহায়তা পাবেন। খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. হোসেন রেজা প্রক্টরিয়াল বডির সক্ষমতা আরও বৃদ্ধির সুপারিশ করেন।

নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের প্রো-ভিসি আনোয়ারুল করীম বলেন, শিক্ষকরাই ছেলেদের ফিরিয়ে আনতে পারে। সহমর্মিতার সঙ্গে বিষয়টি দেখার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ভিসি হান্নান চৌধুরী বলেন, বনানীতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এর কারণ, আমরা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রেখেছি।

নর্থ সাউ ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের নিজস্ব কোনো পরিবহন নেই। তাই পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক না থাকায় ক্লাস-পরীক্ষা নিতে পারিনি। তিনি বলেন, সরকার যদি পরিবহন খাতটা স্বাভাবিক রাখত তাহলে হয়তো এ আন্দোলন এতদূর আসত না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ছাত্র বিক্ষোভ শুরুর পর থেকেই সংগঠনের পক্ষ থেকে অনেকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছি। দু'একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু ঝামেলা হয়েছে। তা অনভিপ্রেত। ভিসি ও মালিকরে উদ্দেশে তিনি বলেন, এ আন্দোলন আপনারা ভালোভাবে সামাল দিয়েছেন। আগামীতে এভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন। এ জন্য সংগঠনের যা যা করার, তা করার জন্য প্রস্তুত।

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন ফরিদপুরের টাইমস ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শরীফ এম আফজাল, আশা ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ডালেম চন্দ্র বর্মন, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. আমিনুল হক, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ইয়াসমিন আরা লেখা প্রমুখ।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/আগস্ট ০৮,২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

শিক্ষা এর সর্বশেষ খবর

শিক্ষা - এর সব খবর