thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ৫ মে 24, ২২ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৬ শাওয়াল 1445

রাজধানীতে কোরবানির নির্ধারিত স্থান ফাঁকা

২০১৮ আগস্ট ২২ ১৮:২১:০২
রাজধানীতে কোরবানির নির্ধারিত স্থান ফাঁকা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: কোরবানির পশু যেখানে-সেখানে জবাই না দিয়ে নির্ধারিত স্থানে জবাই দেওয়ার জন্য নগরবাসীকে আহ্বান জানিয়ে ৭৮৫টি স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে ঢাকার দুই সিট করপোরেশন (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি)।

নির্ধারিত এসব স্থানে প্রয়োজনীয় প্যান্ডেলও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। রাখা হয়েছে পানি, স্যাভলন, ব্লিচিং পাউডারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ। কিন্তু নগরবাসীকে এসব স্থানে কোরবানি না দিয়ে সেখানে পশু বেঁধে রাখতে দেখা গেছে। আবার অনেকগুলো নির্ধারিত স্থানকে কোরবানি পশুর গোয়াল ঘর হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, দ্রুত বর্জ্য সরানোর জন্য প্রতিবছরের মতো এবারও পশু জবাইয়ের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৬০২টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন ১৮৩টি স্থান নির্ধারণ করে দেয়। এর মধ্যে ডিএসসিসি থেকে ৩৫০টি স্থানে প্যান্ডেল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ডিএনসিসিও প্রায় প্রতিটি স্থানে শামিয়ানা টানিয়ে দিয়েছে।

সকালে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সেগুনবাগিচা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শিল্পকলা একাডেমির দক্ষিণ-পূর্ব পাশ সংলগ্ন সড়কে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একটি স্থান নির্ধারণ করে, সেখানে পশু জবাইয়ের জন্য ব্যানার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে লেখা আছে— ‘পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশু কোরবানি’র জন্য নির্ধারিত স্থান। সৌজন্যে মাননীয় মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তত্ত্বাবধানে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন, কাউন্সিলর ওয়ার্ড-২০।’ কিন্তু এই স্থানটিতে একটি পশুও কোরবানি দেওয়া হয়নি।

নির্ধারিত স্থানে বেঁধে রাখা হয়েছে কোরবানির গরু এখানকার সার্বিক দায়িত্বে থাকা কয়েকজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী জানান, সব প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু কেউই এখানে আসেনি। সবাই নিজ নিজ বাসা বাড়ির সামনে আর রাস্তার মধ্যে পশু জবাই দিয়েছে। আমরা কয়েকজনকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনেনি।

একই অবস্থা দেখা গেছে, সেগুনবাগিচা জামে মসজিদের কাছে কমিউনিটি পুলিশ অফিসের সামনে। এই সড়কটিতে অন্তত পাঁচটি স্থানে ডিএসসিসি থেকে শামিয়ানা টানিয়ে প্যান্ডেল বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব স্থানে কোরবানি না দিয়ে সড়কেই পশু জবাই দিয়েছেন এলাকাবাসী। আর এই প্যান্ডেলগুলোতে দেখা গেছে পশু বেঁধে রাখা হয়েছে। কোরবানি দেওয়ার এই নির্ধারিত স্থানগুলো অনেকটাই গোয়াল ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

এ নিয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা হাজী গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আসলে সবাই রাস্তার ওপরে পশু জবাই দিচ্ছে, সেজন্য আমরাও দিয়েছি। আর সিটি করপোরেশন যে স্থানগুলো নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেখানে সবাই গরু বেঁধে রাখার কারণে নোংরা হয়ে গেছে। সেকারণে ওখানে জবাই দেওয়া যাচ্ছে না। আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ময়লা আবর্জনা নির্ধারিত একটি স্থানে স্তুপ করে রাখবো, যাতে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা সহজে নিয়ে যেতে পারেন।’

একই অবস্থা দেখা গেছে, বাংলামোটর মোড় এলাকায়। মোড় সংলগ্ন রাস্তার ফুটপাতে শামিয়ানা টানানো প্যান্ডেলে গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, যারা ঈদের দ্বিতীয় দিন বা তৃতীয় দিন কোরবানি দেবেন, তারেই এখানে পশু বেঁধে রেখেছেন। তাদের কারণেই প্যান্ডেলে কোরবানি দেওয়া যায়নি।

সকাল থেকে নগরীর বনশ্রী, মালিবাগ, মগবাজার, ইস্কাটন, সেগুনবাগিচা, পল্টন, নাজিম উদ্দিন রোড, বাংলামোটর, নিকেতন, গুলশান, বনানী, মহাখালী, উত্তরা, সেগুনবাগিচা, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে। এসব এলাকায় কোরবানির পশু জবাই দেওয়া হয়— প্রধান সড়ক, অলি-গলি, বাড়ির গ্যারেজ, মার্কেট ও বাড়ির সামনের ফুটপাতে। সিটি করপোরেশনের লোকজনকেও নির্ধারিত স্থানে দেখা যায়নি।

ডিএনসিসি’র তালিকা অনুযায়ী নিউ ইস্কাটনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে আশপাশের মানুষের জন্য কোরবানির নির্ধারিত স্থান। কিন্তু এই স্থানটিতে কাউকে কোরবানি দিতে দেখা যায়নি। আশপাশের সবাই বাসার প্রবেশ পথেই পশু জবাই দিয়ে রক্তগুলো সড়কের দিকে প্রবাহিত করে দিয়েছেন। এতে পুরোসড়ক রক্তাক্ত হয়ে পড়েছে।

মগবাজার থেকে রেলগেট পর্যন্ত সড়কের ডান পাশের চিত্রও একই। এই সড়কের ফুটপাতজুড়ে কোরবানির পশু জবাই দেওয়া হয়। আর পশুর বর্জ্যগুলোকে ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

যেখানে-সেখানে রাস্তার ওপরেই চলে পশু জবাইয়ের কাজ। স্থানীয় বাসিন্দা হাজী রাজিব আলী বলেন, ‘আমাদের মহল্লার আশপাশে কোনও নির্ধারিত স্থান দেখিনি। সিটি করপোরেশন বা কাউন্সিলর অফিস থেকেও কোনও নির্দেশনা পাইনি। তাই সবাই মিলে এখানে পশু জবাই দিয়েছি। রক্ত-গোবরসহ অন্যান্য উচ্ছ্বিষ্ট পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে।’

ড্রেনে ফেলার ফলে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি ছড়াতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা ঠিক। কিন্তু রাস্তায় রাখলে সিটি করপোরেশনের লোকজন কখন আসে, তার ঠিক নেই। সেজন্য ড্রেনে ফেলে দিয়েছি। পানির সঙ্গে ধুয়ে চলে যাবে।’

কেবল যত্রতত্র কোরবানি দেওয়াতেই থেমে নেই নগরবাসী। রাস্তার ওপরেই গরু-ছাগলের গোবর, রক্ত ও উচ্ছ্বিষ্ট ফেলে রাখা হয়েছে। তবে কেউ কেউ পানি দিয়ে ধুয়ে এসব আবর্জনা ড্রেনে ফেলে দিয়েছেন। ফলে এসব আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি ড্রেন বন্ধ হয়ে বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। এছাড়া, মশা-মাছির উৎপাতসহ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির জীবাণু ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সিটি করপোরেশন।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরবাসীর অসচেতনতাকেই দায়ী করা হচ্ছে। জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্তি প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘নির্ধারিত কিছু কিছু স্থানে কোরবানি হয়েছে। আবার অনেক স্থানে হয়নি। মানুষ সচেতন না। আমাদের সব প্রস্তুতি ছিল। নগরবাসীকে আমরা অনেকভাবে সচেতন করার চেষ্টা করেছি। লিফলেট বিতরণ, মসজিদে ইমামদের মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ, নগরবাসীর সঙ্গে মতবিনিময়, পত্রিকা ও টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমেও সচেতন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এর পরেও নগরবাসী সচেতন হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘বড় সমস্যা হচ্ছে— নগরবাসী কোরবানির আবর্জনা ড্রেনে ফেলে দেয়। রাস্তায় রাখলেও কিছুক্ষণ পর আমরা সেগুলো অপসারণ করতে পারি। কিন্তু ড্রেনে ফেললে সহজে অপসারণ করা যায় না। অনেক সমস্যা হয়। নানা রোগ ব্যাধির জীবাণু ছড়ায়।’

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ১৮৩টি স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছি। নগরবাসীকে আহ্বান জানিয়েছি— তারা যেন নির্ধারিত এসব স্থানে কোরবানি দেন। অনেকেই সচেতন না। আশা করি, আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণে সক্ষম হবো। আমাদের সে প্রস্তুতি রয়েছে। বর্জ্যের কারণে নগরবাসীকে দুর্গন্ধ পেতে হবে না।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/আগস্ট ২২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর