thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ১৫ মে 24, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ৭ জিলকদ  1445

জাতিসংঘ প্রতিনিধি সেপ্পো

নিরাপদ পরিবেশ ছাড়া প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়

২০১৮ আগস্ট ২৫ ০১:৩৮:২০
নিরাপদ পরিবেশ ছাড়া প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে রবার্ট ওয়াটসকিনের স্থলাভিষিক্ত হন। ফিনল্যান্ডের নাগরিক মিয়া সেপ্পো প্রায় ১৬ বছর ধরে জাতিসংঘে কর্মরত রয়েছেন। ঢাকার একটি গণমাধ্যমের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ রোহিঙ্গা সংকটকে বিশ্বে এ সময়ে সবচেয়ে দ্রুত বিস্তৃত হওয়া শরণার্থী সংকট হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং প্রথমেই শরণার্থীদের জন্য জরুরি সহায়তা নিশ্চিতের পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশের সরকার এবং স্থানীয় জনগণই প্রথমে বিপন্ন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, সহায়তা করেছে। জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারের এই ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসাও করেছে। জাতিসংঘ এবং ইউএনএইচসিআর, শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনসহ অন্য সংস্থাগুলো খুব দ্রুতই এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে এখানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, তাদের নূ্যনতম জীবন ধারণের অবস্থা নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছে। এক বছর ধরে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে আছে। তাদের ভালোভাবে বসবাসের জন্য এ সময়ের মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ পর্যায়ে এসে তাদের আরও বেশি সহায়তা প্রয়োজন; তাদের জীবন থেকে অনিশ্চয়তা দূর হওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জরুরি সহায়তা হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ৮০ কোটি ডলার দিয়েছে। এটি যথেষ্ট না হলেও বিপুল পরিমাণ। এই অর্থ দিয়ে রোহিঙ্গাদের জরুরি প্রয়োজনের অনেক কিছুই মেটানো সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি সবাই দেখেছেন, সংকট শুরুর সঙ্গে সঙ্গে কক্সবাজারে শরণার্থীদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা এসেছেন। নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দল এসেছে। আপনারা এটাও জানেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এসেছেন। অতএব এটা স্পষ্ট যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংকটকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে।

শুধু জরুরি সহায়তা নয়, এ সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এবং ওআইসিতে আলোচনা হয়েছে। আরও অনেক সংস্থা এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে কিছু দিনের মধ্যেই জাতিসংঘের রাখাইন-বিষয়ক ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। যার মাধ্যমে এ সংকট সমাধানে আরও বেশি অগ্রগতি হবে আশা করা যায়।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও দুটি বিষয়ে বড় ভূমিকা রাখা জরুরি। প্রথমত, রোহিঙ্গা সংকটের রাজনৈতিক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। যেন তারা নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে নিজের দেশে বসবাসের সুযোগ পায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার সংরক্ষণ। এ বিষয়টি নিয়েও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রত্যাশিত।

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিটি সভায় এটি এজেন্ডা হিসেবে থেকেছে, আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দল কক্সবাজার পরিদর্শন করেছে। অতএব, নিরাপত্তা পরিষদ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই রোহিঙ্গা সংকটের দিকে নজর রাখছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আশা করা যেতেই পারে, রোহিঙ্গা সংকটের কার্যকর সমাধানে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আগামীতে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাবে।


রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় চীন এবং রাশিয়ার ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, দুটি দেশই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একই সঙ্গে এ দুটি দেশের আন্তর্জাতিকভাবেও বড় প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ক্ষেত্রেও এ দুটি দেশ প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতা রাখে। এ সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে চীন ও রাশিয়া রোহিঙ্গাদের রাখাইনে নির্ভয়ে ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে পারে। একই সঙ্গে কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সংকট নিরসনে বাংলাদেশকে আরও বেশি সহায়তাও করা উচিত এ দুটি দেশের। চীন এবং রাশিয়া রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে অবশ্যই আদ্যোপান্ত জানে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অতএব, নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ঐক্যবদ্ধ কার্যকর সিদ্ধান্তে পৌঁছার ক্ষেত্রেও এ দুটি দেশের ভূমিকা রাখার বিষয়টি নিয়ে বলাই বাহুল্য।

মিস সেপ্পো বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জাতিসংঘের অবস্থান অত্যন্ত পরিস্কার। জাতিসংঘ মহাসচিব এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে এবং জোর দিয়ে বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন মানে শুধু তাদের রাখাইনে ফেরত নেওয়া নয়। অবশ্যই এ প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছায়। প্রত্যাবাসনের পর তাদের সেখানে নাগরিক অধিকারসহ নিরাপদ বসবাসের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নিজের দেশে ফিরে গিয়ে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ বসবাস সম্পর্কে নিশ্চয়তা না পেলে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে চাইবে না। জাতিসংঘও জোর দিয়ে বারবার এটাই বলছে, সংকটের স্থায়ী সমাধানের বিষয়টি নির্ভর করছে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ বসবাসের নিশ্চয়তার মাধ্যমে। এ জন্য বাংলাদেশ কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। মিয়ানমারের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা চলছে। এখন মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়াতে হবে যেন মিয়ানমার রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ বসবাসের নিশ্চিত পরিবশে দ্রুত সৃষ্টি করে। যতক্ষণ সেই পরিবেশ সৃষ্টি না হচ্ছে, প্রত্যাবাসন শুরু সম্ভব হবে না, এটাই বলা যায়।

রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের যত দ্রুত তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানো যায়, ততই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গল। এ কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বেশি আলোচনা, আরও বেশি মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা অবশ্যই বাংলাদেশের থাকবে।

পাশাপাশি কক্সবাজারে যে রোহিঙ্গারা আছে, যতদিন থাকবে, তাদের আরও একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার ব্যবস্থার দিকেও নজর দিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, রোহিঙ্গা শিশুদের সামনে অন্ধকার ভবিষ্যতে কিছুটা হলেও আলো জ্বালানো। এ জন্য তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের বিষয়েও নজর রাখতে হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ অনেক কিছু করেছে। সে জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

এ সংকট সমাধানে আসলে মিয়ানমারের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সংকটটা তাদেরই দিক থেকেই শুরু। এটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানে এবং বোঝে। এ কারণে সংকট সমাধানে তাদের দায়টাও সবচেয়ে বেশি। রাখাইন-বিষয়ক জাতিসংঘ উপদেষ্টা কমিশনের (কফি আনান কমিশন) রিপোর্টের সুপারিশ মিয়ানমার বাস্তবায়ন করলেই এ সংকটের সহজ ও দ্রুত সমাধান নিশ্চিত হয়। অতএব, মিয়ানমারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করা। তাদের বসবাসের জন্য নিরাপদ পরিবেশের সৃষ্টি করা।

মিয়ানমারকে বুঝতে হবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সংকটকে বিশ্বের প্রধানতম সংকটের একটি হিসেবে দেখছে। জাতিসংঘ মহাসচিবও এ সংকটকে সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ তালিকায় রেখেছেন। এ কারণে সংকট দীর্ঘায়িত হলে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়তেই থাকবে। অতএব, সংকট যেন দীর্ঘায়িত না হয়, সে বিষয়টি মিয়ানমারকেই নিশ্চিত করতে হবে।

ঋণ: দৈনিক সমকাল

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/আগস্ট ২৫,২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর