thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে 24, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ১১ জিলকদ  1445

বঙ্গভবন ও সচিবালয়ের জলাবদ্ধতা নিয়ে ডিএসসিসি’র পরিকল্পনা

২০১৮ আগস্ট ২৮ ১৮:২৮:৩৩
বঙ্গভবন ও সচিবালয়ের জলাবদ্ধতা নিয়ে ডিএসসিসি’র পরিকল্পনা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সামান্য বৃষ্টি হলেই রাষ্ট্রপতির কার্যালয় বঙ্গভবন ও প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

এজন্য অনেক সময় এই দুই কার্যালয়ে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জলবদ্ধতা নিরসনে নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অতি গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি কার্যালয়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি কার্যালয়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলালের সভাপতিত্বে নগর ভবনে একটি সভা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তের অগ্রগতি পর্যালোচনায় ৯ এপ্রিল সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী আলী আহমেদের সভাপতিত্বে আরেকটি সভা হয়। সভায় বঙ্গভবন ও সচিবালয়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিস্তর আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

সভায় বঙ্গভবন নিয়ে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, বঙ্গভবনের চারদিকে রাস্তা নিচু রাখা, এর এক্সপ্রেস ড্রেনেজ লাইনের সঙ্গে সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, ওয়াসার গোপীবাগ পাম্পিং স্টেশনের সক্ষমতা বাড়ানো এবং কমলাপুর রেলওয়ে কালভার্টের তলদেশ সেগুনবাগিচা কালভার্টের তলদেশের সমান নামিয়ে দেওয়া।

বঙ্গভবনের জলবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া পদক্ষেপ সচিবালয়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, সচিবালয়ের পানি ওসমানী উদ্যানের পুকুরে ফেলা, বৃষ্টির সময় পানি ধারণের জন্য সচিবালয়ের পশ্চিম পাশে জলাধার নির্মাণ করা, পানি নিষ্কাশনের জন্য চারপাশে গভীর ড্রেন নির্মাণ করা এবং পানি অপসারণে পর্যাপ্ত পাম্পিং স্টেশন স্থাপন করা।

সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, বঙ্গভবনের পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি এক্সপ্রেস লাইন রয়েছে। এই লাইনের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে ডিএসসিসির বিভিন্ন সারফেস ড্রেন ও স্টর্ম স্যুয়ার লাইন সংযোগ দেওয়ায় ড্রেনেজ লাইনটি ওভারলোডেড হচ্ছে। ফলে বঙ্গভবন এলাকার বৃষ্টির পানি অপসারণ হতে দীর্ঘ সময় লাগছে। তাছাড়া ভারী বৃষ্টির সময় এই ড্রেনেজ লাইন দিয়ে পানি ব্যাকফ্লো হচ্ছে। এ অবস্থায় এই ড্রেনেজ লাইনের সঙ্গে দেওয়া সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করে আলাদাভাবে আউটলেট নির্মাণের মাধ্যমে নিকটস্থ বক্স কালভার্ট বা খালে সংযোগ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবার বর্ষা মৌসুমের আগেই এসব কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এখনও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো পুরো কাজ শেষ করতে পারেনি।

সভায় আরও জানানো হয়, বঙ্গভবন ও সচিবালয় এলাকার পানি কমলাপুর রেলওয়ে কালভার্ট ও ঢাকা ওয়াসার গোপীবাগ পাম্পিং স্টেশন হয়ে নিষ্কাশন হচ্ছে। কিন্তু এই স্টেশনের সক্ষমতা খুবই কম। তাছাড়া গোপীবাগ রোড ক্রসিং কালভার্টের তলদেশ অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ায় এই কালভার্ট দিয়ে যথাযথভাবে পানি অপসারণ হচ্ছে না। যে কারণে বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় এই রোড ক্রসিংয়ের লেভেল সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টের সমতলে নামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ডিএসসিসির প্রকৌশলীরা জানান, বঙ্গভবনের দক্ষিণ পাশের রাস্তা অনেক উঁচু ছিল। ফলে রাস্তার পানি বঙ্গভবনের ভেতরে চলে যায়। এ অবস্থায় রাস্তা সংস্কারের সময় ৬ ইঞ্চি নিচু রেখে সড়কের দক্ষিণ দিকে ঢালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই মধ্যে এই সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের দাবি করেছে ডিএসসিসি। ফলে সড়কের পানি আর বঙ্গভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। পাশাপাশি বঙ্গভবনের পানি সড়কের ওপর দিয়ে বের হওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। এছাড়া ভবনের চারদিকের সব রাস্তা নিচু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে প্রথম বৈঠকে ভবনের চারদিকে উঁচু কম্পাউন্ড তৈরির সিদ্ধান্ত হলেও আর্কিটেকচারাল ভিউ অসুন্দর দেখাবে বিধায় এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়।

সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গভবনের ভেতরে চারটি পুকুর রয়েছে। কিন্তু এর একটিও বৃষ্টির সময় জলাধার হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। পুকুরগুলোতে মাছ চাষ হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি নিজেই এর তদারকি করেন। এই পুকুরগুলোর অভ্যন্তরীণ কিছু সংযোগ লাইন রয়েছে। কিন্তু পুকুরে মাছ চাষ হওয়ায় পানি ধরনের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। প্রথম সভায় সংযোগগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও পরে মাছ চাষ ও পানির বিশুদ্ধতার কথা চিন্তা করে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়। পাশাপাশি সংযোগ লাইনগুলোকে বিকল্প পথে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

অপরদিকে সচিবালয়ের ভেতরে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের বিষয়েও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সচিবালয় হতে সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট পর্যন্ত নির্মিত এক্সপ্রেস লাইনের সঙ্গে ডিএসসিসি’র সব ড্রেনেজ লাইন বিচ্ছিন্ন করতে হবে। পাশাপাশি যাতে বৃষ্টির পানি অপসারণে জন্য পাশের উসমানী উদ্যানের জলাধারের সঙ্গে সচিবালয়ের ড্রেনেজ লাইন সংযোগ করতে হবে।

ডিএসসিসি প্রকৌশলীদের অভিযোগ, ভারী বৃষ্টি হলে ঢাকা ওয়াসার যেসব ড্রেন রয়েছে সেগুলো ওভারফ্লো হয়ে সচিবালয়ের ভেতরে পানি প্রবেশ করে। এ অবস্থায় সচিবালয়ের চারদিকের ফুটপাতের নিচে গভীর ড্রেন নির্মাণ করতে হবে। অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য সচিবালয়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি অতিরিক্ত পানি ওসমানী উদ্যোনের লেকে অপসারণ করতে হবে। তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সচিবালয়ের নিরাপত্তা জন্য হুমকি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে ডিএসসিসি। এজন্য বিষয়টি নিয়ে আরও গভীর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হবে। এছাড়া বৃষ্টির সময় পানি ধারণের জন্য সচিবালয়ের পশ্চিম প্রাচীর সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গায় একটি জলাধার নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘বঙ্গভবন ও সচিবালয় আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। আমরা এ দুটি কার্যালয়, আশপাশের এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং বাংলাদেশ রেলওয়েসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/আগস্ট ২৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর