জাপানে ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্প, নিহত ১

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: প্রাকৃতিক দূর্যোগ পিছু ছাড়ছে না জাপানের; ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী টাইফুন জেবিতে তছনছ হওয়ার পর এবার দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ হোক্কাইডোতে ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের খবর পাওয়া গেছে।

বুধবার রাত ৩ টা ৮ মিনিটে হোক্কাইডোতে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয় বলে জাপানের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।

এতে অন্তত এক জন নিহত ও ৩২ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জাপানি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাতে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ভূমিকম্পের পর ১২০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এনএইচকে।

ভূমিকম্পের পর বিভিন্ন স্থাপনা দূর্বল হয়ে পড়ায় বড় ধরনের দূর্ঘটনা এড়াতে সবাইকে সতর্কভাবে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) ভূমিকম্পটির মাত্রা ৬.৬ এবং এর উৎপত্তিস্থল তমোকোমাই শহরের ভূপৃষ্ঠের ২৭ কিমি গভীরে বলে জানিয়েছে।

হোক্কাইডোতে ১৯৯৬ সালের পর এটিই সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

ভূমিকম্পের পর থেকে হোক্কাইডোর প্রায় ত্রিশ লাখ বাড়িতে বিদুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল ও দ্রুতগামী ট্রেন শিনকানসেনসহ প্রায় সব ধরনের সাধারণ পরিবহন বন্ধ রয়েছে।

এ ভূমিকম্পের মাত্র এক দিন আগে সুপার টাইফুন জেবির তাণ্ডবে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ওসাকা ও কিয়েতোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ১১ জন নিহত হয়।

এনএইচকের টেলিভিশন ফুটেজে ভূমিকম্পের সাথে সাথে পুরো শহরে বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়তে দেখা যায়; পাশাপাশি রাস্তাগুলোতে ধস, বাড়িঘর দুমড়ে মুচড়ে পড়ে থাকতেও দেখা গেছে।

ভূমিকম্পের কারণে বিভিন্ন জায়গায় ভূমিধসের ঘটনাও ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেন, ‘এটি সত্যি মর্মান্তিক দূর্যোগ। আমরা একটি ট্যাক্সফোর্স গঠন করেছি। ইতোমধ্যে প্রায় ২৫ হাজার সৈন্য আহতদের উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছে।’

সম্ভাব্য বড় ধরনের ঝুঁকি এড়াতে জনসাধারণকে স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে নির্ণয় করা কঠিন। তবে সরকার জনগণের প্রাণের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সকলকে সর্তক হয়ে চলার জন্য বলা হয়েছে।’

এদিকে টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে হোক্কাইডোর ভূমিকম্পে কোন বাংলাদেশী আহত হয়নি। এখানে বসবাসরত সকল বাংলাদেশী নিরাপদে রয়েছেন।’

১৮ জুন দেশটির ওসাকায় ৬.১ শক্তিশালী ভূমিকম্পে ৫ জন নিহত হয়েছিল। এরপর জুলাই মাস জুড়ে দাপদাহে ৮৩ জন, অতিবৃষ্টিতে ২২৪ জন নিহত হয়। এরপর মঙ্গলবারের ভয়াভয় টাইফুনে আরও ১১ জন নিহত হয়।

এদিকে জেবির সঙ্গে আসা জলোচ্ছ্বাসে প্রথমবারের মতো সাগরের মাঝে নির্মিত জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ‘কানসাই’ প্লাবিত হয়েছে । ওসাকা সাগরের মধ্যে একটি কৃত্রিম দ্বীপে নির্মিত এই বিমানবন্দরটিতলিয়ে গেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।

সেখানে আটকা পড়া ৫ হাজার যাত্রীকে বুধবার উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

এই বিমানবন্দরে শুক্রবার থেকে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট উঠানামা শুরু করবে, কিন্তু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হতে কিছুদিন সময় লাগতে পারে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে কানসাই বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৮)