thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ৩০ জিলকদ  ১৪৪৫

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিচারের এখতিয়ার আইসিসির নেই: মিয়ানমার

২০১৮ সেপ্টেম্বর ০৮ ০৭:০৫:১৪
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিচারের এখতিয়ার আইসিসির নেই: মিয়ানমার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানো ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে মিয়ানমার। দেশটির সরকার শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে ‘দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান’ করার কথা উল্লেখ করে বলেছে, সংস্থাটির মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম চালাবার কোনও এখতিয়ার নেই। খবর- রয়টার্সের।

বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য না হলেও বাংলাদেশ সংস্থাটির সদস্য। এর ভিত্তিতেই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম চালানো সম্ভব বলে রায় দিয়েছে আদালত।

মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের দফতর থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার দেওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায় ‘ত্রুটিপূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়া এবং প্রশ্নবিদ্ধ আইনি ভিত্তির ওপর’ দাঁড়িয়ে আছে। রোহিঙ্গা নিপীড়নে দায়ী মিয়ানমারের নাগরিকদের বিচারের আওতায় আনার যে আবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে করা হয়েছিল তার বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আমলে নেওয়া অভিযোগ ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যার সঙ্গে আইনি যুক্তি-তর্কের কোনও সম্পর্ক নেই।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর ফাতাও বেনসুদা রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদনের জবাবে বৃহস্পতিবার সংস্থাটি রোহিঙ্গা নিপীড়নে মিয়ানমারের নাগরিকদের বিচারের আওতায় আনা যায় কি না তা আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করে দেখার পথ উন্মুক্ত করে দিলো। যথেষ্ট প্রমাণ পেলে সংস্থাটি মিয়ানমারের দায়ী কর্মকর্তাদের আসামি করে উপস্থাপিত মামলা বিচারের জন্য গ্রহণ করবে। এখন পর্যন্ত অবশ্য বেনসুদা আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতের কাছে তেমন প্রমাণ হাজির করেননি।

গত আগস্ট মাসে জাতিসংঘের তদন্ত দল মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার উদ্দেশ্যে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ এবং দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এমন ঘৃণ্য অপরাধের নীলনকশা করার দায়ে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ সংশ্লিষ্ট ওপর পাঁচ জেনারেলকে বিচারে আওতায় আনা উচিত।

রয়টার্স লিখেছে, মিয়ানমার রোম চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। সেহেতু সাধারণভাবে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আদালতের আদেশ পালনে বাধ্য নয়। কিন্তু বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য। আর মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর যে সহিংসতা চালানো হয়েছে ঘটেছে আন্তর্জাতিক সীমান্তে। নিপীড়িত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এটিই মিয়ানমারের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট। বৃহস্পতিবারে দেওয়া রায়ে আদালতও এ কথাই বলেছিল।

এবারের বিবৃতিটি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে দেওয়া। গত ৯ আগস্ট বিবৃতি দিয়েছিল মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেতা নোবেল শান্তি পুরষ্কার জয়ী নেত্রী অং সান সু চির দফতর। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চিঠির জবাব দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তদন্ত করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে কোনও সহযোগিতা করবে না মিয়ানমার। বরং সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও সংস্থাটি যদি মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে চায় তাহলে তা বিধির লঙ্ঘন হিসেবে পরিগণিত হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য খারাপ উদাহরণ তৈরি করবে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসির) কাছে যে আবেদন করা হয়েছে তা ‘ভিত্তিহীন ও বাতিলযোগ্য।’

গত বছরের আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। পালিয়া আসা রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নিপীড়নের বিবরণ দিয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর