thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫ পৌষ ১৪৩১,  ১৭ জমাদিউস সানি 1446

স্থুলতা ও অপুষ্টি: ৯ দেশে 'ডাবল বারডেন'

২০১৮ অক্টোবর ২৪ ০৯:১৭:২৬
স্থুলতা ও অপুষ্টি: ৯ দেশে 'ডাবল বারডেন'

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ওবেসিটি বা স্থুলতাকে পশ্চিমা সমাজের আর অপুষ্টিকে দরিদ্র দেশের সমস্যা হিসেবেই মনে করা হতো। কিন্তু সত্যটা আরও জটিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি ১০টি দেশের মধ্যে ৯টি দেশেই এই 'ডাবল বারডেন' বা যৌথ সমস্যায় ভুগছে। শুধু দেশ নয়, এমনকি একই পরিবারেও এই সমস্যা বিদ্যমান। খবর বিবিসির


শিশুদের স্থুলতা :

পৃথিবীর প্রায় সবগুলো দেশের মানুষই কম-বেশি এই রোগে ভুগছে।

অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ২০১৬ সালে ছিল সাড়ে ৮১ কোটি। আর এরপর গত দুই বছরে এই সংখ্যা আরও ৫ শতাংশ বেড়েছে।

শিশুদের স্থুলতা যেসব জায়গায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এর মধ্যে রয়েছে আফ্রিকা।

আবার এই আফ্রিকাতেই শতকরা ২০ শতাংশ শিশু ভুগছে অপুষ্টিতে।

বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বলছে, উন্নত দেশগুলোর মতো উন্নয়নশীল দেশেও এখন স্থুলতা ছড়িয়ে পড়ছে।

চোখ একেবারে কপালে উঠার মতো বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, স্থুলতায় আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি শিশুর সংখ্যা রয়েছে মাইক্রোনেশিয়া নামে একটি অত্যন্ত ছোট দ্বীপরাষ্ট্রের।

দক্ষিণ আফ্রিকাতে প্রতি তিনজন শিশুর একজন স্থুলতায় আক্রান্ত।

আর ব্রাজিলে শতকরা ৩৬ ভাগ শিশুই স্থুলতায় আক্রান্ত। আবার খুব অদ্ভুত যে, এই ব্রাজিলেই অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা শতকরা ১৬ শতাংশ।

আবার এমনও রয়েছে যে, শিশু দেখতে স্থুল হলেও তার শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থাকায় সে স্থুল শরীর নিয়েও অপুষ্টিতে ভোগে।

হাতে কাঁচা টাকা, খরচ করতে মানা নেই :

মানুষের জীবনে স্থুলতা ও অপুষ্টিতে ভোগার পেছনে জীবনযাত্রার মান পাল্টে যাওয়ার বিষয়টিকে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসতে শুরু করায় এইসব সমাজে দেখা দিয়েছে নতুন এক মধ্যবিত্ত শ্রেণী। খরচা করার মতন টাকাও তাদের হাতে জমছে।

ফলে, পশ্চিমা খাবার বা রেস্তরাঁয় গিয়ে অধিক চিনি, চর্বি, মাংস জাতীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে কিন্তু খাবারে আঁশ জাতীয় বস্তুর পরিমাণ কমে গেছে।

চীনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির মফস্বল শহরে দিকে স্থূলতা মাত্র ১০ শতাংশ কিন্তু অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা ২১ শতাংশ।

কিন্তু শহুরেদের মধ্যে ব্যাপারটা পুরো উল্টো। এখানে ১৭ ভাগ শিশু স্থুলতায় আর ১৪ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।

ক্ষুধা নিবারণ :

অস্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে শিশুরাই সাধারণত সবচে বেশি আক্রান্ত হয়। কারণ এই বয়সে বেড়ে উঠার জন্য দরকার হয় পুষ্টি।

অনেক বাড়িতেই দেখা যায়, বাবা-মা স্থুলতায় আক্রান্ত হলেও একই বাসাতে সন্তানেরা ভুগছে অপুষ্টিতে।

গবেষণা বলছে যে, যে সব শিশু অপুষ্টিতে ভোগে জীবনের পরবর্তী সময়ে তাদেরই স্থুলতায় আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বাড়ে।

তাই, ক্ষুধা নিবারণের জন্য প্রতিটি দেশেরই একটি নিজস্ব পরিকল্পনা থাকা উচিত।

পশ্চিমা দুনিয়া:

'ডাবল বারডেন' বা 'দ্বৈত বোঝা' মূলত উন্নয়নশীল দেশের সমস্যা হলেও উন্নত দেশেও এটি রয়েছে। খোদ যুক্তরাজ্যেই এই সমস্যা তীব্রভাবে বিরাজমান।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ভুক্ত অন্যান্য দেশেও এই সমস্যা রয়েছে।


খাদ্য নির্বাচন :

স্থুলতা ও অপুষ্টিতে ভোগার ক্ষেত্রে কে কোন ধরণের খাবার খেতে পছন্দ করে এই পছন্দ-অপছন্দের একটি প্রভাব আছে বলে মনে করা হয়।

খাদ্য পছন্দ করার ব্যাপারে আমরা বিভিন্নভাবেই প্রভাবিত হই।

খাবারের খরচ, সহজপ্রাপ্যতা, সময়-সংকট, স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে আমাদের জানা-না-জানা ইত্যাদির একটা সরাসরি প্রভাব থাকে খাদ্যাভ্যাসে।

তবে, এটি স্পষ্ট যে শৈশবে স্থুলতায় আক্রান্ত হলে পরবর্তী জীবনে ক্যান্সার হওয়াসহ আরও বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মাত্রা বাড়ে।


অগ্রগতি:

উন্নয়নশীল দেশগুলো স্থুলতার সাথে পাল্লা দিয়ে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতা বাড়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল।

তাহলে এখন করণীয় কি? বলা হচ্ছে, ডাবল বারডেন থেকে মুক্তি পেতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ হচ্ছে।

যেমন জাতিসংঘের এমনি একটি অঙ্গিকার-নামায় সই করেছে ব্রাজিল।

এর আওতায় স্থূলতা কমানো, খাদ্য তালিকায় চিনির ব্যাবহার কমানো এবং ফল-মূল ও শাক-সবজির পরিমাণও সহ আরও কিছু পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গিকার রয়েছে।

আর মেক্সিকো তো আরও এক ধাপ এগিয়ে। তারা তাদের দেশে চিনির উপরে 'সুগার ট্যাক্স' বলে আলাদা একটা ট্যাক্সই বসিয়ে দিয়েছে।

যুক্তরাজ্যও একই ধরণের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।

কিন্তু দুনিয়া-ব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এই পুষ্টি সংকট মোকাবেলা করতে আরও অনেক উদ্যোগ নিতে হবে।

ওবেসিটি বা স্থূলতাকে পশ্চিমা সমাজের আর অপুষ্টিকে দরিদ্র দেশের সমস্যা হিসেবেই মনে করা হতো। কিন্তু আসল চিত্রটা একেবারেই আলাদা।


(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/অক্টোবর ২৪,২০১৮)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ খবর

স্বাস্থ্য - এর সব খবর