thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল 24, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ২০ শাওয়াল 1445

নির্বাচনে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট

২০১৮ নভেম্বর ১১ ০৯:০২:২৯
নির্বাচনে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাচ্ছে। শনিবার (১০ নভেম্বর) রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি, তফসিল পেছানো, সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতসহ সরকারকে বেশ কিছু শর্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রোববার (১১ নভেম্বর) দুপুরে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ড. কামাল হোসেন নির্বাচনের তফসিল পেছানোর দাবি জানাবেন।

একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচি দেবেন। এর আগে সন্ধ্যায় এক বৈঠক শেষে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে অগ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচনের আভাস পেলে আমরা সেখানে যাব না। তখন নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

শনিবার বিকাল ৫টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। এর পরপরই বসে ২০ দলীয় জোটের শরিকরা। এসব বৈঠকে নেতারা নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখান। সর্বশেষ রাতে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বসেন। সেখানে দিনব্যাপী যে মতামত পাওয়া গেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে জোট বেঁধে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার তথ্য নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করে আজ চিঠি দেবে বিএনপি ও জোটের নিবন্ধিত শরিক দলগুলো। চিঠির সঙ্গে তফসিল পেছানোর আবেদন জমা দেয়া হবে। এছাড়া আগামীকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বসতে চান। এজন্য আজ কমিশনের কাছে সময় চাওয়া হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনের আগে রোববার সকাল ১০টায় ড. কামাল হোসেনের বাসায় বসবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। এরপর সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন তারা। রাতে জোটের একাধিক নেতা বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবেই তারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

একই সঙ্গে কিছু শর্ত জুড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদ জিয়ার মুক্তি, তফসিল পেছানো, সব দলের জন্য নির্বাচনে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। বৈঠকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করা, পাশাপাশি সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখতে রাজপথে আন্দোলনও অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়াও নিজেদের মধ্যে আসন সমঝোতার বিষয়টি ফয়সালার জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে দলের নীতিনির্ধারকরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অবহিত করতে আজ যে কোনো সময় দলের নেতারা চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। এছাড়া নীতিনির্ধারক ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদের মতামত নিয়ে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়েছে, যা লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে শনিবার রাতেই পাঠানো হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাতের সময় তার কাছেও এ সারসংক্ষেপের কপি দেয়া হবে।

শনিবার বিকালে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এখানে নেয়া সিদ্ধান্ত সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত ২০ দলীয় জোটের সভায় উপস্থিত শীর্ষ নেতাদের অবহিত করা হয়। সন্ধ্যার পর বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসায় গণফোরাম নেতারা বৈঠকে বসেন।

আলাদা সভায় অধিকাংশ দলের নেতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দেন। তবে কেউ কেউ দ্বিমতও পোষণ করেন। ২০ দলীয় জোটের বেশির ভাগ নেতার বক্তব্য, আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া উচিত। সরকারকে খালি মাঠ ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না। নির্বাচনকে তারা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিতে চান।

তারা বলেন, ভোটে অংশ নেয়ার মাধ্যমে জোটনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে হবে।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে তাদের দল। দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দেশি-বিদেশিরাও বিএনপিকে এবার নির্বাচনে অংশ নেয়ার জোর পরামর্শ দিচ্ছেন। বিগত দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের মতো আর ভুল না করার অনুরোধ করছেন তারা। একই সঙ্গে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারাও নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে বিরোধিতা করেন।

তারা বলেন, আমরা কিসের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনে যাব। সংলাপ বা আন্দোলন করে আমরা কী অর্জন করতে পেরেছি। তৃণমূলকে কী বলে আশ্বস্ত করব। এসব বিষয় ভাবা উচিত। নির্বাচনে গিয়ে সরকারকে বৈধতা দেয়া হবে কিনা সেই প্রশ্নও সামনে এসেছে। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সবকিছু বিবেচনায় আনতে হবে। এ নিয়ে বৈঠকে নেতাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় বলেও জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে দলের হাইকমান্ডের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করে তার মতামত নিতে হবে। প্রয়োজনে তার লিখিত মতামত নেতাকর্মীদের কাছে তুলে ধরতে হবে। দু-একজন গিয়ে দেখা করে বাইরে এসে বলবেন, চেয়ারপারসন নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা অনেকে গ্রহণ নাও করতে পারেন।

চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বিকাল ৫টায় বৈঠক শুরু হয়ে চলে প্রায় ২ ঘণ্টা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান প্রমুখ। লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া অসুস্থতার কারণে বৈঠক চলাকালে বেরিয়ে যান। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ব্যক্তিগত কাজে বৈঠক থেকে বেরিয়ে গেলেও পরে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে যোগ দেন।

নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের পর সন্ধ্যায় শুরু হয় ২০ দলীয় জোটের মুলতবি বৈঠক। সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয়ে এ বৈঠক চলে প্রায় পৌনে ১ ঘণ্টা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। তাকে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে জোটের হয়ে তিনি প্রতিনিধিত্ব করবেন।

জোটের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে শরিকরা মতামত তুলে ধরেন। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে ২০ দলের শরিকদের মধ্যে ১১টি দল তাদের মতামত তুলে ধরে। সেখানে ১০ দলই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দেয়। আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা। সেখানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বাকি ৯ দল তাদের মতামত জানানোর আগেই জোটের বৈঠক মুলতবি করা হয়। শনিবারের বৈঠকে বাকি দলগুলো তাদের মতামত তুলে ধরে।

সূত্র জানায়, শনিবারের বৈঠকে বেশির ভাগ দল নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দেয়। তবে পাঁচটি দল জোটনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দেয়। সে সব দলের নেতারা বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে গেলে তৃণমূল তা গ্রহণ করবে না। তাই জোটনেত্রীকে মুক্ত করেই আমাদের নির্বাচনে যাওয়া উচিত। বৈঠকে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী স্বতন্ত্র না জোটগতভাবে নির্বাচন করবে এ বিষয়ে মত দেয়ার জন্য ১ দিন সময় নেয়। জামায়াত প্রতিনিধি বলেন, আজ এ বিষয়ে তাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। এরপরই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে। জোটের শরিকরা নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বিএনপির ওপর ছেড়ে দেয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিজেপির ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, এলডিপির ড. রেদওয়ান আহমেদ, জামায়াতের মাওলানা আবদুল হালিম, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দার, খেলাফত মজলিসের মাওলানা ইসহাক, জাগপার ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, লেবার পার্টির ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডল, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব, ন্যাপের চেয়ারম্যান শাওন সাদেকী প্রমুখ।

বৈঠকের শেষপর্যায়ে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শরিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, গণতান্ত্রিক পন্থায় আইনের যে পথগুলো আছে তাদের সেদিকেই যেতে হবে। বৈঠক শেষে জোটের শীর্ষনেতা কর্নেল অলি আহমদ বলেন, তাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে। নির্বাচনে যাব কী যাব না, এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। দু-এক দিনের মধ্যে ২০ দল, মূল দল বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি হল আমাদের প্রধান ইস্যু।

তিনি বলেন, এ যে সরকার বলছে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে আসলে তা কাগজে-কলমে আর পত্রিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখন পর্যন্ত সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। এটা সরকারের দায়িত্ব।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/নভেম্বর ১১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর