thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউল আউয়াল 1446

তানহিম আহমেদের তিনটি কবিতা

২০১৯ জানুয়ারি ২৮ ০৮:১৩:৩৫
তানহিম আহমেদের তিনটি কবিতা

সন্ধ্যে বেলার গল্প

হঠাৎ করেই কোনো সন্ধ্যেবেলা ছুটে যেতে পারি
পৌঁছে যেতে পারি—পাল তোলা ডিঙি নৌকোয় চড়ে
পদ্মে ভেজা দু'আজলা জল বুকের কপাট ছুঁইয়ে
উধাও হয়ে যেতে পারি স্বেচ্ছানির্বাসনে বা পথেপথে
রটিয়ে দিতে পারি ভুলে যাওয়া সে বিষণ্ণতার গল্প।

নদীর পাড়ে ফাঁদ পেতে বসে আছে কিছু গাঙচিল
সবুজ ঘাসের বুকে লেগে থাকে সময়ের অস্পষ্টচিহ্ন
যেন ঘরে ফেরার পথ হারানো পাখির শেষ আকুতি
এতটা বিষাদ থাকে না বিদ্রোহে—বিষণ্ণতার ক্যাসেটে।

আকাশে ভাসে কার্তিকের অখণ্ড গোলাকার চাঁদ
তাকে ফের আলিঙ্গন করছে একটি দুরারোগ্য ব্যাধিতে
আক্রান্ত রাত—কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসে বেঁচে থাকা সময়
কিংবা মধ্যরাতে বেজে ওঠা এলোমেলো ভায়োলিন।

নির্জীব নিষ্প্রভ সেই শাপলাগুলো হাতে জড়িয়ে
অনায়াসেই ফিরে আসতে পারি এই সন্ধ্যেবেলায়
আজন্ম বিভক্ত নির্বাক কোনো এক নদীর ন্যায়
আমার স্মৃতিময় গল্পগুলোও এসে এখানে মিশেছে।

বিষণ্ণতার অব্যর্থ মিছিল

সেদিন ঘোর অপরাহ্নে মৃদুশীতল বাতাসের দলে
আমিও ছিলাম যৌবন হারানো গঙ্গার সমব্যথী
তার ঢেউয়ে ঢেউয়ে শুধুমাত্র একটিই শব্দ ভাসে
মিছিল....মিছিল....এবং আবারও শুধুমাত্র মিছিল।

কি অসহ বেদনা !—কান ফুঁড়ে ছুঁয়েছে আমার বুক
ড্রয়িংরুমে টানা বেজে চলেছে তারবিহীন ল্যান্ডফোন
শ্রান্ত ডাকপিয়নের মত ছুটে চলছে দুয়ারে দুয়ারে
আমি বারংবার অগ্রাহ্য করছি সে অক্লান্ত আহ্বান।

সেদিন নষ্ট ফুলের ভ্রমর এসে বলল সেই কথা
প্রেমের ভেতর কতটা বিষাদ—এখন মৃত্যুঞ্জয়ী
গেরিলার দল শহরের অভিমুখে দাঁড়িয়ে রিক্ত হাতে
তাদের প্রত্যেকের বুকেই ফুঁটেছে গোলাপ রজনীগন্ধা।
এখন আমিও সেঅর্থাৎ আমি এবং আমরা একই
সাথে সেই মিছিলের উত্তাপে ভেসেছি অজানায়
আমরা গুটিকতক—তবু সহস্র জনতার স্রোত এসে
অন্তরে অন্তরে মিশেছে বিষণ্ণতার অব্যহত এই মিছিলে।

হেমন্ত

হেমন্ত একদিক ভ্রান্ত যাযাবর। স্বচ্ছ কুয়াশার
ফাঁকে সে হাঁটে সিন্ধু গ্রিক কিংবা ধ্বংসপ্রাপ্ত
মিশরীয় সভ্যতার বুকে। হেমন্ত আমার বাল্য
বন্ধুর নাম। তার বুকে আজ শুয়ে দুটি বুলেট।
রুক্ষ পাতা ঝরে পরে— তাদের সাথেই মিশে
যায় কিছু বছর মাস তথাগত অতীত।

অশ্বত্থ গাছে বাসা বাঁধে অচিন অতিথি পাখি।
তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন সভ্যতা হতে আগত।
সবার বুকে ভিন্ন তরঙ্গ বাজে—খেলে বেড়ায়
ভিন্ন বুনো শিষ। কেউ বুকের মধ্যে পুষে তীব্র
তুষার পাত—কিউবা অথবা সাইবেরিয়া।

হৈমন্তিকা ধ্বংসের নাম। এখান থেকে ফের
রাজতন্ত্রের উৎস । নগ্নপায়ে রাজ পথে হাঁটে
রাজবন্দীরা—দুটি বিশ্বযুদ্ধ আর ৫২ ও ৭১,
তাদের হাতে ঘটবে এ উন্নত নগরীর পতন।
নষ্ট এই সভ্যতা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।


(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জানুয়ারি ২৮,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

সাহিত্য এর সর্বশেষ খবর

সাহিত্য - এর সব খবর