thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৯ জানুয়ারি 25, ১৬ মাঘ ১৪৩১,  ২৯ রজব 1446

নাগরিকত্ব বিল ইস্যু

 বিজেপি নেতাকে মাটিতে ফেলে চড় থাপ্পড়

২০১৯ জানুয়ারি ৩১ ২০:৩৫:৫২
 বিজেপি নেতাকে মাটিতে ফেলে চড় থাপ্পড়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাংলাদেশে থেকে কথিত ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ভারতে চলে আসা হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ইস্যুতে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়েছে আসামের এক বিজেপি নেতাকে।

সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। আর ভিডিও দেখেই কয়েকজন হামলাকারীকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খোঁজ চলছে আরও কয়েকজনের।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতায় গোটা উত্তরপূর্বাঞ্চলেই বিক্ষোভ-হরতাল-প্রতিবাদ চলছে। আর গত কয়েকদিনের মধ্যে নাগরিকত্ব বিলকে কেন্দ্র করে এ নিয়ে অসমীয়া জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলির সঙ্গে বিজেপির এটি দ্বিতীয় সরাসরি সংঘাতের ঘটনা।

বুধবার তিনসুকিয়া জেলার বিজেপি সভাপতি লখেশ্বর মোরান যখন নাগরিকত্ব বিল কেন প্রয়োজনীয় - সেটা বোঝাতে এক সভায় হাজির হয়েছিলেন, তখনই বিলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন হাজার তিনেক মানুষ। কালো পতাকাও দেখানো হয়।

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে, হঠাৎ একদল বিক্ষোভকারী রীতিমতো ধাওয়া করা হয় ওই বিজেপি নেতাকে। কিল চড় চলতে থাকে। কেউ তার চুল টেনে দেয়, অন্য কেউ ধাক্কা দিতে থাকে।

এক পর্যায়ে তিনি মাটিতে পরে যান। তারপরে ঢিলও মারা হয়। প্রথমবার উঠে সরে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে আবারও পড়ে যান তিনি।

গোটা সময়টা বিক্ষোভকারীরা কালো পতাকা ধরে থাকেন মি. মোরানের সামনে, চলতে থাকে স্লোগান।

রক্তাক্ত অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

তিনসুকিয়ার পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট শিলাদিত্য চেতিয়া জানিয়েছেন, "ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা কয়েকজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। তিনজন ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছে।"

"আরও ৫-৬ জন ছিল ওই হামলায়। তাদের খোঁজে বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। আশা করছি সবাইকেই গ্রেপ্তার করা যাবে খুব তাড়াতাড়ি।"

ওই ঘটনার ব্যাপারে জানতে মি. মোরানো সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় নি।

কিন্তু দুদিন আগে আসাম বিজেপির প্রধান মুখপাত্র রাজদীপ রায় বিবিসিকে বলেছিলেন, "এই বিল নিয়ে আমাদের অবস্থান বিজেপির জন্মলগ্ন থেকেই খুব স্পষ্ট। অনুপ্রবেশকারী আর শরণার্থীদের মধ্যে ফারাক করা উচিত এটাই আমরা মনে করি।"

"যারা বিরোধিতা করছে, তারা অচিরেই বুঝতে পারবে বিষয়টা। আর যে কয়েকটি বিষয়ে নিয়ে আপত্তি রয়েছে, আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই সেগুলো মেটানো যাবে "

মি. রায় যদিও বলেছিলেন যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিরোধ মেটানো যাবে, তবে গত কয়েকদিনের মধ্যে অসমীয়া জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলির সঙ্গে বিজেপি নেতা কর্মীদের সরাসরি সংঘাত নিয়ে চিন্তিত অনেকেই।

"...এতদিন নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিরোধিতাটা যে 'গণতান্ত্রিক' ভাবে হচ্ছিল, এখন সংঘাতটা বাড়ছে। ধৈর্যের বাঁধ সম্ভবত ভাঙ্গছে অসমীয়া জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির। কোথাকার জল কোথায় গড়ায় সেটাই দেখার," বলছিলেন আসামের বাংলা দৈনিক যুগশঙ্খ কাগজের সম্পাদক অরিজিত আদিত্য।

তিনি আরও বলছিলেন, "নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদটা যে আর কথিত গণতান্ত্রিক পন্থায় থাকছে না, সেটা আসামের এই দুটি ঘটনায় যেমন স্পষ্ট হচ্ছে, তেমনই বুধবারই মনিপুরী ছাত্ররা দিল্লিতে সংসদের গেটের সামনে প্রায় পৌঁছিয়ে গিয়ে বিলের কপি পুড়িয়েছে।"

"কিছুদিন আগে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে দিল্লি প্রাণকেন্দ্র যন্তর-মন্তরে। উত্তরপূর্বের সব রাজ্যেই ক্ষোভটা ক্রমশ বাড়ছে।"

নাগরিকত্ব বিল নিয়ে অসমীয়া জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে বিজেপির সংঘাতের মধ্যে কি সেখানকার বাংলাভাষীরা কোনওভাবে সন্ত্রস্ত বোধ করছেন?

জানতে চাওয়া হয় সারা আসাম বাঙালী ছাত্র যুব ফেডারেশনের উপ সভাপতি মৃন্ময় দাসের কাছে।

"এখনও পর্যন্ত আমরা বাঙালীরা খুব একটা টেনশনে নেই। অসমীয়া জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গেই বিজেপির সংঘাত চলছে। আমরা নীরবই আছি।"

"কিন্তু একটা জায়গায় আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, যে হিন্দু বাঙালীদের নাগরিকত্ব দিতেই হবে। এর জন্য যতদূর যাওয়া দরকার যেতে আপত্তি নেই," বলছিলেন মৃন্ময় দাস।

সম্পাদক অরিজিত আদিত্য অবশ্য মনে করেন যে, হিন্দু বাঙালীরা নাগরিকত্ব ইস্যুতে একটা ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে।

"ভুলটা হিন্দু বাঙালীদেরই। আমাদের আবার নাগরিকত্ব পেতে হবে কেন? আমাদের ভারতের নাগরিকত্ব তো আছেই!"

তিনি বলেন, "বিলটা না বুঝেই দুহাত তুলে বিলের সমর্থনে দাঁড়িয়েছে হিন্দু বাঙালীরা। তার ফলে এখন সকলেই মনে করছে যে বাংলাভাষী হিন্দু মানেই বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী - সেজন্যই তারা নাগরিকত্ব বিলকে সমর্থন করছে। গোটা উত্তরপূর্বে হিন্দু বাঙালীরা এখন গণশত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে।"

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জানুয়ারি ৩১,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর