thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২০ জানুয়ারি 25, ৭ মাঘ ১৪৩১,  ২০ রজব 1446

উপজেলার এক-চতুর্থাংশ  বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত

২০১৯ এপ্রিল ০২ ০০:২০:৪০
উপজেলার এক-চতুর্থাংশ  বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪৪০টি উপজেলার মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা ২৮৮টিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১০৮ জন নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। যা মোট ভোট অনুষ্ঠিত উপজেলার এক-চতুর্থাংশ (২৪.৫৫%)। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ১৩১টি উপজেলার চেয়ারম্যান পদে।

ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে প্রায় ৩০ শতাংশ উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। অন্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ৩টি ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে আরও কয়েকটি ছোট দল অংশ নিলেও তাদের কোনও প্রার্থী নির্বাচিত হননি। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার মিত্ররা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তবে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হওয়া কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জয় পেয়েছেন।

নির্বাচন কমিশন ৪ ধাপে দেশের ৪৬৫টি উপজেলায় নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করলেও ভোট হয়েছে ৪১৮টিতে। একক প্রার্থী থাকায় ৩০টি উপজেলায় ভোটের প্রয়োজন পড়েনি। বাকি ১৭ উপজেলার ভোট স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে ১০টি আদালতের আদেশে এবং ৭টি ইসির আদেশে স্থগিত হয়েছে। এদিকে বাঘাইছড়িতে সন্ত্রাসী ঘটনার কারণে রাঙ্গামাটি জেলার ৮টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হলেও তার ফল এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

এবারের উপজেলা নির্বাচন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অতীতের তুলনায় এবারের ভোট কম অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। দলীয় ভিত্তিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই ভোটে দলগুলোও কম অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়া দেখা গেছে এবারের নির্বাচনে অন্যান্যবারের তুলনায় একক প্রার্থী বেশি ছিল। এতে চেয়ারম্যান পদে ১০৮ জন ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫০ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৯ বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। আরও লক্ষ করা গেছে যে নির্বাচনের প্রতিটি ধাপে ক্রমান্বয়ে সব পদে একক প্রার্থী থাকার বিষয়টি বেড়ে চলেছে। এতে প্রথম ধাপে ৩টি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে ৬টি করে এবং চতুর্থ ধাপে ১৫টি উপজেলায় একক প্রার্থী থাকায় ভোট গ্রহণের প্রয়োজন পড়েনি।
নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে গত ১০ মার্চ প্রথম দফায় ৭৮টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই দফায় ৩টি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এই তিনটি পদেই একক প্রার্থী থাকায় সেখানে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়েনি। সব পদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ৩টি উপজেলাসহ মোট ৮১টি উপজেলার মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫৮টিতে জয়লাভ করে। এর মধ্যে দলটির ১৫ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিনাভোটে। বাকি ২৩টি উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। এই স্বতন্ত্রদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এ দফায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। প্রথম ধাপের ৭৮ উপজেলায় ভোট পড়ে গড়ে ৪৩ দশমিক ৩২ শতাংশ।

গত ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা ভোটে ২৩টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাসহ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ৭৪টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। এ দফায় জাতীয় পার্টি (এরশাদ) দুটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩৮টিতে জয়ী হয়েছেন। রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে সন্ত্রাসীদের হামলায় ৭ নির্বাচনি কর্মকর্তা নিহতের ঘটনার জের ধরে ওই জেলার ৮টি উপজেলার ফলাফল এখনও প্রকাশ হয়নি। দ্বিতীয় ধাপে ভোটগ্রহণের জন্য ১২৯টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা হলেও ভোট হয়েছিল ১১৬টিতে। তফসিল ঘোষিত অন্য উপজেলাগুলোর মধ্যে ৬টিতে সবগুলো পদের প্রার্থীরা বিনাভোটে জয়ী হওয়ায় সেখানে ভোটগ্রহণের দরকার হয়নি। এছাড়া অন্যগুলোর মধ্যে ৬টি অন্য ধাপে স্থানান্তর ও একটি আদালতের আদেশে স্থগিত হয়। নির্বাচন কমিশনের দাবি অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে ভোট পড়ে ৪১ দশমিক ২৫ শতাংশ। যদিও উপজেলাগুলোর বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্র ফাঁকাই দেখা গেছে। এ ধাপে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১২ জন বিনাভোটে জয়ী হন।

গত ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ১২২টির মধ্যে আওয়ামী লীগ ৮৩টিতে জয়ী হয়। এর মধ্যে ৩১টির চেয়ারম্যান পদে দলের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। এছাড়া জাতীয় পার্টি একটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩৮টিতে জয়ী হয়। নির্বাচনে অনিয়মের কারণে একটি উপজেলার সবগুলো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। তৃতীয় ধাপে বিনাভোটে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন নির্বাচিত হন। এতে ১১৬ উপজেলায় ভোট পড়ে গড়ে ৪১ দশমিক ৪১ শতাংশ।

সর্বশেষ রবিবার অনুষ্ঠিত হয় ১০৭টি উপজেলার ভোট। এছাড়া ১৫টি উপজেলার সবগুলো পদের প্রার্থীরা বিনাভোটে বিজয় হওয়ায় সেগুলোতে ভোটের দরকার হয়নি। এ ধাপের বিনাভোটের ১৫ উপজেলাসহ ১২২টির মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাসহ ৭৩টি, জাতীয় পার্টি (জেপি)-১টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩২টিতে জয়ী হয়। তৃতীয় ধাপের মতো এ ধাপেরও একটি উপজেলার ভোট স্থগিত হয়েছে। আর তিনটি উপজেলায় কয়েকটি কেন্দ্র স্থগিত থাকায় সেগুলোর ফল ঘোষণা করা হয়নি। এ ধাপে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৭ জন বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের তুলনায় এবার অনেক কম ভোট পড়েছে। তখন ছয় ধাপে উপজেলা নির্বাচন হয়। সেই সময়ে প্রথম ধাপে ৬২ দশমিক ৪৪ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৬৩ দশমিক ৩১ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৬৩ দশমিক ৫২ শতাংশ, চতুর্থ ধাপে ৫৬ দশমিক ১২ শতাংশ, পঞ্চম ধাপে ৬০ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং ষষ্ঠ ধাপে ৫৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ ভোট পড়ে। ১০ বছর আগে ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি তৃতীয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট পড়ে ৬৮ দশমিক ৩২ শতাংশ।
দ্য রিপোর্ট/টিআইএম/০২-০৪-১৯

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর