thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি 25, ১৭ মাঘ ১৪৩১,  ১ শাবান 1446

বিপদে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন: নাসার শঙ্কা, ভারতের অস্বীকার

২০১৯ এপ্রিল ০২ ২১:১৮:১১
বিপদে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন: নাসার শঙ্কা, ভারতের অস্বীকার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ভারতের সাম্প্রতিক অ্যান্টি-স্যাটেলাইট টেস্ট বা স্যাটেলাইট ধ্বংস পরীক্ষা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনকেও বিপদের মুখে ফেলতে পারে, নাসা প্রকাশ্যে এই অভিযোগ করার পর ভারত এদিন তা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে। খবর বিবিসি বাংলার।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র প্রধান সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, গত সপ্তাহে ভারতের ওই পরীক্ষার জেরে মহাকাশে চারশোরও বেশি 'স্পেস ডেব্রি' , অর্থাৎ ধ্বংস হওয়া স্যাটেলাইটের বিপজ্জনক টুকরো তৈরি হয়েছে।

ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা কিন্তু দাবি করছেন, লো অরবিটে তৈরি হওয়া ওই সব ডেব্রি খুব দ্রুতই পৃথিবীতে নেমে আসবে বা বিলীন হয়ে যাবে - ফলে তা থেকে বড় কোনও বিপদের আশঙ্কা নেই।

গত বুধবার ভারত যখন সফলভাবে মহাকাশে স্যাটেলাইট ধ্বংস করার কথা ঘোষণা করেছিল, তখন তাদের এটাও জানা ছিল যে এই পরীক্ষার ফলে যে সব স্পেস ডেব্রি তৈরি হবে তার জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে সমালোচনারও সম্মুখীন হতে হবে।

কিন্তু মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র প্রধান জিম ব্রাইডেনস্টাইন যেরকম কঠোর ভঙ্গীতে এর বিপদের দিকটি তুলে ধরেছেন অতটা ভারতও কিন্তু আশা করেনি।

নাসার প্রধান জানিয়েছেন, "ভারতের চালানো ওই একটা টেস্ট থেকে তৈরি হওয়া চারশোরও বেশি ডেব্রি আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি"।

যার অন্তত ষাটটা ডেব্রি আমরা ট্র্যাক করতে পারছি, আর তার মধ্যে থেকে অন্তত চব্বিশটা তো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের কক্ষপথেরও ওপরে চলে গেছে।

এটা একটা 'টেরিবল, টেরিবল থিং' - মানে সাঙ্ঘাতিক বিপজ্জনক ঘটনা। স্পেস স্টেশনে মহাকাশচারীরা এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ নিরাপদ আছেন ঠিকই - তবে দশ দিনের ভেতর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কোনও ডেব্রি আঘাত করতে পারে, সেই ঝুঁকি এখন অন্তত ৪৪ শতাংশ বেড়ে গেছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও-র প্রধান ড: জি সতীশ রেড্ডি বলেছেন নাসার এই মূল্যায়নের সঙ্গে তারা মোটেও একমত নন।

ড: রেড্ডি বলছেন, "অ্যান্টি-স্যাটেলাইট টেস্টের জন্য আমরা কিন্তু ইচ্ছে করেই লো অরবিট বা কম উচ্চতার নিশানা বেছে নিয়েছিলাম - কারণ একটি দায়িত্ববান রাষ্ট্র হিসেবে মহাকাশের বিভিন্ন অ্যাসেট যাতে অক্ষত থাকে, নিরাপদ থাকে সেটা দেখাও আমাদের দায়িত্ব ছিল।"

"আর তা ছাড়া যেটুকু ডেব্রি তৈরি হয়েছে সেটাও খুব দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে, আমরাও ঠিক সেটাই চেয়েছিলাম"।

ওই পরীক্ষার দিনই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে বিবৃতি দিয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল, এমনভাবে লোয়ার অ্যাটমসফিয়ারে ওই পরীক্ষা চালানো হয়েছে যাতে কোনও ডেব্রি-ই না তৈরি হয়। হলেও সেগুলো মাত্র কয়েক সপ্তাহের ভেতর পৃথিবীর বুকে চলে আসবে বলেও দাবি করা হয়েছিল।

দিল্লিতে সিনিয়র কূটনৈতিক সংবাদদাতা দেবীরূপা মিত্রও বলছিলেন, সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল বড়জোর পঁয়তাল্লিশ দিনের ভেতর ডেব্রি-র সমস্যা মিটে যাবে। ভারতের একটা বড় ভরসা ছিল, বারো বছর আগে চীন যে একই ধরনের পরীক্ষা করেছিল তার হাজার কয়েক ডেব্রি এখনো মহাকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। সেই জায়গায় ভারতের সামান্য কিছু ডেব্রি লো অরবিটেই সীমাবদ্ধ থাকবে, এমনটাই বলার চেষ্টা হয়েছিল।

"কিন্তু এখন নাসার বক্তব্য থেকে মনে হচ্ছে বিপদের ঝুঁকি অতটা তুচ্ছ নয় - আর তাই ভারতকে এখন এই ডেব্রি-জনিত আক্রমণটা সামলাতে হচ্ছে"।

ভারতে ডিআরডিও-র সাবেক প্রধান ও বর্তমানে নীতি আয়োগের সদস্য ভি কে সারস্বতও জানাচ্ছেন, ২০১২তেও ভারতের এই ধরনের অ্যান্টি-স্যাটেলাইট পরীক্ষা করার সামর্থ্য ছিল। তবে মহাকাশে ডেব্রি যাতে কম হয়, সে জন্য তারা প্রথমে ইলেকট্রনিক সিমুলেশন ও তা সফল হলে পরে আসল স্যাটেলাইট নিশানা করার কথা বলেছিলেন।

গত সপ্তাহের সফল টেস্টে ডেব্রি যাতে যথাসম্ভব কম হয়, ভারতের বক্তব্য তার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নাসার পর্যবেক্ষণ বলছে, সে চেষ্টা সফল হয়নি এবং ভারতের পদক্ষেপ মহাকাশকে নতুন করে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/এপ্রিল ০২,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর