thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ১৯ জানুয়ারি 25, ৫ মাঘ ১৪৩১,  ১৯ রজব 1446

রাজউকের অভিযানে আতঙ্কিত ভবন মালিকেরা

২০১৯ এপ্রিল ০৩ ১৩:১৬:৩৮
রাজউকের অভিযানে আতঙ্কিত ভবন মালিকেরা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজধানী ঢাকায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে সব সেবা সংস্থাই। এতে চকবাজারের চুড়িহাট্টার পর অভিজাত এলাকা বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে।

আত্মরক্ষার্থে বহুতল ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে মানুষের করুণ মৃত্যু শিহরিত করেছে সবাইকে। বনানীর পর গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটের আগুনে কোটি কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে যায়। অল্পদিনের ব্যবধানে এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কিত রাজধানীবাসী।

রাজধানীতে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবনের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। একইসঙ্গে যেসব বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ সুবিধা বা সরঞ্জাম নেই সেগুলোর বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে।

গত সোমবার শুরু হয় এ অভিযান। আর এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন রাজধানীর ভবন মালিকরা। কারণ রাজধানীর অধিকাংশ ভবন বিল্ডিং কোড, নিয়ম, নকশা না মেনে নির্মাণ করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের জরিপ অনুযায়ী, রাজধানীর ৯০ শতাংশ ভবনে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা নেই। অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ, কম ঝুঁকিপূর্ণ- এ তিন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে ভবন মালিকদের অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেয়ার জোর তাগিদও দেয়া হয়েছিল ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে।

তবে সে তাগিদ বরাবরই উপেক্ষা করে আসছে ভবন মালিকরা। এবার রাজধানীর বিভিন্ন উচ্চ ভবনের সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখতে অভিযানে নেমেছে রাজউক।

রাজউকের ৮টি জোনের অধীনে ২৪টি টিম (অথোরাইজড অফিসার, সহকারী অথোরাইজড অফিসার, প্রধান ইমারত পরিদর্শক, ইমারত পরিদর্শকের সমন্বয়ে) ১০ তলার বেশি বহুতল ভবনগুলোর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। রাজউকের এ অভিযান আগামী ১৫ দিন চলবে বলে জানা গেছে।

রাজউকের এ অভিযানে আতঙ্কিত হয়ে পড়া ভবন মালিকেরা মনে করছেন, যেহেতু সব ধরনের নিয়ম মেনে ভবন তৈরি করেননি সেহেতু রাজউকের অভিযানে তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভবনের অংশবিশেষও অপসারণ করা লাগতে পারে। পাশাপাশি ভবনে নানা সুবিধা বাস্তবায়ন করতে আর্থিক ব্যয় বাড়ারও আশঙ্কায় রয়েছেন।

গত ২৮ মার্চ বনানীর ১৭ নম্বর সড়কে এফআর টাওয়ারে আগ্নিকাণ্ডের পর জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য এফআর টাওয়ারের নকশা রাজউক থেকে অনুমোদন করা হয়। এরপর সেখানে নির্মাণ করা হয় ২৩ তলা।

রাউজকের অনুমোদিত নকশা থেকে এ ভবনের নকশায় আরও অনেক বিচ্যুতি ঘটেছে। এফআর টাওয়ারের মালিকপক্ষ ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজউকের কাছে আরেকটি নকশা পেশ করে, যার সঙ্গে রাজউকে সংরক্ষিত নকশার কোনো মিল নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বনানীতে অবস্থিত একটি বাণিজ্যিক ভবনের মালিকদের একজন বলেন, রাজধানীর বেশির ভাগ ভবন বিল্ডিং কোড মানে না। এর দায় রাজউকের, কারণ কিছু অসাধু কর্মকর্তা এসবের সঙ্গে জড়িত।

বিভিন্ন কূটকৌশলে ভবন মালিকরা নকশার সঙ্গে ভবনের মিল রাখেন না। এফআর টাওয়ারের মতো রাজধানীতে অনেক বহুতল ভবন রয়েছে নকশার সঙ্গে যেগুলোর মিল নেই, বিল্ডিং কোড মানা হয়নি।

বেশিরভাগ ভবনেই নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। এরমধ্যে রাজউকের এমন অভিযানে ভবন মালিকরা আতিঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কারণ রাজউক সঠিকভাবে অভিযান পরিচালনা করলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এ ব্যাপারে রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, আমরা পেছনে যেতে চাই না। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করার তাই করা হবে। আর কোনো ছাড় নয়। যারা আইন মানছেন না তাদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে। আমরা অভিযান শুরু করেছি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে রাজধানীতে ১৯৯৬ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী যেসব বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে শুধু সেসব ভবনের বিরুদ্ধেই অভিযান চলবে।

ভবনগুলোতে আগুন নেভানোর নিজস্ব ব্যবস্থা কেমন, মূল সিঁড়ির পাশাপাশি জরুরি বিকল্প সিঁড়ি আছে কি-না, পাম্পের কী অবস্থা, লিফট-ফায়ার লিফট, জেনারেটর কক্ষ ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ আছে কি-না এসব বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেয়া হবে।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, কোনো ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে সে বিষয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য ‘অভিযোগ বক্স’ চালু করতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। পাশাপাশি ফোন ও হোয়াটস অ্যাপ নম্বরও থাকবে।

এসব মাধ্যমে যারা অভিযোগ জানাবেন তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে। যারা ভবনের সমস্যা জানাবেন তাদের পরিচয়ও গোপন রাখা হবে। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কাজ করে সবাইকে নিয়ে নিরাপদ ঢাকা গড়ে তুলব।

প্রতিটি আঞ্চলিক অফিসে অভিযোগ বক্স খোলা হবে। একটি ফোন নম্বর চালু করব। সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপ সংযোগ থাকবে। আমরা একটি নগর অ্যাপ চালু করার জন্যও কাজ করছি।

এ দৌড়ঝাঁপে ভবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে যাবে-এমন ভয়ে আছেন ভবন মালিকরা। একদিকে রাজউকের অভিযান অন্যদিকে ডিএনসিসির উদ্যোগে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/এপ্রিল ০৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর