thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

রমজান প্রতিদিন

মানব জীবনের সার্থকতা

২০১৯ মে ১৬ ০৮:৪৪:১৮
মানব জীবনের সার্থকতা

এ.কে.এম মহিউদ্দীন

আজ ১০ রমজান । তিনটি দশকে বিভক্ত রমজান। প্রথম দশক রহমতের বরিষায় সিক্ত হবার জন্য নির্ধারিত। সেই ক্ষণ গণনা শেষ হচ্ছে আজ । মানুষের নিজের কাছে নিজের একান্তে যে নিবেদন থাকে তা হলো এই-সে তার মনকে সুপথে পরিচালিত করতে চায়। তাই উচ্চ অথবা অনুচ্চস্বরে ধ্বনিত হয় হৃদয়ের মণিকোঠায় ‘সত্য বল সুপথে চল, ওরে আমার মন।’ মন বা অন্তর যখন অলস থাকে তখন সেটা শয়তানের কারখানায় রূপান্তর হয়। সে কারণে মনটাকে কাজের মধ্যে নিবেদিত করতে হয়। মূলত অন্তরটাকে মহামহিম প্রভুর দিকে ধাবিত করার মধ্যে মানবজীবনের সার্থকতা।

শরীরের রোজা হচ্ছে অন্তরের রোজা। শুধু তাই নয়, যে কোন ইবাদতে অন্তরের স্থান সবার শীর্ষে। আল্লাহ ঘোষণা করেন,‘ যে আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে হেদায়াত করেন।’ রোজার জন্য মন মানসিকতা, চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা এবং প্রবৃত্তিকে পবিত্র ও কলুষমুক্ত হতে হবে। সৎ নিয়ত, সৎ চিন্তা, পরিকল্পনা, একনিষ্ঠতা কিংবা এখলাস হচ্ছে অন্তরের মূল কথা। তাই রাসূল [সা.] ইরশাদ করেন, সকল আমলের মূল ভিত্তি হচ্ছে নিয়ত। অন্যত্র তিনি আরও বলেন, সাবধান, দেহের মধ্যে এক টুকরো গোশত এমন আছে যা ঠিক ও পরিশুদ্ধ হলে, গোটা দেহ ঠিক ও পরিশুদ্ধ থাকে এবং তা খারাপ হলে, গোটা দেহ খারাপ হয়ে যায়। সাবধান! সেটি হচ্ছে অন্তর। [বুখারি ও মুসলিম।]

মন বা অন্তর দুই রকমের হয়ে থাকে। এক ধরনের অন্তর হচ্ছে ঈমানের বারিতে সিক্ত ও খোদা প্রেমে পূর্ণ। তা দ্বীন ও ঈমানের প্রতি ভালবাসা এবং আল্লাহ্‌র প্রতি যাবতীয় ত্যাগ তিতিক্ষার জন্য নিবেদিত। সেই মন খোদা ও তাঁর রাসূলের আদেশ নিষেধ পালনের ক্ষেত্রে সদা প্রস্তুত থাকে এবং বাতিল ও ইসলাম বিদ্বেষী কাজের প্রতি তার থাকে প্রচণ্ড ঘৃণা ও দ্রোহের মনোভাব। আরেক ধরনের অন্তর হচ্ছে-মৃত ও ব্যধিগ্রস্ত। তাকে পাপী অন্তরও বলা যায়। এ অন্তরের প্রধান কাজ হলো, দ্বীন ও ঈমান এবং নেক আমল পালনের ক্ষেত্রে অনীহা, অনাগ্রহ ও ইসলাম বিদ্বেষী কাজে উৎসাহ বোধ করা। শেষোক্ত ধরনের অন্তর প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যধি এবং আল্লাহ সেই ব্যধি আরো বৃদ্ধি করে দেন। তিনি আরও বলেন, তারা কি কোরআনকে নিয়ে চিন্তা গবেষণা করে না, নাকি তাদের অন্তরে তালা ঝুলানো।-[সুরা মোহাম্মদ:২৪]

সেজন্য রাসূল [সা.] অধিকাংশ সময় অধিক হারে এ দোয়া পাঠ করতেন, ‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী। আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত করে দাও।’ এত কিছুর পর প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে অন্তরের রোজা বলতে কী বুঝায় ? অন্তরের রোজা বলতে বোঝাবে অন্তরকে শিরক থেকে মুক্ত, বাতিল আকিদা বিশ্বাস থেকে দূরে এবং খারাপ ও নিকৃষ্ট কুমন্ত্রণা-মনোভাব ও নিয়ত থেকে খালি রাখতে হবে। মনকে গর্ব অহংকার থেকে দূরে, হিংসা-বিদ্বেষ ও লৌকিকতার মনোবৃত্তি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। কেননা, তা নেক আমলকে ধবংস করে ও জ্বালিয়ে দেয়। তখন পাপ কাজের প্রতি কোন আগ্রহ উদ্দীপনা থাকে না।

মনকে এ জাতীয় খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখলেই অন্তরের রোজা পালিত হয়। তখন রোজাদারের মন খোদাপ্রেমে পূর্ণ থাকে এবং তাকে তাঁকে তাঁর নাম ও গুণাবলিসহ স্মরণ করতে থাকে। অন্তর সর্বদা মহামহিম প্রভুর সৃষ্ট জগত ও বিচিত্র কুদরত প্রসঙ্গে ধ্যানে থাকে এবং মন্দ ও খারাপ কাজের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে।

ঈমানদার ব্যক্তির অন্তরে ঈমানের রোশনি বা আলো থাকে। এর সাথে অন্ধকারসহ অবস্থান করতে পারে না। ঈমানি নূর বা আলো বলতে বুঝায়, চিরন্তন পয়গাম, আসমানি শিক্ষা ও খোদার আইনের আলোকবর্তিকা। ওই নূরের সাথে খোদার তৈরি ফিতরাত বা স্বভাব-প্রকৃতির নূরও মিলিত হয়। তখন দুই নূর এক সাথে হয়। এ কথাই কোরআনে ঘোষিত হয়েছে এভাবে , নূরের উপরে নূর, খোদা যাকে চান তাকে নিজ নূরের দিকে হেদায়াত দান করেন।’[সুরা-নূর:৩৫]

সিয়াম বা রোজা পালনে অন্তর খোদা প্রেমের আবাদ হয়। তখন তা বৈদ্যুতিক বাতির মতো মিটমিট করে জ্বলতে আরম্ভ করে। দিনে তা সূর্যের মতো আলো দেয় এবং ভোর রাতে সোবহে সাদিকের লালিমার মতো জ্বলতে থাকে। অন্তরকে হিংসা বিদ্বেষ, ঘৃণা ও ধোকাবাজি থেকে দূরে রাখতে পারলে জান্নাতে যাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত হবে।

নবী করিম [সা.] তিনবার একজন সাহাবির জান্নাতি হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন। অন্য একজন সাহাবি ওই সাহাবিকে অনুসরণ করতে থাকেন। তাঁর মধ্যে বিশেষ কোন আমল আছে কি না জানতে। একদা তিনি এক প্রকার অজুহাত খাড়া করে ওই সাহাবির ঘরে রাত্রি যাপন করেন। কিন্তু অনবরত অনুসরণ করা সত্ত্বেও তার মধ্যে বিশেষ কোন আমল দেখতে না পেয়ে তার ব্যাপারে রাসূলের সুসংবাদ প্রসঙ্গে জানতে চান। তখন তিনি উত্তরে বলেন, আমি যখন নিদ্রা যাই তখন আমার অন্তর কোন মুসলমানের বিরুদ্ধে হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা কিংবা ধোকাবাজি ও শঠতা থেকে মুক্ত থাকে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, হাদিসে হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা ও শঠতা থেকে অন্তর মুক্ত রাখার কাজকে জান্নাতে যাওয়ার পন্থা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অন্তরের রোজার এটাও একটা বিশেষ উদ্দেশ্য। আসুন খোদার কাছে এই মোনাজাত করি তিনি আমাদের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমাদের অন্তরকে পূত:পবিত্র ও নিষ্কলুষ করে দিক। আমিন।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/মে ১৬,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

ধর্ম এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম - এর সব খবর