thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মে 24, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ৯ জিলকদ  1445

রিকশা ও যানজট দুই-ই কমেছে

২০১৯ জুলাই ০৮ ২১:৪২:৫৫
রিকশা ও যানজট দুই-ই কমেছে

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাজধানীর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিকশা চলাচল উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এ তিনটি সড়কে কমেছে যানজটের তীব্রতাও।

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ঘোষণা অনুযায়ী রোববার গাবতলী থেকে আজিমপুর (মিরপুর রোড), সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগ ও কুড়িল থেকে খিলগাঁও হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত- এ তিন সড়কে রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। রাজধানীতে যানজট কমানোর অংশ হিসেবে এ তিন সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করা হল।

এ উদ্যোগে খুশি পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। নগরবাসীর মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তারা বলেছেন, সড়কগুলোতে উন্নতমানের গণপরিবহন বাড়াতে হবে। নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ব্যক্তিগত গাড়ি। তবে এ সিদ্ধান্তে রিকশা চালকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, গাবতলী থেকে আজিমপুর এবং কুড়িল থেকে খিলগাঁও হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধে সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়।

সড়কগুলোতে বাড়তি পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। মূল সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত অলি-গলির মুখে আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারাই এ তিন সড়কে রিকশা উঠতে দেননি। তবে ওই দুই সড়কের তুলনায় কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগ সড়ক। এ সড়কে তুলনামূলক রিকশা চলাচল বেশি ছিল। আরও দেখা গেছে, এ তিন মূল সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত ভেতরের গলিগুলোতে রিকশা চলাচল করেছে। বিভিন্ন গন্তব্য থেকে প্রধান সড়কের মুখে যাত্রী নামাতে দেখা গেছে রিকশা চালকদের।

তিনটি প্রধান সড়কে রিকশা না থাকায় বিপাকে পড়েন অনেক যাত্রীরা। প্রতিটি লোকাল বাসেও দেখা গেছে অতিরিক্ত ভিড়। রিকশা না পেয়ে গণপরিবহনের জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের। বাসগুলো ছিল যাত্রীতে ঠাসা। এমন অবস্থায় যাত্রীদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, রিকশা বন্ধের আগে গণপরিবহন বাড়ানো দরকার। তবে রাস্তায় যানজট কমে যাওয়ায় অনেক যাত্রী সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন।

রাজধানীর শ্যামলী থেকে আসাদ গেট যাওয়ার যাত্রী রোকসানা আক্তার বলেন, রিকশা চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হওয়ায় সড়ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। নগরীকে সুন্দর মনে হচ্ছে। তবে গাড়ি না বাড়ায় যাত্রীদের কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। যাত্রী চাপে গাড়িতে উঠা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, সকালে অনেক শিক্ষার্থী রিকশায় যাতায়াত করত। তারা বাস না পেলে তাদের পরিবার ব্যক্তিগত গাড়ির দিকে ঝুঁকবে। ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়লে সেই যানজটও বাড়বে। রিকশা বন্ধের সুফল পাওয়া যাবে না। সরেজমিন রাজধানীর গাবতলী থেকে আসাদ গেট পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কে রিকশা নেই বললেই চলে।

মাঝেমধ্যে পুলিশ ও আনসারকে ফাঁকি দিয়ে দু-একটি রিকশা প্রধান সড়কে এলেও তারা দ্রুত সটকে পড়ছে। এ সড়কে আগের তুলনায় যানজট কম ছিল। আসাদ গেট, কলেজ গেট, শ্যামলী, কল্যাণপুর ও টেকনিক্যাল মোড়ে আনসার সদস্য দেখা গেছে। তারা সংযোগ সড়কগুলোর মুখে অবস্থান করে রিকশাকে প্রধান সড়কে উঠতে বাধা দিয়েছেন।

সাভার থেকে মতিঝিল চলাচলকারী ওয়েলকাম পরিবহনের চালক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ঢাকার আতঙ্ক রিকশা। সড়কের অনেক অংশজুড়ে ছিল রিকশা। হঠাৎ করেই রিকশা মাঝ রাস্তায় চলে আসত, এলোমেলো চলত। এতে বাসের গতি কমে যেত। অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাও ঘটত। কিন্তু রিকশা চলাচল বন্ধ হওয়ায় গাড়ির গতি বেড়েছে। রাস্তাও ফাঁকা। যাত্রীরা দ্রুত গন্তব্যে যেতে পারায় তারাও খুশি, আমরাও খুশি।

সরেজমিন রাজধানীর মালিবাগ মোড়, রেলগেট, রামপুরা, বাড্ডা, নতুনবাজার, কালাচাঁদপুর এবং কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মূল সড়কে রিকশা নেই বললেই চলে। এতে করে যাত্রীরাও ব্যাপক চাপে পড়েছেন। অনেক যাত্রীকে লোকাল বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

দুপুরে রামপুরা টিভি সেন্টারের দক্ষিণ পাশের গলির মুখে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রিকশাচালকরা ভিড় করেন। তারা মূল সড়কে প্রবেশ করছেন না। আনোয়ার হোসেন নামে এক রিকশাচালক বলেন, মূল সড়কে রিকশা চলবে না এমন সিদ্ধান্তের কারণে তারা বিপাকে পড়েছেন। আগে রামপুরা থেকে মালিবাগ, শাহজাহানপুর, এমনকি মতিঝিল পর্যন্ত যাত্রীদের নিয়ে যেতেন। এখন শুধু বনশ্রী প্রজেক্টের ভেতরে রিকশা চালাতে হচ্ছে। মূল সড়কে রিকশা চলতে না পারার কারণে সব রিকশাই এখন গলি দিয়ে চলতে হচ্ছে। এতে করে যাত্রীর চাপ কমে গেছে। মালিবাগ থেকে কুড়িল চৌরাস্তা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় দু’একটি রিকশা চলাচল করলেও কালাচাঁদপুরের চিত্র ছিল কিছুটা ভিন্ন। কালাচাঁদপুর থেকে বসুন্ধরা গেট পর্যন্ত অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে।

কালাচাঁদপুর এলাকার মূল সড়ক থেকে গলির মুখেও রিকশাচালকদের ভিড় দেখা গেছে। গলির মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মো. রফিক নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘সরকারের এমন সিদ্ধান্তে আমাদের পেটে লাথি পড়েছে। মূল সড়কে যেতে আমরা ভয় পাচ্ছি। তারপরও যাত্রী পেলে বসুন্ধরা গেট পর্যন্ত যাচ্ছি। তবে অন্য এলাকায় যেতে পারছি না।’

এদিকে কুড়িল চৌরাস্তা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো ধরনের যানজট নেই। রিকশা চলাচলের কারণে চৌরাস্তায় সবসময় যানজট লেগেই থাকত। অথচ রোববারের চিত্র ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। চৌরাস্তা এলাকার মূল সড়কে নেই কোনো রিকশা। নির্বিঘেœ চলছে যানবাহন। সড়কের এমন চিত্র দেখে পথচারীদের অনেকেই বলছেন, মূল সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তাই স্থায়ীভাবে যেন মূল সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।

আরও দেখা গেছে, শাহবাগ মোড়, আজিজ সুপার মার্কেট, কাঁটাবন এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় রিকশা চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে আগের চেয়ে অনেক কম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বলেন, মায়া লাগে, কিছু চালককে নিষেধ করেছিলাম। কিছুটা দূরে গিয়ে চালকগুলো এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।

শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে জটলা বেঁধে রিকশা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। যাত্রী পেলেই বীরদর্পে শাহবাগ-সায়েন্সল্যাব সড়কে উঠছিল। এ ক্ষেত্রে কোনো কোনো চালক ভয়-ভীতির কারণে যেতে না চাইলেও যাত্রীরা তাদের সাহস দিচ্ছিল। বলছিল, আরে মিয়া চলেন রাস্তায় কেউ নেই। বৃষ্টির মধ্যেও কি কেউ তোমাদের বাধা দেবে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জুলাই ০৮,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর