thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি 25, ৩০ মাঘ ১৪৩১,  ১৩ শাবান 1446

আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার অপেক্ষায় স্বজনরা

২০১৯ জুলাই ২৯ ১১:৩৬:৫৫
আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার অপেক্ষায় স্বজনরা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: গত বছরের একটি সড়ক দুর্ঘটনা সমাজের প্রতিটি স্তরকে জাগিয়ে দিলেও অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। সড়কে ফেরেনি শৃঙ্খলা। রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া ও রাজীবের মৃত্যুর এক বছর পেরিয়ে গেছে। যাদের মৃত্যুতে রাস্তায় নেমে ছিল তাদের সহপাঠিসহ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সড়কের সেই চিরাচরিত দৃশ্য বদলায়নি। বেপরোয়া বা বিশৃঙ্খল চলাচল কোনোটাই বন্ধ হয়নি, অরাজকতা চলছেই।

সে সময়ে শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিয়েছিল যে ইচ্ছে থাকলেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হতে পারে। সেই ঘটনার পর নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ। ফিটনেসবিহীন গাড়ী ও অদক্ষ চালকদের কারণে যে সড়কে নিরাপদভাবে চলাচল পারছে না কেউ তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় তারা। ট্রাফিক আইন মানার প্রবণতা কারো মাঝেই নেই। ফিটনেসবিহীন গাড়ী ও অদক্ষ চালকরা সড়ক দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর একারণেই ঝরছে সড়কে তাজা প্রাণ।

দিয়া ও রাজিবের মৃত্যুর পর সরব ছিল প্রায় সব গনমাধ্যম। তখন সব মহল থেকেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তাগিদ দেয়া হয়। দুই পরিবারকে বিভিন্ন মহল থেকে আর্থিক অনুদান দিলেও দায়ীদের এখনো সাজা হয়নি।

সেদিনের ঘটনার পর রাতেই রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলম মামলা দায়ের করেন। এরপর ডিবি পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে। মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে বিচারাধীন। তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উত্তর ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক কাজী শরীফুল ইসলামকে জেরা করছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আগামী ২২ আগষ্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষে আত্মপক্ষ শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করবেন আদালত। সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ মামলার বিচারকাজ শেষ হওয়ার প্রত্যাশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটিতে সর্বশেষ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার জেরা চলছে। মামলাটির বিচারকাজ এগিয়ে চলছে। রাষ্ট্রপক্ষ সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে এবং করছে যেন মামলাটির বিচারকাজ দ্রুত শেষ হয়। ভূক্তভোগীরা যেন ন্যায়বিচার পায়। যেভাবে বিচারকাজ এগিয়ে চলছে তাতে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে মামলাটির বিচারকাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি। আর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যে সব সাক্ষীদের হাজির করা হয়েছে এর মাধ্যমে আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবো। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী টিএম আসাদুল সুমন বলেন, মামলাটিতে অনেক ত্রুটি আছে। আসামিরা নির্দোষ। মামলাটি খালাস পাওয়ার মত, আমি মনে করি আসামিরা খালাস পাবে। আর আমরা সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছি আসামিরা যেন নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে খালাস পায়।

মামলার বাদী মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেখতে দেখতে এক বছর পার হয়ে গেলো মেয়ে হত্যার বিচার পেলাম না। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই জানি না , কি হবে। আমার মত আর কোন বাবা যেন সন্তান হারা না হয়। আমি তো এক সন্তান হারিয়ে লক্ষ লক্ষ সন্তান পেয়েছি। কিন্তু অনেকের সন্তান হারিয়ে যাচ্ছে এই সড়ক দুর্ঘটনায়। দক্ষতা, প্রশিক্ষণের অভাবের কারণে আমাদের সন্তানদের হারাতে হচ্ছে। অদক্ষ চালকদের কারণে রাস্তায় আমার মেয়ের মত অনেকের তাজা প্রাণ ঝরছে। যারা আমার মেয়ের প্রাণ কেড়ে নিল আমি তাদের উপযুক্ত বিচার চাই। তাদের সর্বোচ্চ সাজার অপেক্ষায় আছি।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগে গাড়ী চালাইতাম। মেয়ে মরে যাওয়ার পর থেকে আর চালাই না। আর চালাবোও না। চলাফেরা করতে গেলে কেমন অস্বস্থি লাগে। কেমন কেমন যেন লাগে। কোন অপরাধ করেছি যে আল্লাহ আমার মেয়েটাকে নিয়ে গেছে।

মিমের মা রোকসানা বেগম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আমি যেভাবে কাঁদছি, আর কোনো মা যেন আর এভাবে না কাঁদে, আল্লাহর কাছে আমি এ দোয়াই করি। দেশবাসীর কাছে তিনি তার মেয়ের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৯ জুলাই দুপুরে কালশী ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে দ্রুত গতির জাবালে নূর বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর ওঠে যায়। এসময়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান দুইজন। আহত হন ১৫,জন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ২৯ জুলাই রাতে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম মামলা দায়ের করেন।

গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উত্তর ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক কাজী শরীফুল ইসলাম ঢাকা সিএমএম আদালতে ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে মাছুম বিল্লাহর চালানো বাসটি ফ্লাইওভারের ঢালে রেলিং ও দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ওই সময় যাত্রীরা বাসটি সাবধানে চালানোর জন্য চালক ও তার সহকারীকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা যাত্রীদের অনুরোধ রাখেননি।

মামলাটিতে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচালক মাসুম বিল্লাহ, মজোবায়ের সুমন, মোজাহাঙ্গীর আলম, চালকের সহকারী মো. এনায়েত হোসেন কারাগারে আছেন। অপর আসামি চালকের সহকারী মো. আসাদ কাজী পলাতক রয়েছেন। আসামি জাবালে নূর পরিবহনের বাসমালিক মো. শাহদাত হোসেন আকন্দের মামলার অংশের কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জুলাই ২৯,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর