thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি 25, ৩০ মাঘ ১৪৩১,  ১৩ শাবান 1446

চোখের জলে স্বজনদের ফিরে পেতে আকুতি

২০১৯ আগস্ট ৩০ ২২:৪১:২৬
চোখের জলে স্বজনদের ফিরে পেতে আকুতি

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : মায়সা এখন নবম শ্রেণিতে পড়ে- সব কিছুই বুঝতে পারে আগের চেয়ে ভালো করে। বুঝতে পারে যখন তার বাবার আদর পাওয়ার কথা ছিল, বাবা যখন তাকে স্কুলে আনা-নেওয়া করতে পারতেন, তখনই ২০১৪ সালে নিখোঁজ হয়েছেন তিনি। এরপর থেকে শুরু হয়েছে তাদের অপেক্ষার পালা- কবে ফিরে আসবেন বাবা মানবাধিকার কর্মী সাজেদুল ইসলাম সুমন।

কিন্তু অপেক্ষার প্রহর যেন কিছুতেই ফুরাচ্ছে না তার, ফুরাচ্ছে না মা আর দাদা-দাদির। আদৌ ফুরাবে কিনা তাও সে জানে না।

নাসরিন আক্তার জানান, তার ছেলে ইসরাক আহমেদের নিখোঁজ হওয়ার কথা। ২০১৭ সালের আগস্টে ঈদ করতে ঢাকায় ফেরেন তিনি। কিন্তু ফিরে যাওয়ার দিন নিখোঁজ হয়ে যান। সর্বশেষ তার ছেলে তাকে জানিয়েছিলেন, বন্ধুদের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে দেখা করবেন। রাত ৮টার মধ্যে বাসায় না ফিরলে যেন ফোন করা হয় তাকে। কিন্তু তখন থেকেই তার ফোন বন্ধ হয়ে যায়। নাসরিন বলেন, 'এখনও বুকে কষ্ট নিয়ে আশায় আছি, কখন ছেলে ফিরে আসবে।'

রাইসা আর ইসরাকের মতো এমন অসংখ্য পরিবার এখনও আশায় আছে- কখন ফিরে আসবেন তাদের হারিয়ে যাওয়া স্বজন।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে 'মায়ের ডাক' নামের সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় গুম হওয়া পরিবারের স্বজনরা নিখোঁজ মানুষটিকে ফিরে পেতে সরকারের কাছে নানাভাবে আকুতি জানান।

আলোচনা সভায় গত এক দশকে 'বিভিন্ন বাহিনী কর্তৃক গুম হওয়া' সব মায়ের সন্তানকে তাদের অভিভাবকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানানো হয়। কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজনরা। ছোট অনেক শিশুর হাতে ছিল বাবার ছবি, ছিল 'বাবাকে ফিরিয়ে দাও' সংবলিত প্ল্যাকার্ড। স্বজনদের অভিযোগ, গুম হওয়ার পর প্রথম দিকে নানা আশ্বাস, সান্ত্বনা আর প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের এড়িয়ে চলছে।

আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সরকারের উদ্দেশে বলেন, 'এতগুলো মানুষ দাবি করছে, গুম হয়েছে! এই দাবির কথা চিন্তা করে একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে দেখান- যারা এখানে ছবি হাতে বসে আছেন, তারা কি মিথ্যা কথা বলছেন? তদন্ত করে সত্য ঘটনা প্রকাশ করুন।'

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। এসব পরিবার ও তাদের স্বজনরা আপনার জন্য দোয়া করবেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনের আগে এ ব্যবস্থা নিন। এটাই হবে জাতিকে দেওয়া আপনার শ্রেষ্ঠ উপহার।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এখন বেঁচে থাকার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্র যখন সন্ত্রাসী হয়ে যায়, তখন মানুষের জন্য সেই রাষ্ট্রের কোনো প্রয়োজন থাকে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল সরকারের প্রতি প্রশ্ন করেন, যদি আপনারা গুম না করে থাকেন, তা হলে গুম হওয়ার সময় আপনাদের গাড়ি এবং বাহিনীর লোকজন দেখা যায় কেন? দশ বছর ক্ষমতায় আছেন, কারা গুম করছে সেটা কেন বের করতে পারছেন না?

আলোচনা সভায় আরও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আকমল হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ূয়া, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াছ আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াছ, গুম হওয়া রনি হোসেনের মা আঞ্জুমান আরা বেগম, সাজ্জাদ হোসেনের মা সাজেদা বেগম, ইসমাঈল হোসেনের স্ত্রী নাসরিন আক্তার, তপুর মা সালেহা বেগম, সবুজের মা সাহেদা বেগম, পিন্টুর বোন মুন্নী, পারভেজ হোসেনের শিশুকন্যা হূদি, নিখোঁজ ড্রাইভার কাউসারের মেয়ে লামিয়া, ডা. মোখলেছুর রহমানের বাবা শেখ আব্দুর রাশেদ প্রমুখ।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/আগস্ট ৩০,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর