thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৫ জমাদিউল আউয়াল 1446

মেয়েকে তুলে নিল দুর্বৃত্তরা, বৃদ্ধ মাকে থাপ্পড় দিল ওসি!

২০১৯ সেপ্টেম্বর ১৪ ১৪:০০:৪৭
মেয়েকে তুলে নিল দুর্বৃত্তরা, বৃদ্ধ মাকে থাপ্পড় দিল ওসি!

বরিশাল প্রতিনিধি: সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার বিধবা স্ত্রীকে থানার ভেতর ও বাইরে প্রকাশ্যে মারধরের অভিযোগ বরিশালের উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পালের বিরুদ্ধে।

গত বুধবার সন্ধ্যার পর উজিরপুর থানা এলাকায় স্থানীয়দের সামনে এ ঘটনা ঘটলেও ওসির কঠোর নিষেধাজ্ঞায় প্রথমে তা প্রকাশ করতে কেউই সাহস পায়নি। পরবর্তীতে নির্যাতিত রাশিদা বেগম (৬২) বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজিকে দ্বিতীয় দফায় বিষয়টি জানাতে গিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের ঘটনার আদ্যোপান্ত প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় বরিশাল পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় চলছে।

দুই দফায় নির্যাতিতা বৃদ্ধার গালে রক্তাক্ত জখম এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীল ফোলা জখমের সৃষ্টি হয়েছে। মারধরের পর তার গালে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়েছেন পুলিশ সদস্য জাহিদ। বৃদ্ধ রাশিদা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ওসির নির্দেশে কনস্টেবল জাহিদ একটি চায়ের দোকানে (থানা সংলগ্ন) এসে আমার গালে সিগারেটের আগুনের ছ্যাঁকা দিয়েছে। দেয়ালের সঙ্গে আমার মাথা ঠুকিয়েছে। পিঠে ও ঘাড়ে ঘুষি মেরেছে ছয় থেকে সাতটি। মারধরের পাশাপাশি আমার মা-বোন নিয়েও গালাগাল করেছে।

পাশের লোকজন ও দোকানদার না থাকলে আমাকে মেরেই ফেলত।’ বৃদ্ধা বলেন, কনস্টেবল জাহিদের হাতে মারধরের শিকার হয়ে আমি ওসি শিশির কুমার পালের রুমে গিয়ে বিষয়টি জানাই। এ সময় সেখানে উপস্থিত থানার আরও একজন পুলিশ কর্মকর্তা ওসিকে বলেন স্যার ঘটনাটি সত্য। এ কথা শোনার পরই ওসি শিশির চেয়ার থেকে উঠে উল্টো আমাকে গালি দিয়ে বলেন শালির ঝি শালি বের হ, এখানে আসছো কেনো। এর পর শুরু করে দেন আমার দুই গালে থাপ্পড়। একপর্যায়ে ওসি তার রুম থেকে বের করে দেন। আবার বাইরে এসে আমাকে গলা ধাক্কা দিতে দিতে থানার পশ্চিম পাশের ব্রিজের গোড়ায় মাটিতে ফেলে দিলে হাত-পায়ের অনেক স্থানের চামড়া উঠে যায়।

কোন আক্রোশে এ ধরনের ঘটনা, জানতে চাইলে রাশিদা বেগম জানান, তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলার পানিচত্বর এলাকার বাসিন্দা। তার স্বামী মঈন উদ্দিন মাতবর একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। ১৬ বছর আগে দায়িত্ব পালনকালেই মারা যান। দেড় বছর আগে বড় ছেলের বউ তার (বৃদ্ধার) ছেলে রাসেল ও হাসানকে খুন করে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনি বরিশাল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অফিসে দৌড়ঝাঁপ করছিলেন। প্রায় প্রতিদিন যাতায়াত করতে হতো পিবিআই অফিসে। তাই উজিরপুর উপজেলার ইচলাদী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন কালাম নামের এক ব্যক্তির ভাড়া বাসায় ছোট মেয়েকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি।

নির্যাতিতা জানান, প্রায় এক মাস আগে মেয়েকে বাসায় রেখে তিনি মামলার কাজে বরিশাল যান। এ সুযোগে স্থানীয় শুক্কুর, বোরহান, আনিচ, কালামসহ বেশ কয়েকজন বখাটে তার মেয়েকে বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ ২৪ দিন পূর্বে তার মেয়েকে উদ্ধার করে। তখন বৃদ্ধ রাশিদা ওসি শিশির কুমার পালকে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ জানান।

কিন্তু ওসি তাকে বলেন, ‘আপনার মেয়ে পেয়েছেন, আপনি তাকে নিয়ে চলে যান। বিচার হয়ে গেছে।’ এ কথা শুনে থানা থেকে মেয়েকে নিয়ে বৃদ্ধ রাশিদা বেগম বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে ওই বখাটেরা আবারও তার মেয়েকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তখন পুনরায় থানায় গিয়ে ওসির কথানুযায়ী অভিযোগ লিখে জমা দেন। কিন্তু তাতেও কোনো সুফল না পেয়ে পরের দিন নতুন করে আবার একটি অভিযোগ দিলে তার সামনেই তা ছিঁড়ে ফেলে দেন ওসি। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে রাশিদা বেগম বলেন, ‘তিনবার ওসির কাছে অভিযোগ দিয়েছি, প্রত্যেকটিই তিনি আমার সামনে ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে বলেন এসব নিয়ে সময় নষ্ট করা সম্ভব নয়। এদিকে বখাটেদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়ায় অভিযুক্তদের স্বজনরা আমার বাসায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।

এ ঘটনায় রাশিদা বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পুরো ঘটনা জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে রেঞ্জ ডিআইজি তাৎক্ষণিক উজিরপুর থানার ওসি শিশিরকে ফোন করে বৃদ্ধ রাশিদাকে আইনি সহায়তা দেওয়ার কঠোর নির্দেশ দেন। নির্যাতিত রাশিদা বেগম ও তার ছেলে বাবু দাবি করেন, রেঞ্জ ডিআইজির কাছে অভিযোগ করায় ওসি শিশির কুমার পাল ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় তারা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। সেই সঙ্গে ওসি শিশির ও পুলিশ সদস্য জাহিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান বাবু।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য মো. জাহিদুল ইসলাম অবশ্য বৃদ্ধ রাশিদাকে মারধরের বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বাচ্চুর দোকানে চা খেতে গিয়ে দেখি ওই মহিলা ওসি স্যারকে গালাগাল দিচ্ছে। তখন ওই মহিলাকে বাধা দিলে সে আমাকেও গালাগাল করে। এ সময় আমি তাকে সেখান থেকে তাড়ানোর জন্য মারধরের ভয় দেখিয়েছিলাম।’ তবে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চান না বলে জানিয়েছেন উজিরপুর মডেল থানার ওসি শিশির কুমার পাল।

বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই নারী আমার কাছে এসে প্রথমে তার মেয়ের অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন। একদিন পর এসে থানার ওসি এবং এক কনস্টেবলের বিরুদ্ধে তাকে মারধরের অভিযোগ করেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ১৪,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর