thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৬ জমাদিউল আউয়াল 1446

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালাবে শুধু র‌্যাব

২০১৯ অক্টোবর ০১ ১৩:০৪:৫৪
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালাবে শুধু র‌্যাব

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাজধানীতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। মাঝে ব্যাপক সমালোচনার মুখে থাকা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশও (ডিএমপি) কয়েকটি ক্যাসিনো, বার ও স্পা সেন্টারে অভিযান চালায়। তবে যে বার থেকে পুলিশ খালি হাতে ফেরে, একদিন পর সেই বারে গিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মদের সন্ধান পায় র‌্যাব। এ পরিস্থিতিতে গত শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যেহেতু র‌্যাব শুরু করেছে, সেজন্য র‌্যাবই ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালাবে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান নিয়ে এলিট ফোর্স র‌্যাব ও পুলিশের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান। ক্যাসিনোসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড ডিএমপির নাকের ডগায় চলে আসছিল। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব পরিচালনায় সহায়তা দিয়ে ডিএমপির মধ্যম ও শীর্ষপর্যায়ের কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা নিয়মিত মাসোহারা নিতেন বলে অভিযোগ আছে। এজন্য পুলিশের ওপর আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। ফলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে শুধু র‌্যাবকে এই অভিযান চলমান রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা বলেন, ‘আমরা কখনও অপারেশন পরিচালনার জন্য কম বা বেশি জোর দিয়ে কিছু করি না। আমরা সাধারণ নিয়মে অপারেশন পরিচালনা করে আসছি। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানও সেভাবেই চলবে। এটা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আমাদের অভিযান চলবে।’

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, গত কয়েক বছরে বিস্তার ঘটা ক্যাসিনোগুলো ডিএমপির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় পরিচালিত হয়ে আসছে। ডিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে থানা পুলিশের সদস্যরাও নিয়মিত মাসোহারা পেতেন ক্যাসিনোগুলো থেকে। এমনকি থানা পুলিশের সদস্যরাও এসব ক্যাসিনোয় নিরাপত্তা দিয়ে আসছিলেন। এ কারণে ক্যাসিনো নিয়ে আলোচনা ও অভিযান শুরু হলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে পুলিশ। এছাড়া প্রথম অভিযানও শুরু করে র‌্যাব। এসব কারণে পুরো অভিযান র‌্যাবকে চালানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের মধ্যমসারির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা সত্য যে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ক্যাসিনোগুলো সম্পর্কে জানার পরও পুলিশ অভিযান চালাতে পারেনি। কিন্তু সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যদি আগে নির্দেশনা আসতো, তাহলে পুলিশও এই অভিযান চালিয়ে নির্মূল করতে পারতো।’

তিনি দাবি করেন, একই অভিযান একাধিক ইউনিট চালাতে শুরু করলে সমন্বয়হীনতা চোখে পড়বেই। এজন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা হয়তো ভালো মনে করেই নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আরেকটি সূত্র জানায়, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের আগেই সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা যুবলীগের কারা কারা এসবে জড়িত তা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। সেই প্রতিবেদন ধরেই অভিযান শুরু করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ও করছে ওই গোয়েন্দা সংস্থা। এছাড়া র‌্যাবের নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান ছাড়াও অন্যান্য কিছু কারণে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক ধারণা বেশি। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দুর্নীতিবিরোধী যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে, তাতে পুলিশ থাকলে সাধারণ মানুষের সমালোচনা আরও বেশি হতে পারতো। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশের সরাসরি সম্পর্ক থাকায় অভিযানেও একটা গা-ছাড়া ভাব থাকার আশঙ্কা ছিল। এ কারণে র‌্যাবকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হওয়া যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও যুবলীগ নেতা এবং ‘টেন্ডার কিং’ জি কে শামীম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ক্যাসিনো চালাতে কোন কোন পুলিশ সদস্যকে নিয়মিত মাসোহারা দিতেন তারা। এ ছাড়া কিছু নাম গণমাধ্যমেও আলোচিত হচ্ছে।

সদ্য নিয়োগ পাওয়া ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বলেন, গ্রেফতারকৃতরা যেসব পুলিশ সদস্যের নাম বলছে, তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তবে সাবেক ডিএমপি কমিশানর আছাদুজ্জামান মিয়া ক্যাসিনো বন্ধ করতে না পারার বিষয়টিকে সবার ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করেন। রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) তিনি বলেন, ‘এখন সবাই পুলিশকে দোষ দিচ্ছে। কিন্তু পুলিশের বাইরে আরও তো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রয়েছে। র‌্যাবের কথা বলছেন, যাদের এখন আপনারা ক্রেডিট দিচ্ছেন, তখনও তো তারা এই মাঠেই ছিল।’

তিনি বলেন, ‘এখন যে মাত্রায় এই জিনিসটা (ক্যাসিনো) আসছে এর ছিটেফোঁটাও কি আমরা মিডিয়ায় দেখেছি? দেখি নাই। তাহলে ব্যর্থতার কথা যদি বলেন, এই ব্যর্থতা আমাদের সবার। এই ব্যর্থতা আমাদের সমাজের।’

পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, র‌্যাব পুলিশেরই একটি ইউনিট। ফলে র‌্যাবের অভিযান মানেই পুলিশের অভিযান। এখানে আলাদা করে কারো ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন বা কারো বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। আসল বিষয় হলো একটি ইউনিট অভিযান চালালে সমন্বয়টা ঠিকভাবে করা যায়। তবে সাধারণ পুলিশের চাইতে র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ অনেক কম বলে স্বীকার করেন তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/অক্টোবর ০১,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর