thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি 25, ২৮ মাঘ ১৪৩১,  ১১ শাবান 1446

মোহাম্মদপুর থেকে আবরারকে কেন মহাখালীর হাসপাতালে নেয়া হলো?

২০১৯ নভেম্বর ০২ ১৭:০৪:২১
মোহাম্মদপুর থেকে আবরারকে কেন মহাখালীর হাসপাতালে নেয়া হলো?

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিদ্যুৎস্পর্শে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরারের মৃত্যুতে ফুঁসে উঠেছে তার সহপাঠীরা।

৭২ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন, সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশসহ চার দফা দাবিতে শনিবার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে বিক্ষোভ করে তারা।

গতকাল (শুক্রবার) আবরারের আহত হওয়ার পর থেকে তার মৃত্যুর সংবাদ শোনার পরও অনুষ্ঠান বন্ধ করেনি দৈনিক প্রথম আলোর সাময়িকী কিশোর আলোর আনন্দ আয়োজকরা।

এ ঘটনায় কিশোর আলোর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানটির আয়োজক ও ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এদিকে আবরারের সহপাঠীরা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছেন, গতকাল বিকালে আহত আবরারকে কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে না নিয়ে জ্যাম পেরিয়ে কেন মহাখালীর এক বেসরকারি হাসাপাতালে নেয়া হয়েছিল?

আবরারের এক সহপাঠী বলেন, এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটলো অথচ আবরারকে মোহাম্মদপুর থেকে নিয়ে যাওয়া হলো মহাখালীতে। এতদূর নিতে হলো কেন? আশপাশেই তো কত হাসপাতাল ছিল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ছিল।

একই প্রশ্ন রেখেছেন রেসিডেন্সিয়াল কলেজ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ আরও অনেকেই।

তাদের প্রশ্ন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর আবরারকে চিকিৎসার জন্য রাস্তার উল্টো পাশেরই শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।

অথচ সেখানে না নিয়ে মহাখালীতে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সাবেক আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) নেয়া হলো। এর ব্যাখ্যা কি?

অনেকেই বলছেন, এতো দূরের হাসপাতালে না নিয়ে কাছের কোনো হাসপাতালে আবরারকে নেয়া হলে হয়তো দ্রুত চিকিৎসা দিয়ে তাকে বাঁচানো যেত।

মডেল কলেজের সামনে উপস্থিত একজন অভিভাবক বলেন, কিশোর আলোর আয়োজন তো শিশু-কিশোরদের জন্যই। অথচ সেই অনুষ্ঠানেই এক কিশোর বৈদ্যুতিক শক খেয়ে মারা গেল। মাঠের এমন বিপজ্জনক অবস্থা রেখে তারা কি করে এমন একটি আয়োজন করে, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।

তিনি আরও বলেন, তাদের অনুষ্ঠানে একটি শিশু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে, তারা তাকে দ্রুত চিকিৎসা দিতে কাছের কোনো হাসপাতালে না নিয়ে দূরের হাসপাতালে নিয়ে গেল। আর আমরা জেনেছি পথেই মারা গেল ছেলেটি। তারা কি জানে না যে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে কত দ্রুত চিকিৎসা দিতে হয়!

অন্য আরেক অভিভাবক বলেন, আয়োজকদের উচিত ছিল, ঘটনাটি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের নম্বর নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং তাকে দ্রুত কাছের কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। তারা তো তা করেইনি উল্টো অনুষ্ঠান চালিয়ে গেছে।

প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন বলেন, একটি শিশুর জীবন চলে যাচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে গান-বাজনা চলবে, এটা তো মেনে নেয়া যায় না। কোনো সুস্থ্য মস্তিস্কের মানুষেরা এ কাজ করতে পারে না।

এসব মন্তব্য করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আবরার নিহতের জন্য কিশোর আলোর কিআনন্দ আয়োজনের আয়োজক কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী বলে দাবি করছেন।

এমন একটি দুর্ঘটনার পরও অনুষ্ঠান অব্যাহত রাখার মানসিকতা নিন্দনীয় মন্তব্য করে ধিক্কার জানিয়েছেন তারা।

বিদ্যুৎস্পর্শে গুরুতর আহত আবরারকে কেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে না নিয়ে মহাখালী ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলো এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রথম আলোর কিশোর সাময়িকী কিশোর আলোর ‘কি আনন্দ’ অনুষ্ঠান আয়োজনের অংশীদার ছিল ওই হাসপাতালের।

যে কারণে অন্য কোথাও না নিয়ে দূরবর্তী সেই ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয় আবরারকে।

ওই হাসপাতালের সঙ্গে কিশোর আলোর স্পন্সরশিপ রয়েছে বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এসব অভিযোগের জবাবে কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ জানান, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এরপর এখানে যে চিকিৎসকরা ছিলেন তারা তাকে দেখেন। কিন্তু তারা পালস পাচ্ছিলেন না। তাই দ্রুত তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। হাসপাতাল থেকে জানানো হয় সে আগেই মারা গেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘নাইমুল আবরার যখন তড়িতাহত হয়, কিশোর আলোর স্বেচ্ছাসেবকেরা তাকে সঙ্গে নিয়ে যায় পাশে থাকা মেডিক্যাল ক্যাম্প স্টলে। এটা আপনাদের জানানো প্রয়োজন যে, প্রতি কিআনন্দ উৎসবে ইউনিভারসেল মেডিকেল কলেজ (আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) এই ক্যাম্প পরিচালনা করে। এখানে ডাক্তার থাকেন, ফার্স্ট এইড থাকে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ইউনিভারসেল মেডিকেল এটি পরিচালনা করে উপস্থিত কিশোরদের জন্য। এ জন্য কিশোর আলোর কাছ থেকে তারা একটি টাকাও নেয় না। কিশোর আলোও তাদের উৎসবে জায়গা দেয়ার জন্য কোনো টাকা নেয় না। এখানে কোনো স্পন্সরশিপ থাকার ব্যাপার নেই।

তিনি যোগ করেন, গতকাল আবরারকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর মেডিকেল ক্যাম্পে থাকা কর্তব্যরত চিকিৎসক আবরারকে হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয় আবরারকে। আবরারের সঙ্গে কিশোর আলোর স্বেচ্ছাসেবকও ওঠেন। ডাক্তারের পরামর্শেই আবরারকে নিয়ে ইউনিভারসেল মেডিকেল কলেজের দিকে রওনা দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত দৈনিক প্রথম আলোর সাময়িকী কিশোর আলোর আনন্দ আয়োজনে বিদ্যুৎস্পর্শে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার নিহত হয়েছে।

শুক্রবার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের মাঠে কিশোরদের মাসিক পত্রিকা কিশোর আলোর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে এসেছিল আবরার।

সেখানে বিকালে অনুষ্ঠান চলাকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয় সে।

পরে ওই মাঠে স্থাপিত জরুরি মেডিকেল ক্যাম্পের দুজন বিশেষজ্ঞ (এফসিপিএস) চিকিৎসক নাইমুলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।

এরপর তাকে মহাখালীর বেসরকারি ইউনিভার্সেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবরারকে মৃত ঘোষণা করেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ০২,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর