thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৭ জমাদিউল আউয়াল 1446

৫ কারণে প্রার্থী তাপস

২০১৯ ডিসেম্বর ২৯ ১২:১৪:৩৩
৫ কারণে প্রার্থী তাপস

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: চমক দিয়েই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করলো আওয়ামী লীগ। ঢাকা উত্তরে আতিকুল ইসলামকে মনোনয়ন দিলেও ঢাকা দক্ষিণে বর্তমান মেয়র সাইদ খোকনকে সরিয়ে সেখানে মনোনয়ন দেওয়া হলো ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসকে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন কেন সাইদ খোকনকে বদলে শেখ ফজলে নূর তাপসকে মনোনয়ন দিল আওয়ামী লীগ। এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করতে গিয়ে বাংলা ইনসাইডার পেয়েছে পাঁচটি কারণ। মূলত এই পাঁচটি কারণেই সাইদ খোকনের বদলে প্রার্থী করে হয়েছে শেখ ফজলে নূর তাপসকে। সাইদ খকনকে দ্বিতীয়বার মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক মনোভাব দেখালো আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত মনোনয়ন কমিটির সদস্যরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। সবশেষে দায়িত্ব অর্পণ করা হয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদীয় বোর্ডের চেয়ারম্যান শেখ হাসিনার হাতে। তিনি সামগ্রিক বিহশয় বিবেচনা করে শেখ ফজলে নূর তাপসকেই মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করেন।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে মূলত পাঁচটি কারণে সাইদ খোকনকে বাদ দিয়ে শেখ ফজলে নূর তাপসকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই কারণগুলো হলো-

১. সাইদ খোকনের ইমেজ সংকট
সাইদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর যে অঙ্গীকারগুলো করেছিলেন এবং মেয়র নির্বাচনের সময় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার প্রায় কোনটাই পূরণ করতে পারেননি। সম্ভবত এটাই সাইদ খোকনের সবচেয়ে নেতিবাচক দিক। যার কারণে তাকে আরেকবার মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে মনোনয়ন বোর্ড এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি দ্বিধান্বিত ছিলেন।

২. ডেঙ্গু মোকাবেলায় সীমাহীন ব্যর্থতা এবং মিথ্যাচার
আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র হিসেবে সাইদ খোকন চলতি বছরে সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। শুধু ব্যর্থতা নয়, ডেঙ্গু সংকট নেই এবং তার সিটি কর্পোরেশনের আওতায় একাধিক এলাকাকে ডেঙ্গুমুক্ত ঘোষণা করার পর দেখা গেছে সে সমস্ত এলাকাগুলোতে ব্যাপক ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রয়েছে। ডেঙ্গু মোকাবেলা নিয়ে সাইদ খোকনের বিরুদ্ধে দলের ভেতরও নানারকম নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন মেয়র হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে তাকে মনোনয়ন না দেওয়ার অন্যতম কারণ হলো ডেঙ্গু মোকাবেলায় তার ব্যর্থতা।

৩. দলীয় কোটারি স্বার্থ এবং দুর্নীতি
তৃতীয় যে বিষয়টি সাইদ খোকনের মনোনয়ন না পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল মনে করছে, সেটা হলো দলীয় কোটারি স্বার্থ এবং দুর্নীতি। সাইদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরেই তার একটা নিজস্ব গ্রুপ তৈরি করেছিলেন, যারা সিটি কর্পোরেশনে বিভিন্ন টেন্ডার এবং ক্রয় বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। এই কোটারি গ্রুপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানারকম অভিযোগ উঠেছিল। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সাংসদ নুরুন্নবী শাওনের সঙ্গে সাইদ খোকনের একাধিক বাণিজ্যিক এবং টেন্ডার সংক্রান্ত লেনদেনের তথ্য আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হাতে ছিল। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করেন, সিটি কর্পোরেশনকে কোটারি স্বার্থের আওতায় নিয়ে এসে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া ছিল সাইদ খোকনের আরেকটি ব্যর্থতা।

৪. দলকে সংগঠিত না করা
আওয়ামী লীগের বিবেচনায়, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শুধুমাত্র দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করা নয়, বরং মেয়রের একটি বড় কাজ হলো দলকে সংগঠিত করা। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরকে সংগঠিত করা। কিন্তু সাইদ খোকন সেটি করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। বরং তিনি নিজেই নানারকম কোন্দল এবং উপদলীয় সংকটে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত খারাপ। যে কারণে ঢাকায় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

৫. বিএনপির প্রার্থী
সর্বশেষ যে কারণটি সাইদ খোকনকে মনোনয়ন বঞ্চিত করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেটা হলো বিএনপির প্রার্থী। বিএনপি থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ইশরাক হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক। তিনি যদিও বয়সে তরুণ এবং অনভিজ্ঞ, কিন্তু সাদেক হোসেন খোকার পক্ষে মানুষের মধ্যে যে আবেগ আছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে ইশারাক নির্বাচনে ভালো অবস্থান করতে পারেন বলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড মনে করেছে। সে কারণেই সাইদ খোকনের চেয়ে শেখ ফজলে নূর তাপস এখানে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে অনেক বেশি যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারবেন। ইশরাক হোসেনের জন্য যে আবেগ, সেই আবেগকে ছাপিয়ে ভালো কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি জনগণকে আকৃষ্ট করতে পারবেন বলে আওয়ামী লীগ মনে করছে। এ কারণেই সাইদ খোকনের চেয়ে শেখ ফজলে নুর তাপসই মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে গেছেন।

শেষ পর্যন্ত শেখ ফজলে নূর তাপস মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তার ক্লিন ইমেজ এবং ঢাকা দক্ষিণ মহানগরীতে তার প্রতি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সমর্থন বড় কারণ হিসেবে কাজ করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ডিসেম্বর ২৯,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর