thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৬ জমাদিউল আউয়াল 1446

ঘুষ, দুর্নীতির পৌনে দুই কোটি টাকা বিদেশে পাচার করতে চেয়েছিলেন তাজুল

২০২০ জানুয়ারি ১০ ১৮:৪৭:৪৭
ঘুষ, দুর্নীতির পৌনে দুই কোটি টাকা বিদেশে পাচার করতে চেয়েছিলেন তাজুল

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে আত্মসাৎ করা টাকা অফিস ও বাসায় রেখেছিলেন দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তাজুল ইসলাম। চার বছর ধরে ঘুষ, দুর্নীতি আর অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত ওই টাকার পরিমাণ এক কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার। এই টাকা বিদেশে পাচারের পরিকল্পনা করছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিকালে গ্রেফতার হওয়া তাজুল সম্পর্কে এসব তথ্য জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় দিনাজপুরের উপপরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমান।

তবে কোন দেশে টাকা পাচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাজুল,সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি দুদক কর্মকর্তা। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি)সকালে আশিকুর রহমান বলেন, ‘মানিলন্ডারিংয়ের বিষয়টি স্পষ্ট। তবে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আগে এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না।’

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘পিআইও তাজুল ইসলাম তার অফিস ও বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া টাকার উৎস জানাতে পারেননি। একজন পিআইও’র পক্ষে ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া এই টাকা আয় করা সম্ভব নয়।’

দুদক সূত্র জানায়, তাজুল কীভাবে, কার মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং তার আত্মীয়দের মধ্যে কারা বিদেশে আছেন, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চাকরি জীবনের শুরুতে তাজুল যেখানে কর্মরত ছিলেন সেই জায়গাতেও দুর্নীতি হয়েছিল কিনা, তাও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান দুদকের এক কর্মকর্তা।

জানা গেছে,তাজুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট সদর উপজেলায়। তার বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক। ২০১১ সালে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন তিনি। আর পার্বতীপুর উপজেলায় পিআইও হিসেবে যোগ দেন ২০১৬ সালে। এর আগে ফুলবাড়ী উপজেলায় কর্মরত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প (টিআর), গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্থার প্রকল্প (কাবিটা), অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) ও গ্রামীণ উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির টাকাই মূলত আত্মসাৎ করেন তাজুল। আত্মসাৎ করা টাকা ব্যাংকে রাখা নিরাপদ মনে করতেন না তিনি। জমি কিনে কারও চোখে পড়ার ইচ্ছেও ছিল না তার। এমনকি কোনও ব্যবসায় বিনিয়োগ বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও আস্থা ছিল না তাজুলের। আত্মীয়-স্বজনের কাছে টাকা রাখাও নিরাপদ মনে করেন না তিনি। আর এসব কারণেই ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি প্রকল্প থেকে আত্মসাৎ করা টাকা নিজের বাসা ও অফিসে রাখাই শ্রেয় মনে করতেন।

দুদক সূত্র জানায়, টিআর, কাবিটা, ইজিপিপি ও কাবিখা কর্মসূচির আওতায় পুকুর ও খাল খনন, পুনঃখনন, রাস্তা নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ, রাস্তা-বাঁধ নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ, জলাবদ্ধতা দূর করতে নালা ও সেচনালা খনন, পুনঃখনন, বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের মাঠে মাটি ভরাট, কিল্লা নির্মাণ ও পুনঃনির্মান, ধর্মীয়, শিক্ষা ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান সংস্কার ও মেরামত, স্যানিটারি ল্যাট্রিন ও বাঁশের সাঁকো নির্মাণ, বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য এলাকাভিত্তিক গভীর নলকুপ স্থাপন, সোলার হোম সিস্টেম, সোলার মিনি, মাইক্রো, ন্যানো গ্রিড, সৌর সেচ পাম্প, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট ও উন্নত চুলার শত শত প্রকল্প প্রতিবছর বাস্তবায়ন করে সরকার। আর এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে পিআইও-দের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি প্রকল্প টাকার অঙ্কে খুব বেশি না। তবে প্রকল্পের সংখ্যা অনেক। পিআইও তাজুল মূলত প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

সূত্র জানায়, তাজুল যা করেছেন তা হলো কোনও প্রকল্পে ৩ লাখ টাকা বা সমপরিমাণ টাকার খাদ্য বরাদ্দ থাকলে তিনি একাই নিতেন এক লাখ টাকা বা সমপরিমাণ খাদ্য। এভাবে ৪ লাখ টাকার কোনও প্রকল্প হলে সেখানে তার আয় ছিল অন্তত দেড় লাখ টাকা।

যেভাবে অভিযান
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিকাল চারটার দিকে দুদক অভিযোগ কেন্দ্রে (হটলাইন-১০৬)এক অজ্ঞাত ব্যক্তি অভিযোগ করেন। তিনি জানান, পার্বতীপুরের হুগলি পাড়ায় পিআইও তাজুল ইসলামের অফিস ও সরকারি বাসায় অভিযান চালানো হলে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকার সন্ধান মিলবে। অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযানের চালাতে দুদকের প্রধান কার্যালয় অনুমোদন দেয়। এরপর পৌনে পাঁচটার দিকে অভিযান শুরু হয়। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় দিনাজপুরের উপপরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে এনফোর্সমেন্ট ইউনিট শুরুতেই পার্বতীপুর উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযান চালায়। সেখানে তাজুলকে আটক করে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। পরে তাকে নিয়ে অভিযান চলে তার সরকারি বাসায়। সেখানে চারটি ট্রাভেল ব্যাগে পাওয়া যায় এক কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। টাকা ভর্তি ট্রাভেল ব্যাগগুলোর তিনটি রাখা ছিল খাটের নিচে। কাগপত্র ও আবর্জনার সঙ্গে ব্যাগগুলো এমনভাবে রাখা ছিল যেন সেখানে ব্যাগ আছে তা না বোঝা যায়। টাকা ভর্তি আরেকটি ব্যাগ রাখা ছিল একটি ভাঙা টেবিলের নিচে একটি ড্রয়ারে। পরে অগ্রণী ব্যাংক থেকে টাকা গণনার মেশিন এনে চারটি ব্যাগে রাখা টাকাগুলো গুনে দেখা হয়। রাত আটটা পর্যন্ত টাকা গোনা হয়।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এনডিসি মো. দবির উদ্দীন, পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহনাজ মিথুন মুন্নী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু তাহের মোহাম্মদ সামছুজ্জামান, দুদকের উপ সহকারী পরিচালক জিন্নাতুল ইসলাম, সহকারী পরিদর্শক মো. ওবায়দুর রহমান, আবদুল আজিজ ও পার্বতীপুর থানা পুলিশের সদস্যরা অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জানুয়ারি ১০,২০২০)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর