thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউস সানি 1446

ব্যাংকের অনৈতিক চাপ ও গুজবে ক্ষতিগ্রস্ত রিং সাইন

২০২০ ফেব্রুয়ারি ১৩ ১৮:২৪:২৭
ব্যাংকের অনৈতিক চাপ ও গুজবে ক্ষতিগ্রস্ত রিং সাইন

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশে যখন বিদেশী বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করার নানা উপায় খুঁজে বের করছে সরকার তখন সরকারের শীর্ষ মহলের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচয়দানকারীরা বিদেশী বিনিয়োগ বিতাড়নে নানামুখী অবৈধ কাজে লিপ্ত
রয়েছে। সম্প্রতি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একটি বড় মুলধনী কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দিয়ে আইপিওর টাকা এক ব্যংক থেকে আরেক ব্যাংকে স্থানান্তরের চেষ্টা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে সেই চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করার জন্য অতি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি খোলার সব কাযক্রম বন্ধ করে রাখা হয়েছে।তাতে বড় ধরনের বিপদে পড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নতুন কোম্পানিটি। এ ঘটনা দেশের পুঁজিবাজারকে যেমন অস্থির করে তুলতে পারে, তেমনি তা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার কাজে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশে দুই স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয় রিং সাইন টেক্সটাইল লিমিটেড। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আইপিওর টাকার জমা করার জন্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মোট চারটি একাউন্ট খোলে।

রিং সাইনের ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি, কোম্পানিটির আইপিও ফান্ডের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকে ৪টি একাউন্ট বা হিসাব রয়েছে। এরমধ্যে আইপিওতে বাংলাদেশীদের আবেদনের জন্য ১টি, বিদেশীদের মধ্যে ডলারের জন্য ১টি, ইউরোর জন্য ১টি এবং পাউন্ডের জন্য ১টি হিসাব।

ব্যাংক একাউন্ট অনুযায়ি, রিং সাইনের আইপিও ফান্ডের ৪ একাউন্টে ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা রয়েছে। এছাড়া ৫০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ও আইপিও বাবদ ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আর ব্যাংকে আইপিও ফান্ড রাখায় সুদজনিত ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার আয় হয়েছে।

আইপিও হিসাবের ৪টির মধ্যে বাংলাদেশীদের জন্য ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৩ নম্বর ব্যাংক হিসাবে ৮২ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৪ নম্বর হিসাবে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ডলার বা ১৫ কোটি ১৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৫ নম্বর হিসাবে ৬ হাজার ৮৪২ পাউন্ড বা ৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৬ নম্বর হিসাবে ২ হাজার ৭০৭ ইউরো বা ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা রয়েছে। অর্থাৎ রিং সাইনের আইপিও ব্যাংক একাউন্টগুলোতে বর্তমানে ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা রয়েছে।

রিং শাইন টেক্সটাইল শেয়ারবাজারে ১৫ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। এরমধ্যে প্রসপেক্টাসে উল্লেখ অনুযায়ি, ৫০ কোটি টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। যা দিয়ে ঢাকা ব্যাংকের ২৮ কোটি টাকা ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২২ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। আইপিওতে ডিএসইর ফি ১ কোটি ৮০ লাখ টাকাসহ মোট ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বাকি টাকা দিয়ে যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা ক্রয় করা হবে। যা ক্রয়ে সময়সীমা রয়েছে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। ইতোমধ্যে সব ধরনের ঋণ পরিশোধ করায় কোম্পানিটির কোনো ধরনের দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ নেই।

জানাগেছে রিং সাইনের পক্ষ থেকে সব কটি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া হয়।এরপরই রিং সাইন টেক্সটাইলের ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে একটি ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের। ব্রাক ব্যাংকের চারটি একাউন্টে থাকা টাকা নিজের ব্যাংকে জমা রাখার জন্য হুমকি দেন ওই ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের শীর্ষ ব্যাক্তি।

কোম্পানি সুত্রে জানাগেছে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের শীর্ষ ব্যক্তি স্বশরীরে রিং সাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) ইন্দোনেশিয়ান বংশদ্ভুত সিঙ্গাপুরের নাগরিক সুং ওয়ে মিনকে পিস্তল দেখিয়ে হুমকি দেন। এর পর ভীত হয়ে পড়েন রিং সাইনের এমডি সুং ওয়ে মিন। এদিকে এ ঘটনার এরপরই এমডির কাছে শাশুড়ীর মৃত্যু সংবাদ আসে। এমডির শাশুড়ি মারা যাওয়ায় ৯ জানুয়ারি এমডিসহ ৩ পরিচালক নিজেদের দেশে যান। অন্যরা হলেন- পরিচালক ও এমডির বোন সুং ওয়েন লি অ্যাঞ্জেলা এবং পরিচালক ও এমডির মামী হাসিয়ো লিউ ই চাই।

এদিকে শেয়ারবাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়ে রিং সাইনের মালিক আইপিওর টাকা নিয়ে চলে গেছেন আর বাংলাদেশে ফিরবেন না। একটি জাতীয় দৈনিকে এ গুজবের পক্ষে নিউজও প্রকাশিত হয়। আড়ালে রয়ে যায় তাকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি। গত ২৯ জানুয়ারি রিং সাইনের এমডি বাংলাদেশে ফেরেন এবং পরের দিন কারখানায় কাজে যোগদান করেন। ফলে গুজবটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রিং সাইনের ইমেজ। শেয়ারবাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এরকম পরিস্থিতিতে এখনো সংশয় থেকে মুক্ত হতে পারেননি রিং সাইনের পরিচালনা পর্ষদ। এ তথ্য জানিয়েছেন কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে চান নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রিং সাইন টেক্সটা্ইল লিমেটেড সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা দ্য রিপোর্টকে জানান, ” আমরা যে ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে এলসি খুলে পণ্য আমদানি করি সেই ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের শীর্ষ ব্যক্তি আমাদের কোম্পানির এমডিকে পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত আইপিওর তার নিজের মালিকানাধীন ব্যাংকে টাকা রাখার জন্য অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি নানা সংস্থার মাধ্যমেও চাপ তৈরি করেছে। কিন্তু আইপিওর টাকা এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে রাখার কোনো আইনগত সুযোগ নেই। সে কারণে এমডি সাহেব সহ সকল বিদেশী পরিচালক বাংলাদেশের তাদের ব্যবসা নিয়ে উদ্বিগ্ন সময় কাটাচ্ছেন। এমনকি বিদেশে পন্য আমদানী রপ্তানীর জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলে যে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি)খোলার পদ্ধতি চালু রয়েছে তাতে প্রিমিয়াম ব্যাংকের সঙ্গে রিং সাইন চুক্তিবদ্ধ। আইপিওর টাকা ওই ব্যাংকে জমা না দেওয়ায় তারা আমাদের এলসি কাযক্রম বন্ধ রেখেছে। ফলে বিপুল পরিমাণ পন্য আমদানি করা যাচ্ছে না। যা কারখানা চালু রাখার জন্য অতিজরুরী। এমন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের ব্যবসায়িক ঝুকিতে রয়েছে রিংসাইন টেক্সটাইল। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে পারে। তাতে কর্মচারি হিসেবে আমরা বড় ধরনের বিপদে পড়বো। দেশ হারাবে বিপিুল অংকের বিনিয়োগ ’’

এই ঘটনায় সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারী এই প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে বলে কোম্পানি সুত্রে জানাগেছে। এমন পরিস্থিতি সামলে না উঠতে পারলে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে পারে বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বাইশ বছর ধরে বাংলাদেশে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনাকারীরা এখন নিজের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন তেমনি বিপুল বিনিয়োগ নিয়েও উদ্বিগ্ন। এভাবে একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালকরা যদি উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে দিন কাটান এবং বিষয়টি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তবে তা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার কাজে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

দ্য রিপোর্ট/টিআইএম/১৩-০২-২০২০

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর