thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউল আউয়াল 1446

মোটা চাল রফতানির কথা আর ভাবছে না সরকার

২০২০ ফেব্রুয়ারি ১৮ ০৯:৪৬:৪০
মোটা চাল রফতানির কথা আর ভাবছে না সরকার

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করায় চলতি অর্থবছরে সেদ্ধ মোটা চাল রফতানির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। নতুন মৌসুমে পর্যাপ্ত ধান উৎপাদন হওয়ার পরেও এ ধরনের চাল রফতানির কথা আর ভাবা হচ্ছে না। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে সুগন্ধি চাল রফতানির পূর্ব সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১০ সাল থেকেই দেশে চাল উৎপাদনে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। দেশের মোট খাদ্যশস্যের চাহিদা সাড়ে তিন কোটি টনকে স্পর্শ করতে না পারলেও ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত দেশের চাল উৎপাদনের পরিমাণ এর কাছাকাছিই ছিল। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো চাল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। সে অর্থবছরে দেশে ৩ কোটি ৭৩ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়। উদ্বৃত্ত উৎপাদন ছিল ২৩ লাখ টন। এরপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও ৩ কোটি ৭৭ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রত্যাশা, চলমান অর্থবছরেও এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৭ লাখ টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন হওয়ার পর দেশের চাহিদা ঠিক রেখে উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য রফতানির কথা চিন্তা করে সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ থেকে সুগন্ধি চালের পাশাপাশি সেদ্ধ মোটা চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কৃষক পর্যায়ে ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সে সময় পরীক্ষামূলকভাবে দুই লাখ টন চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। তবে এই সিদ্ধান্ত ৬ মাসের মধ্যেই প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সেদ্ধ মোটা চাল রফতানির অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দুই মাস আগে নেওয়া সে সিদ্ধান্ত এখনও বহাল রেখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে চাল রফতানির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অব্যাহতভাবে আবেদন জানিয়ে আসছেন চাল ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, এই মুহূর্তে দেশে প্রচুর পরিমাণে চাল মজুত রয়েছে। গতবছরের চালও রয়েছে গুদামগুলোতে। নতুন চালও সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তাই স্থান সংকুলানের অভাবে সংরক্ষণের এ চেষ্টা ব্যাহত হতে পারে। এ কারণে এই মুহূর্তে আবারও চাল রফতানির অনুমতি দিলে কৃষকরা লাভবান হবেন। তারা ন্যায্যমূল্য পাবেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অটো, মেজর, হাসকিং ও মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী জানিয়েছেন, চাল রফতানির সুযোগ পেলে কৃষক লাভবান হবে। তারা ন্যায্য মূল্য পাবেন। এতে তারা ধান উৎপাদনে উৎসাহী হবেন। দেশে প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপাদন হয়েছে। যা উদ্বৃত্ত। যদি ঘাটতি না থাকে, চাহিদা যদি পূরণ হয়, তাহলে রফতানিতে বাধা কোথায়? তিনি জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের চালের চাহিদা রয়েছে।

তবে তাদের কথা আর কানে তুলছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়টির একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার ২০১৯ সালের জুলাইতে দুই লাখ টন চাল রফতানির সুযোগ দিলেও জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মাত্র এক লাখ টনের মতো চাল রফতানি করতে সক্ষম হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে তারা তাল মেলাতে পারছে না বলে রফতানি করতে পারছে না। চাল কিনতে আগ্রহী দেশ যে দামে কিনতে চায়, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা সে দামে বিক্রি করতে পারে না। ওই দামে ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে বলে বাংলাদেশ থেকে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে চাল রফতানি করা যায়নি বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাই দেশের আপৎকালীন খাদ্য মজুত ঠিক রাখতে নতুন করে চাল রফতানির পরিকল্পনা নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানিয়েছেন, সামনে রোজা আসছে। একই সঙ্গে বন্যার মৌসুমও সেটি। এসব কারণে খাদ্য নিয়ে কোনও ধরনের ঝুঁকিতে যাওয়া যাবে না বলেই আমরা নতুন করে এ সময় মোটা চাল রফতানির কথা ভাবছি না।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও জানিয়েছেন, আপাতত মোটা সেদ্ধ চাল রফতানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তবে সুগন্ধি চাল রফতানির সুযোগ রয়েছে। কৌশলগত কারণেই মোটা চাল রফতানির অনুমতি বন্ধ রাখা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ফেব্রুয়ারি ১৮,২০২০)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর