thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৭ জমাদিউল আউয়াল 1446

লকডাউন কোনো সমাধান নয়

২০২০ মে ২৪ ০৯:৩১:১১
লকডাউন কোনো সমাধান নয়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: আচ্ছা বলুন তো- করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া কি খারাপ লক্ষণ? আক্রান্তের সংখ্যা যদি না-ই বাড়ে, তবে জাতিগতভাবে হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হবে কীভাবে? আর সেটা না হলে কোভিড-১৯ দূর করবেন কীভাবে? হিসাব বলে, যত দ্রুত আক্রান্ত, তত লাভ (দ্রুত প্রতিরোধ সক্ষমতা গড়ে উঠবে)!

সবার আগে হার্ড ইমিউনিটি ব্যাপারটা বোঝা দরকার। Herd অর্থ পাল (যেমন পশুর পাল) আর ইমিউনিটি মানে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। কোনো ব্যক্তি যখন কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তখন সেই ব্যক্তির শরীরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার সক্ষমতাও তৈরি হয়। যখন একই এলাকার অনেক মানুষের দেহে একইসঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তখন তা ওই ভাইরাসটিকে বিস্তারে বাধা দেয় বা নিঃশেষ করে ফেলে। এরই নাম হার্ড ইমিউনিটি।

কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রে তরুণ প্রজন্ম ও নারীর সংখ্যা যত বেশি, হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা তত সহজ। কেননা তরুণ প্রজন্ম ও নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি থাকে। কোনো এলাকায় যত তাড়াতাড়ি হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হবে; বৃদ্ধ ও অসুস্থ- যাঁরা ভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছেন, তাঁরা তত দ্রুত নিরাপদ (ঝুঁকিমুক্ত) হবেন! কেননা তাদের চারপাশে শক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এজন্য প্রাথমিক অবস্থায় বৃদ্ধ ও অসুস্থদের নিরাপদে রেখে তরুণদের ছেড়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যুর সংখ্যা কিন্তু সেই অনুপাতে বাড়ছে না! এতে প্রমাণিত হয়- হার্ড ইমিউনিটি সিস্টেম মেনে নেওয়াই বাংলাদেশের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। অবশ্য কেউ তা মেনে না নিলেও প্রকৃতির কিছুই যায় আসে না; সৃষ্টির শুরু থেকে এভাবেই চলেছে এবং চলবে। হয়ত আমরা এ নিয়ে এতোদিন মাথা ঘামাইনি, সে কারণে জানতামও না! এখন যেহেতু জানতে পারলাম, তখন নানা পাল্টা যুক্তি আসা শুরু হয়েছে। যদিও এসব মন্তব্য/মতামত কতখানি যৌক্তিক- সেটা সময়ই বলে দেবে!

অনেকে বলছেন, বাংলাদেশের কোভিড-১৯ পজিটিভ অসংখ্য, কেবল টেস্ট করা হচ্ছে না বলে শণাক্ত কম হচ্ছে! নিশ্চয় চীনের দেওয়া তথ্য পড়েছেন? তারা বলেছে, কোভিড-১৯ পজিটিভ ৮০ শতাংশ রোগী কোনো লক্ষণই প্রকাশ করে না। এটা অবশ্যই একটা সুসংবাদ। আমাদের দেশে সত্যিই যদি এমন অনেক রোগী থাকেন যাদের লক্ষণ নেই বা মৃদু লক্ষণ আছে বিধায় হাসপাতালমুখী হতে হচ্ছে না, কয়েক দিনের মধ্যেই তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেবেন- যা করোনাভাইরাস নির্মূলে সহায়তা করবে; এটা তো সবার জন্যই ভালো।

অনেকেই মনে করছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা (লকডাউন, স্কুল বন্ধ, অফিস বন্ধ, সমাবেশ বন্ধ) বোধহয় করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র সমাধান। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্পর্কে যত ধরনের গবেষণা আছে, সব ঘাঁটলে দেখবেন- ভাইরাস দমনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার কোনো ভূমিকা নেই। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে আক্রান্ত হওয়ার গতি হ্রাস পাবে (যে কারণে ১৪ দিনের লকডাউন দুই মাসেও ফুরোচ্ছে না), কিন্তু আক্রান্ত সবাইকে হতেই হবে- সেটা আজ অথবা কাল। আক্রান্ত বা মৃত্যু-ঝুঁকি হ্রাসে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো কার্যকারিতাই নেই।

ইনফ্লুয়েঞ্জা মাত্রই পেনডামিক- যা সারা বিশ্বে ছড়াবেই। হাজার চেষ্টা করলেও একে নির্দিষ্ট গণ্ডীতে আটকে রাখা সম্ভব নয়। কোভিড-১৯ যেহেতু ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাস, এটাও বিশ্বব্যাপী ছড়াবে। কমপক্ষে আরো এক বা দুই মৌসুমে এর প্রকোপ থাকবে। প্রশ্ন করতে পারেন, ধনী রাষ্ট্রগুলো কেন তাহলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল বেছে নিলো? কারণগুলো নিম্নরূপ:

১. ইউরোপ-আমেরিকায় যেহেতু শীতল আবহাওয়া বিরাজ করছিল, কোভিড-১৯ এর মতো ভাইরাসগুলো এ সময়ে মৃত্যুহার বাড়ায়। তাই ইউরোপ-আমেরিকা শীত মৌসুম চলে যাওয়ার জন্য সময়ক্ষেপণ করেছে। তাদের হিসাব- গরমে আক্রান্ত হলেও মৃত্যুহার তত হবে না। কিন্তু আমরা পাশ্চাত্যের দেখাদেখি করছি ঠিক তার উল্টো কাজ- গরমে সময়ক্ষেপণ (যা কিনা প্রকারান্তরে পরবর্তী শীতের জন্য অপেক্ষা)।

২. ধনী রাষ্ট্রগুলো ভেবেছে- সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে আক্রান্তের গতি ধীর হলে অসুস্থদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া সুবিধাজনক হবে- যেটা একবারে অনেক রোগীকে দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা তাদের বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি হওয়ায় জটিল রোগীর সংখ্যাও বেশি। আপনরাই বলুন- ইউরোপ-আমেরিকা তাদের কম জন-ঘনত্ব ও অধিক চিকিৎসা সুবিধা নিয়ে যেভাবে চিন্তা করেছে, আমরা বাংলাদেশীরা হুবুহু সেভাবে ভাবলে কি সঠিক/যৌক্তিক হবে? আমাদের দেশে কোভিড-১৯ আসার আগেই তো চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে!

৩. ধনী রাষ্ট্রগুলো হয়ত তাদের জনগণকে অনেক মাস অব্দি বসিয়ে খাওয়াতে পারবে, কিন্তু আমাদের কি সেই সামর্থ্য আছে? ধনী রাষ্ট্রগুলোতে বৃদ্ধ বেশি, কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভালো। আর আমাদের বৃদ্ধ কম, কিন্তু আর্থিক অবস্থা দুর্বল। তারা সবকিছু বিবেচনা করেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারছে। কিন্তু আমাদের পরিস্থিতি তো সম্পূর্ণ উল্টো। আমরা যদি তাদের অন্ধ অনুকরণ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় অব্যাহত রাখি (লকডাউন, শাটডাউন, স্কুল বন্ধ, অফিস বন্ধ, রাস্তাঘাট বন্ধ, সমাবেশ বন্ধ, সবার থেকে ব্যক্তি দূরত্ব), তবে আমাদের লাভের চাইতে ক্ষতিই বরং বেশি হবে। ভাইরাসে যত লোক মারা যাবে, তার থেকে ঢের মারা যাবে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে!

এ ধরনের পরিস্থিতিতে আবেগ বা অন্ধ-অনুকরণে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নিজেদের প্রকৃত হাল-অবস্থা না বুঝে অন্ধ অনুকরণ বা আবেগে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা হিতে বিপরীত হতে পারে। করোনাভাইরাস যদি একজনের মৃত্যু ডেকে আনে, তবে আমাদের আবেগ ও অন্ধ অনুকরণে লকডাউনসহ নানান সিদ্ধান্তের কারণে হতে পারে ১০০ জনের মৃত্যু; এর বাইরেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বহু লোক। সুতরাং-

ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।

দোহাই লাগে, ঈদের পর-

লকডাউন আর বাড়াইও না।

বি.দ্র.: লেখাটি বিক্রয় ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, লেখক রাজিব আহমেদের ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত ও পরিমার্জিত।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৪মে, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর