thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৭ জমাদিউল আউয়াল 1446

কষ্টের পাহাড় পেরিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৪৯ বছর…

২০২০ জুলাই ২৭ ০৯:৩১:০১
কষ্টের পাহাড় পেরিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৪৯ বছর…

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেই ‘টাকার অভাবে’ একমাত্র ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) পড়াতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা শেখ রেহানার ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনার পাশাপাশি সবাই চাকরি করে নিজেদের খরচের জোগান দিয়েছেন। এমনও হয়েছে, পড়ার মাঝে গ্যাপ দিয়ে চাকরি করে আবার পড়াশোনা করেছে। একবার গ্র্যাজুয়েশন হয়েছে, কিছু দিন চাকরি করেছে, স্টুডেন্ট লোন নিয়েছে, সেটা শোধ দিয়েছে আবার ভর্তি হয়েছে মাস্টার্স ডিগ্রি করেছে। আবার সেই লোন শোধ দিয়েছে। এইভাবে পড়েছে। পড়াশোনা করা অবস্থায়ও ঘণ্টা হিসেবে কাজ করেছে, পার ঘণ্টা একটা ডলার পেত, সেটা দিয়ে তারা চলত।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫০তম জন্মদিন আজ (২৭ জুলাই)। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জন্ম হয় তার। পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান জয়। জয়ের নাম রাখেন তার নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নিলেও বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে সজীব ওয়াজেদ জয়কে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার সময় মা ও বাবার সঙ্গে জার্মানিতে ছিলেন। পরে মায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ভারতে চলে যান তিনি। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে ভারতে।

ভারতের ব্যাঙ্গালোর ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করার পর সজীব ওয়াজেদ জয় কিছু দিন চাকরি করেন, এরপর আরও উচ্চ শিক্ষার জন্য এমআইটিতে (আমেরিকা) চান্স পেলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শিক্ষার খরচ দিতে পারেননি। দুটো সেমিস্টার পড়ার পর প্রধানমন্ত্রী কিছু দিলেন ও তার কিছু বন্ধুবান্ধব সহযোগিতা করল, যার জন্য যেতে পারলেন।

প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাড়িয়ে একবার সেই গল্প বলেছিলেন, ‘আব্বার বন্ধু আমার ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার সব দায়িত্ব নিয়েছিলেন। উনি বলতেন, তুমি পলিটিক্স করো এটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। তিনি না থাকলে আমি পড়াতে পারতাম না। এমনকি মিশনারি স্কুলে তারা পড়েছে। সাত দিনই সবজি বা ডালভাত খেতে হতো, একদিন শুধু মাংস খেতে পারত। এভাবে কৃচ্ছ সাধন করে এরা বড় হয়েছে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘যখন এমআইটিতে দিতে পারলাম না। আমি প্রধানমন্ত্রী, আমার দ্বিধা হল, কাকে বলব টাকা দিতে বা কীভাবে আমি টাকা পাঠাবো, বুঝতে পারিনি। কার কাছে দেনা হব? আমার কারণে তার পড়া হল না। দুটো সেমিস্টার করে তাকে বিদায় নিতে হল। তারপর সে চাকরিতে ঢুকল।’

সজীব ওয়াজেদ জয় ২০০৭ সালে মায়ের অনুরোধেই হার্ভার্ডে ভর্তির আবেদন করেন। সেই সময়ের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৭ সালে বউমা অসুস্থ হলে দেখতে গেলাম। তখন তাকে অনুরোধ করলাম। কারণ আমার ভেতরে এই জিনিসটা খুব কষ্ট লাগত যে, আমি প্রধানমন্ত্রী হলেও তার পড়ার খরচ দিতে পারিনি। তখন আমি বললাম, তুমি হার্ভার্ডে আবেদন কর। আমি অনুরোধ করার পর সত্যি সে আবেদন করল। চান্স পেয়ে গেল।’

ছেলেকে প্রথম সেমিস্টারের টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার হয়ে তা আর সম্ভব হয়নি। সজীব ওয়াজেদ জয়ের ‘মা’ ও আমাদের প্রধানমন্ত্রী সারা বাংলার মানুষকে দেওয়া কথা রাখতে পারলেও একমাত্র ছেলেকে দেওয়া কথা রাখতে পারেননি। তিনি ছেলেকে কথা দিয়েছিলেন ফার্স্ট সেমিস্টারের টাকা যেভাবে হোক ম্যানেজ করে দেবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার আগেই গ্রেফতার হলেন। পরে সজীব ওয়াজেদ জয়ই কঠোর পরিশ্রম তরে নিজের টাকা নিজে যোগাড় করলেন।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের মতো শেখ রেহানার মেয়ে অক্সফোর্ডে চান্স পেয়ে পড়াশুনা করেছেন স্টুডেন্ট লোন নিয়ে। তারপর পড়াশোনা শেষে চাকরি করে লোন শোধ করেছেন, সে ২১ বছর বয়স থেকে চাকরি করেন। কয়েক বছর চাকরি করার পর সে মাস্টার্স ডিগ্রি করেছেন। বিরতী নিয়ে আবার চাকরি করেছেন।

সজীব ওয়াজেদ জয় ভারতের নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজে লেখাপড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করেন। পরে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে লোক প্রশাসনে স্নাতকোত্তর করেন।

২০০২ সালের ২৬ অক্টোবর ক্রিস্টিন ওভারমায়ারকে বিয়ে করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। ২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড হিসেবে নির্বাচিত হন সজীব ওয়াজেদ জয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্লোগানটি যুক্ত হয় তার নেপথ্যে ছিলেন জয়।

পরবর্তী সময়ে পর্দার অন্তরালে থেকে গোটা দেশে তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটান এই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। লেখাপড়া করা অবস্থায় রাজনীতির প্রতি অনুরক্ত থাকলেও জয় সক্রিয় রাজনীতিতে নাম লেখান ২০১০ সালে। ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ দেয়া হয় তাকে, যার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে আসেন তিনি। বর্তমানে মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২৭জুলাই, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর