thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

 তৃষা চামেলির কবিতা

২০২০ আগস্ট ১৬ ১৪:০১:৩৮
 তৃষা চামেলির কবিতা

পৃথিবী তোমাকে কুর্নিশ

মৃত্যুর মিছিল দেখে

ঈশ্বরের চোখেও অসহায় বোবাজল

পাখিদের ঠোঁটে কাকলিত হাসি

হাসছে সাগর, হাসছে নদী, অরণ্যও

হাসছে ইতর প্রাণীকূল যতো

ওরা তো জন্ম মৃত্যুর হাসি কান্না বোঝে না!

ওরা বোঝে শুধু নিসর্গের নৃত্য

সুন্দরের মহড়া

কাঁদছে কেবল পৃথিবীর মানুষ

অথচ কতোকাল ধরে অঝোরে কেঁদেছে পৃথিবী

মানুষ কখনোই শরীক হয়নি পৃথিবীর কান্নায়

পৃথিবীকে নিঃশেষ করে পৈশাচিক উল্লাসে

কেবলি করেছি ভ্রষ্টবাণিজ্য আর ক্ষমতার চাষাবাদ

আজ মানুষের কান্নায় রাত ও দিনের চোখেও জল

রৌদ্রগ্রামে গ্রহণঋতু, মেঘের প্রলাপ,

মানুষের গলা জড়িয়ে ধরে বিভোল হয়ে

কেমন দেখো কাঁদছে প্রেমের ধরণী!

পৃথিবী তোমাকে কুর্নিশ!

তোমরা আর মৃত্যুর কথা বলো না

তোমরা আর মৃত্যুর কথা বলো না

জীবনের নিথরনৃত্য দেখতে দেখতে

প্রায় ভঙ্গুর হতে চলেছে দৃষ্টি

পলল হৃদয়ে জমে উঠেছে চোরাবালি সন্ধ্যা

আমার আঙুলটা স্পর্শ করো

ছুঁয়ে দেখো সোনালি চিবুক

দেখতে পাচ্ছো ? এখানে কোন জীবনের প্রবাহ নেই

ঠোঁটে, নিতম্বে কেমন পুরনো তামাটে মুদ্রার মতো

সেটে আছে বীভৎস মৃত্যুমিছিল,

কবরের ছটফটানি, শ্মশানের বোবাকান্না!

শ্মশান কী আর মৃত্যুর হিসেব রেখেছে কখনো!

ওদেরও অরুচি আছে

দগ্ধকাঠে ঢালছে তাই মেঘ-জল, অশোকবৃষ্টি

যমরাজ সেও পালিয়েছে জীবন নিয়ে

হিসেবের খাতা ফেলে উধাও চিত্রগুপ্ত

তাকেও বুঝি ধরে ফেলে কপটকাল

বৈতরণী পার হবে বলে কাকে যেন

ডেকে ডেকে গলা ফাটাচ্ছে ওপারের যাত্রীরা

ঘাটে মাঝি নেই, নৌকো নেই

এমনকি ঘাটও নেই

কোথায় যেন ভাসছে নিঃসঙ্গ হাহাকারের ভেলা

এই অনাচার, ধৃষ্টতা, হাহাকার কেবলই

উপুড় হয়ে দেখছে বায়বীয় আকাশ

অবশেষে মেঘের খামে আকাশের চিঠি-

"মানুষ হতে আর কতো সময় নেবে হে মানুষ

কবে হবে চৈতন্য দর্শন!

তারচেয়ে হাসো মানুষ, উল্লাস করো প্রাণ ভরে

যেন মৃত্যুর পরেও গাইতে পারো

আনন্দের ঘুমগান।"

সেই থেকে মৃত্যু আর আমার ভিন্ন গ্রহে বসবাস।

আমাদের দেখা হবে আগামী বৈশাখে

এ অনাকাঙ্ক্ষিত বৈশাখ এভাবেই পার হয়ে যাক

শেষ হোক মহামারি, মড়কের দিন

নিশ্চই আমাদের দেখা হবে আগামী বৈশাখে

সে বৈশাখে কোন নিষ্ঠুর মৃত্যুর মিছিল থাকবেনা

থাকবেনা স্বজনের করুণ অশ্রু-বিলাপ

বাতাসের বুকেও থাকবে না পচা দূষণের কষ্ট

বৃষ্টির বুকে থাকবে না খরার অভিমান

থাকবে না সূর্যের চোখে ফুটন্ত ক্রোধের আগুন

চালচোর, গমচোর, ধানচোর, ভূঁইচোর ঘুষখোর ঘামখোর থাকবে না

থাকবে না যতোসব দালাল আর নির্লজ্জ জারজ দস্যুর দল

আমাদের দেখা হবে এক নির্মল সুবর্ণসকালে

প্রশান্ত বিকেলের রৌদ্র-ছায়ার বিশুদ্ধ বাতাসের সাথে

খেলবে আমাদের সন্তানেরা প্রজাপতির মতো

স্রোতে স্রোতে নদীরা আবারও কিশোরী বালিকা হবে

সাগর মন্থনে উঠবে শুধুই অমৃত

দূর আকাশে উড়বে শঙ্খচিল, গাঙচিল , ঈগল....বলাকার ঝাঁক

ফিরে আসবে অভিমানে চলে যাওয়া বিটপী ও প্রাণীকূল

সেই নতুন সকালটা হবে গাছের, মাছের,পাখির, ফুলের

তাবৎ প্রাকৃতজ জীব ও জড়ের

থাকবে না চাকর -মালিক, দাস-প্রভু

আকাশ ছাদের নীচে বসবে এক সাম্যের পৃথিবীর মেলা

যা এতোদিনে চেয়েছিলাম আমরা

আমি একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া হাতে দাঁড়িয়ে থাকবো

মধুকবির বিদায় ঘাটের কিণারায়

বিশ্বাস করো, এতোদিনে আমার যে

আলোকচিত্রের সাথে চেনাজানা তোমার আজকের আমি

একদম ঐ আমি নই

আমার পরনে থাকবে গাঢ় জলপাই রঙের জমিনে

ঠিক টিয়ের ঠোঁটের মতো লালপেড়ে শাড়ি

মনে হবে যেন বিশাল সুন্দরবন জড়িয়ে নিয়েছি দেহে

পায়ে হাই হিল নেই, চোখে নেই গগলস

পরিনি কোন চোখ ধাঁধানো অরনামেন্টসও

ঠোঁটে নেই কৃত্রিম রঙ

বুনো ফুলের মতো এক সাদামাটা অনিন্দ্য আমি

ঠিক যেমনটা তুমি চাইতে সারাক্ষণ

এই করোনাই আমাকে শিখিয়েছে মানবিক হতে

প্রাকৃতিক হতে, অহঙ্কারহীন ও আদিম হতে

তোমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি আমি

গুটি গুটি পায়ে তুমি ঠিক হেঁটে আসছো আমার কাছেই

তোমার পরনে সেই ধবধবে সাদা খদ্দরের ফতুয়া

সারা অঙ্গে অনুপম হাসির ঝিলিক

কৃষ্ণচূড়ার গুচ্ছটি নিয়ে ইচ্ছেমতো পত্র-পাপড়ি

ছড়িয়ে দিচ্ছো আমার এলোচুলে

আর আমি লজ্জায় নববধূর মতো রাঙা হয়ে যাচ্ছি

কানে কানে বলছো অস্ফুটে, " তৃষা, আমার মধুতৃষা,

ঠিক আমার মনের মতোই "।

অতঃপরদুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত

তুমি আমি যেন এক অনন্ত রাতের শুকসারি

নির্ভেজাল জোছনা-আঁধারে খুঁজে ফিরছি

আমাদের আদিম আমি কে।

মরণ দিনের শেষে

তোমার আমার দেখা হবে লজ্জা রাঙা ভোরে

দখিন হাওয়ার মাতাল বাতাস নতুন প্রণয় ডোরে।

তোমার আমার দেখা হবে শেষ বিকেলের ছায়ায়

রাজহংসীর লুকোচুরি দীঘির কাজল মায়ায়।

তোমার আমার দেখা হবে জোছনা ভরা রাতে

রাত্রি জাগা ফুল পাখি আর চন্দ্র তারার সাথে।

তোমার আমার দেখা হবে মেঘমল্লার দিনে

বাদল ঝরারাত্রি শেষে স্বপ্ন নিকেতনে।

তোমার আমার দেখা হবে কপোতাক্ষের বাঁকে

ভালবাসার লিরিক যেথা উড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে।

তোমার আমার দেখা হবে দিন ফুরানোর আগে

যদিও থাকি মৃত্যু ঘুমে উঠবো তবু জেগে।

তোমার আমার দেখা হবে মরণ দিনের শেষে

বাঁধবো যে ঘর স্বপ্ন রঙিন তুমুল ভালবেসে।

একটুখানি চাওয়া

যখন তুমি আসলে আমার কাছে

আকাশ জুড়ে বসলো চাঁদের মেলা

পালিয়ে গেল মৃত্যু কোথায় পাছে

জীবন খেললো অজর হাসির খেলা।

আর কতোকাল থাকবো বন্দি বলো

পরশ সে তো সঞ্জিবনী সুধা

প্রিয়তম, ওষ্ঠ মধু ঢালো

মিটুক আমার সাত জনমের ক্ষুধা।

এমনি করেই হারিয়ে যদি যাই

যে যার মতো আপন ছায়াপথে

তার'চে ভাল ক্ষণিক কাছে পাই

চলুক জীবন আনন্দেরই রথে।

মৃত্যু, সে তো কালের তুচ্ছ ঝড়

জীবন সত্য সকল কিছুর চেয়ে

যাক উড়ে সেই তুচ্ছ কালের খড়

নাচি তাথৈ জীবনের গান গেয়ে।

সকল পাওয়ার শ্রেষ্ঠ প্রিয় তুমি

ইহার চেয়ে পরম কিছু নাই

মধুর তোমার ওষ্ঠ সুধা চুমি

মরণ পারেও এ'টুক শুধু চাই।।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/আগস্ট ১৬,২০২০)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

সাহিত্য এর সর্বশেষ খবর

সাহিত্য - এর সব খবর