thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউল আউয়াল 1446

শামসুর রাহমানের চলে যাওয়ার ১৪ বছর

২০২০ আগস্ট ১৭ ১০:১৩:৪০
শামসুর রাহমানের চলে যাওয়ার ১৪ বছর

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: তাকে বলা হয় আধুনিক বাংলা কবিতার অমর স্রষ্টা। ততোধিক খ্যাত কবিতার বরপুত্র হিসেবে। সেই নাগরিক কবি শামসুর রাহমানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

২০০৬ সালের আজকের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাজধানীর বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরে সমাহিত করা হয় তাকে। নানা আয়োজনে আজ কবিকে স্মরণ করছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।

১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্ম নেওয়া এই কবি জীবনানন্দ-পরবর্তী বাংলা কবিতাকে আধুনিকতার পথে ধাবিত করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

কবি বেঁচেছিলেন ৭৭ বছর। তার জীবনের সাধনা ছিল একটাই- কবিতা। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ দশক থেকে বাংলা কবিতায় যারা উজ্জ্বল উপস্থিতির মাধ্যমে অবদান রেখে গেছেন, কবি শামসুর রাহমান তাদের অন্যতম। পুরান ঢাকায় বেড়ে ওঠার কারণে নগরজীবনের নানা অনুষঙ্গ ও উপকরণ তুলে ধরেছিলেন কবিতায়।

কবির কবিতায় ফুটে উঠেছে নগরজীবনের হতাশা, ক্লেদ, ক্লান্তি, জটিলতা এবং দুঃখ-বিক্ষোভ, শোক ও অপ্রাপ্তি। তিনি শুধু নগর জীবনের রূপকারই নন, বিভিন্ন সংগ্রাম, আন্দোলন, গণমানুষের প্রতিবাদী উচ্চারণ এবং জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিধ্বনি উঠেছে তার লেখনীতে। গল্প, প্রবন্ধ, কলাম, উপন্যাস, শিশুতোষ রচনা প্রভৃতি তিনি লিখেছেন। কিন্তু তার কাব্যখ্যাতি সব কিছুকে ছাপিয়ে উঠেছে।

ষাটের দশকের শুরুর দিকেই তার কবি প্রতিভার বিচ্ছুরণে আলোকিত হতে থাকে সাহিত্যের ভুবন। ‘উনিশ শ’ ঊনপঞ্চাশ’ রচনার মাধ্যমে ১৯৪৮ সালে পদচিহ্ন আঁকেন কবিতার আঙ্গিনায়। এটি প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকায়। সূচনাটা অস্তিত্ববাদী ইউরোপীয় আধুনিকতা দিয়ে হলেও পরে দেশজ সুর ও ঐতিহ্যকে কবিতায় ধারণ করেছেন। পত্রপত্রিকায় লেখা তার চিত্রকল্পময় কবিতার সূত্র ধরে প্রথম গ্রন্থ প্রকাশের আগেই বাংলা কবিতাপ্রেমীদের নজর কাড়েন শামসুর রাহমান।

১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয় তার কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’। কবির নিমগ্ন অন্তর্গতবোধ ও ভাবনার জগতের অপূর্ব রূপায়ণ ছিল এ কাব্যগ্রন্থে। ষাটের দশকে প্রকাশিত কবির উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- রৌদ্র করোটিতে, বিধ্বস্ত নীলিমা, নিরালোকে দিব্যরথ, আমি অনাহারী ইত্যাদি।

শামসুর রাহমান সমকালীন ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে চিরকালীনতার অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়েছেন তার কাব্য ভাবনায়। সাম্প্রদায়িকতা ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যেমন কবিতার ভাষায় প্রতিবাদ করেছেন, তেমনি মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত মানুষকে যুগিয়েছেন প্রেরণা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর লিখিত তার দুটি কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’ এবং ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ একই সঙ্গে পাঠক ও বোদ্ধাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ও সমাদৃত।

তৎকালীন পাকিস্তান আমলে আইয়ুববিরোধী গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব ও পরবর্তী বাস্তবতায় শামসুর রাহমান অস্ত্র হিসেবে বেছে নেন কলমকে। রচনা করেন বহু অনবদ্য কবিতা।

স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে বিদ্রুপ করে ১৯৫৮ সালে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় লেখেন ‘হাতির শুঁড়’ কবিতা। সত্তরের নভেম্বরে ভয়াল জলোচ্ছ্বাসের পর মওলানা ভাসানীর পল্টনের ঐতিহাসিক জনসভার পটভূমিতে রচিত ‘সফেদ পাঞ্জাবি’, তারও আগে ‘বর্ণমালা আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’, ‘গেরিলা’, ‘কাক’ ইত্যাদি কবিতায় উচ্চারিত হয়েছে এ দেশের কোটি মানুষের কণ্ঠধ্বনি।

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে জীবন বিসর্জন দেওয়া আসাদকে নিয়ে লিখেছেন ‘আসাদের শার্ট’ কবিতাটি। বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন কারাগারে তখন তাকে উদ্দেশ করে লেখেন কবিতা ‘টেলেমেকাস’। সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লিখেছেন ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’ ও ‘ইকারুসের আকাশ’ সহ অসংখ্য কবিতা।

এর বাইরে সাংবাদিকতা পেশায় দীর্ঘ সময় কাটান তিনি। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে মর্নিং নিউজে সাংবাদিকতার মাধ্যমে পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন। এর পর দৈনিক বাংলাসহ বহু জনপ্রিয় পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে গুরত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করেন।

শামসুর রাহমান স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। রবীন্দ্রভারতী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি দেওয়া হয়।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৭আগস্ট, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

সাহিত্য এর সর্বশেষ খবর

সাহিত্য - এর সব খবর