thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউস সানি 1446

নব অন্নের উৎসব

২০১৩ নভেম্বর ১০ ২০:০৭:৫৪
নব অন্নের উৎসব

দ্য রিপোর্ট২৪ ডেস্ক : বাংলাদেশ উৎসবের দেশ। বারো মাসে তেরো পার্বণ বলে একটি কথা বাংলায় প্রচলিত আছে। হেমন্ত নতুন ধানের সময়। হেমন্তের শুরুতে কার্তিক মাসে নতুন ধানে পাক ধরে। আর তাই কার্তিকের শেষের দিকে গ্রামে গ্রামে ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। এই নতুন ধানকে কেন্দ্র করে গ্রাম-বাংলায় বহুকাল ধরে উৎসব প্রচলিত আছে। যাকে নবান্ন উৎসব বলা হয়। বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম।"নবান্ন" শব্দের অর্থ "নতুন অন্ন"। গবেষকদের মতে, কৃষিপ্রথা চালু হবার পর থেকে নবান্ন উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। তবে ৪৭-এর দেশভাগের পর এই উৎসব ধীরে ধীরে কদর হারাতে থাকে।

হেমন্তের হালকা শীতের আমেজ, শিশির ভেজা ঘাসের সাথে নতুন ধানের গন্ধে বাংলার সাহিত্য জগৎ পরিপূর্ণ। কবি সুফিয়া কামাল তার কবিতায় হেমন্তের নতুন ধানের সঙ্গে আগমনী শীতের বর্ণনা করেছেন এভাবে-

‘এই তো হেমন্ত দিন, দিল নব ফসল সম্ভার
অঙ্গনে অঙ্গনে ভরি, এই রূপ আমার বাংলার
রিক্তের অঞ্চল ভরি, হাসি ভরি, ক্ষুধার্তের মুখে
ভবিষ্যৎ সুখের আশা ভরি দিল কৃষকের বকে
শিশির সিঞ্চনে সিক্ত দ্বারা বুকে তৃণাঞ্চল জাগে,
সোনালী ধানের ক্ষেতে ঈষৎ শীতার্ত হাওয়া লাগে
আনন্দ অশ্রুতে যেন ভিজা ভিজা আঁখির পল্লবে
মাটি, মাতা হেরিতেছে নবান্ন আসন্ন উৎসবে,
বিমুগ্ধ নয়নে হেরে পরিপূর্ণ ফসলের ভার,
অঙ্গ ভরিয়া আছে- আমার বাংলার।’

নবান্ন হল নতুন আমন ধানকাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসব।সাধারণত আগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কোথাও কোথাও মাঘমাসেও নবান্ন উদযাপনের প্রথা রয়েছে।অমুসলিম রীতিতে নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদি প্রাণীকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়-স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন। নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা নবান্নের একটি বিশেষ লৌকিক প্রথা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নৈবেদ্যকে বলে "কাকবলী"।অতীতে পৌষ সংক্রান্তির দিনও গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করার প্রথা ছিল। একটি কলার ডোগায় নতুন চাল, কলা, নারকেল, নাড়ু কাককে খাওয়াতে হয়। প্রচলিত বিশ্বাস হচ্ছে কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌছে যায়। এই নিয়ে একটি ছড়া প্রচলিত আছে। ছোট ছেলে-মেয়েরা ছড়া কেটে দাঁড় কাককে নিমন্ত্রণ করে-

"কো কো কো

আমাগো বাড়ি শুভ নবান্ন।

পাতি কাউয়া লাঠি খায়,

দাঁড় কাউয়া কলা খায়,

কো কো কো

মোর গো বাড়ি শুভ নবান্ন।"

নবান্ন উৎসব হিন্দুদের একটি প্রাচীন প্রথা। হিন্দুশাস্ত্রে নবান্নের উল্লেখ ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকেন। এই কারণে হিন্দুরা পার্বণ বিধি অনুযায়ে নবান্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে থাকেন। শাস্ত্রমতে, নবান্ন শ্রাদ্ধ না করে নতুন অন্ন গ্রহণ করলে পাপের ভাগী হতে হয়।

(দ্য রিপোর্ট২৪/কেএম/ এমডি/নভেম্বর ১০, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

শিল্প ও সংস্কৃতি এর সর্বশেষ খবর

শিল্প ও সংস্কৃতি - এর সব খবর