thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি 25, ২১ মাঘ ১৪৩১,  ৪ শাবান 1446

মাইন্ড এইড হাসপাতালে ‘টর্চার সেল’

২০২০ নভেম্বর ১০ ১৬:১৮:২৬
মাইন্ড এইড হাসপাতালে ‘টর্চার সেল’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রাজধানীর আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি। মূল সড়কের পাশেই ২৮১ নম্বর বাড়িতে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মাইন্ড এইড মাইন্ড কেয়ার ইনস্টিটিউট’। তিনতলা বাড়িটি খুবই সাজানো গোছানো। ভবনের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই নজরে পড়বে হাসপাতালটির দেয়ালজুড়ে টাঙানো দৃষ্টিনন্দন নানা চিত্রকর্ম। ভেতরের প্রতিটি রুমই পরিপাটি করে সাজানো। প্রতিটি রুমে দামি বিছানা, এসি, কাঠের আসবাবপত্র।

প্রথম তলায় অফিসসহ রুম আছে সাতটি। আর প্রতিটি ফ্লোর একই রকমভাবে সাজানো-গোছানো। তবে নিচতলার পূর্ব পাশে একটি রুমকে বানানো হয়েছে ‘সাউন্ড প্রুফ’। যেটির দেয়ালের ভেতরের অংশ ফোম দিয়ে মোড়ানো। দেখতে নির্যাতন সেলের মতো। সেখানেই চিকিৎসার নামে রোগীদের আটকে নির্যাতন করা হতো। সাধারণভাবে যে কেউ কক্ষটিতে প্রবেশ করলেই আঁতকে উঠবে। কারণ, রুমটিতে একটিমাত্র দরজা। নেই কোনো জানালা। বাতাস চলাচলেরও কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। এসি, লাইট আর সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো।

সোমবার দুপুরে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে এসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্যাতনে নিহত হন পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম। ওই নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে যা ভাইরাল হয়। পুলিশ কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় পরিবার একটি মামলা করে। সেই মামলায় হাসপাতালের কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ এখন পর্যন্ত দশজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) হারুন আর রশিদ ব্রিফ করে সাংবাদিকদের বলেন, হত্যার ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যারাই জড়িত থাক, সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি কোনো অনুমোদন না থাকলেও হাসপাতালটি দুইবছর ধরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এবছরের শুরুতে তাদের আবেদনের পরিপেক্ষিতে তদন্ত করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটি চিকিৎসা দেয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিল না। তাই অনুমতি পায়নি।

অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মচারী ঢাকাটাইমসকে জানান, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের আটকে রাখা হতো ৫ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত। নানা সময় নির্যাতন করা হতো এসব রোগীদের। বন্দী রাখা রোগীদের নজরদারি করা হতো সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে। বাইরে থেকে শুধু খাবারই দেয়া হতো। রোগীকে প্রাকৃতিক কাজ করতে হতো সেই রুমেই। কারণ রুমটিতে নেই কোনো টয়লেট। এমন কি বাইরে থেকে পানি না দিলে ভেতরে থাকা রোগীর পানি পান করারও কোনো উপায় নেই।

সরেজমিনেও মিলেছে এমন অমানবিক নির্যাতনের চিত্র। আর আশপাশের বাসিন্দারা বলছেন, তারা জানতেনই না এখানে চিকিৎসার নামে রোগীদের পাশবিক নির্যাতন করা হতো।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ হাসপাতালে সার্বক্ষণিক ডাক্তার ছিল না। শেরে বাংলা নগরের জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট হাসপাতাল থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী ভাগিয়ে আনার পর ডাক্তারকে ফোন করে আনা হতো। এমন কি হাসপাতালের অন্যান্য কর্মচারীদেরকে রোগী ভাগিয়ে আনার জন্য সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হতো। রোগী আনতে পারলে পেতেন মোটা অঙ্কের কমিশন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ৪৩ বেডের এই হাসপাতালটিতে একটি ফার্মেসি, রান্নাঘর এবং দুটি কেবিন রয়েছে। পুরো হাসপাতালে কর্মরত নার্স মাত্র তিন জন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালটির একজন রোগী ঢাকাটাইমসকে ঘটনার সময়ের বর্ণনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পুলিশের ওই কর্মকর্তাতে প্রথমে দ্বিতীয়তলার পূর্ব পাশের সাউন্ড প্রুফ রুমে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে কয়েকজন মিলে ধরে দড়ি দিয়ে পিছমোড়া করে বাঁধা হয়। এসময় তিনি অনেক চিৎকার আর আর্তনাদ করছিলেন। কিন্তু কোনো তোয়াক্কা না করে আরো কয়েকজন তাকে বাঁধতে যোগ দেয়। এরপর দুজন হাতের কনুই দিয়ে তার ঘাড়ে আঘাত করতে থাকেন। এসময় নির্যাতিত ওই পুলিশ কর্মকর্তা চিৎকার করে বলতে থাকেন ‘আমাকে বাঁচাও, বাঁচাও’। আমি মরে যাচ্ছি। এর কিছু সময় পরই তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

এদিকে পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে ১০ জনকে আদালতে নিয়েছে আদাবর থানা পুলিশ। সবাইকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে। অবৈধভাবে পরিচালিত হাসপাতালটিতে আর কারা জড়িত সে বিষয়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পুলিশের এই মেধাবী কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের বিচার চেয়ে আদাবরে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। তারা দোষীদের ফাঁসি দাবি করেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১০নভেম্বর, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর