thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ১০ মার্চ 25, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১,  ১০ রমজান 1446

আজ মহান বিজয় দিবস

২০২০ ডিসেম্বর ১৬ ০৮:০৫:৫৯
আজ মহান বিজয় দিবস

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বছরের আর সব দিনের মতো নয় আজকের সকাল। আজ পুব আকাশে উদিত রবির কিরণ বাংলাদেশের সবুজ পথেঘাটে যে পরশ বুলিয়ে যাবে তা বিজয়ের আবহে রঙিন। এই বিজয় তেজোদ্দীপ্ত; আরও উজ্জ্বল আরও বেশি সম্ভাবনার। এই বিজয়ের মহত্ব দেশের মানুষকে একাত্ম করেছে স্বয়ংসম্পূর্ণ সোনার বাংলা গড়ার এক অভিন্ন মনষ্কামে।

এমন স্বপ্ন নিয়েই জাতি আজ মেতে উঠবে ৪৯তম মহান জাতীয় দিবসে। কেননা এদিনটি বাঙালির জন্য মহান। গৌরবের, আনন্দের, অহঙ্কারের, আত্মমর্যাদার ও আত্মোপলব্ধির। রাজধানীসহ দেশের সব শহর-বন্দরের অলিগলি থেকে গ্রামগঞ্জের মেঠোপথে রাত থেকেই বেজে চলেছে বিজয়ের গান। দেশপ্রেমী মানুষের হৃদয়ের গহীনে উচ্চারিত হচ্ছে কবির পংক্তি ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই/খুশির হাওয়ায় ওই উড়ছে/বাংলার ঘরে ঘরে, মুক্তির আলো ওই ঝরছে।’

৪৯ বছর আগে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই দিনে বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল একটি দেশের। বাংলাদেশ নামের সেই দেশটি দিনে দিনে বিশ্ব-আসরে ঠাঁই করে নিয়েছে সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করে। তাই আজকের দিন বাঙালি জাতির জীবনে মহা-আনন্দের দিন। এমন একটি দিনের প্রতীক্ষায় হাজারও বছর কেটেছিল বাঙালির। বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আর তাদের এদেশীয় দোসরদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে সেই দিনটিই ছিনিয়ে এনেছিল জাতির সূর্যসন্তানেরা।

আজ তাই বিজয়ের দিনে মুক্তির জয়গানে মুখর বাঙালি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে জাতির সেইসব শ্রেষ্ঠ সন্তান ও অকুতোভয় বীর ও মা-বোনকে। আজ মুখে-মুখে ফিরবে চেতনাকে শাণিত করার গান। সমসুরে সকলে গাইবে ‘সবকটা জানালা খুলে দাও না/আমি গাইব গাইব, বিজয়েরই গান/ওরা আসবে, চুপি চুপি/যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ।’

ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ আজ সারাদেশে স্মৃতির মিনারগুলো শ্রদ্ধার্ঘ্য এবং ফুলে ফুলে ভরে উঠবে। রাত থেকেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে মিছিলের স্রোত চলেছে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পানে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে জাতি গাইবে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম/সকল শহীদ স্মরণে/আমার হৃদয় রেখে যেতে চায় তাদের স্মৃতির চরণে...।’

স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নায়ক বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও জাতি আজ শ্রদ্ধাবনত হৃদয়ে স্মরণ করছে। ঢাকার ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে তার প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে প্রবীণের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের মানুষও শ্রদ্ধা জানাবে। পাশাপাশি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারেও শ্রদ্ধা জানাতে ছুটবেন লাখো মানুষ।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। এতে তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বলে আখ্যায়িত করেন। পাশাপাশি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশে আজ গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত। সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের এ ধারাকে এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন। তাহলেই দেশ পরিণত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায়।

রাষ্ট্রপতি দেশে-বিদেশে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে বিজয়ের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘করোনা মহামারি মানবসভ্যতাকে ইতিহাসের এক চরম বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করে যাচ্ছে। করোনাযুদ্ধে জয়ী হতে আমি দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গণতন্ত্র ও সরকারবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করি। করোনা মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ভূমিকা রাখার শপথ হোক এ মহান দিবসের অঙ্গীকার।

বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সাধারণ ছুটির দিন। ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। দেশজুড়ে সরকারি-বেসরকারি ভবনে উড়বে জাতীয় পতাকা। এছাড়া হাতে হাতে উড়বে লাল-সবুজ পতাকা। বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি, বেসরকারি রেডিও এবং টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কদ্বীপ প্রধান সরকারি ভবন, প্রতিষ্ঠানে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। সবমিলিয়ে বর্ণিল বিজয় দিবস উদযাপন করছে বাংলাদেশ।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী হাতের অস্ত্র সমর্পণ করে। সেইদিনে তারা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল অকুতোভয় বীর বাঙালির সামনে। পরাজয়-সনদে স্বাক্ষর করে হার মেনেছিল। গৌরবের ও আনন্দের এই বিজয় অর্জনে ঝরেছে এক সাগর রক্ত। সম্ভ্রম গেছে হাজার হাজার মা-বোনের। আনন্দের পাশাপাশি তাই এদিন বাঙালির মনে বিষাদও থাকবে অনেক ব্যথা আর কষ্টের।

স্বাধীনতার এই অর্ধশতকে দুর্বার গতিতে সম্মুখপানে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। এরইমধ্যে মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদায় সমাসীন হয়েছি আমরা। রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিজেদের অর্থে তরতর করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প। এতে করে বিশ্ববাসীর কাছে এই খবর পৌঁছেছে যে বাংলাদেশ ‘সক্ষম’। সে সক্ষমতা দেখিয়েছে দেশটি। আজ বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ সুরক্ষা, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হার হ্রাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলিকেও পেছনে ফেলেছে। এছাড়া অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় গ্রাম-শহরের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে এনেছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/১৬ডিসেম্বর, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর