thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৬ জমাদিউল আউয়াল 1446

৪০ বছর ধরে ট্রাম্পকে 'সম্পদ' হিসেবে তৈরি করেছে কেজিবি: সাবেক রুশ গুপ্তচর

২০২১ জানুয়ারি ৩০ ১৭:৩০:৫৪
৪০ বছর ধরে ট্রাম্পকে 'সম্পদ' হিসেবে তৈরি করেছে কেজিবি: সাবেক রুশ গুপ্তচর

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: সোভিয়েত আমলের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে পরিচিত ছিল কেজিবি। যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ' এর প্রতিদ্বন্দ্বী এই গোয়েন্দা সংস্থা সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর এফএসবি নামে পুনর্গঠিত হয়। পুরনো সংস্থার অনেক অসমাপ্ত প্রকল্পও তারা চালিয়ে যায়।

সেই কেজিবির এক সাবেক চর ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, গত চার দশকের বেশি সময় ধরে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রাশিয়ার গোপন 'সম্পদ' হিসেবে তৈরি করেছিল তার সংস্থা।

ট্রাম্প পশ্চিমা বিরোধী প্রচারণায় ছড়িয়ে দিতে এতোটাই উৎসাহী ছিলেন যে- তা মস্কোতে রীতিমতো আনন্দের জোয়ার বইয়ে দেয়, বলেই ওই গুপ্তচর জানান।

গুপ্তচরবৃত্তির গোপন দুনিয়ায় 'সম্পদ' মানে; অন্য দেশের অভ্যন্তরে নিজেদের সহযোগী। বিশেষ সময়ে কাজে লাগানোর জন্যেই এমন ব্যক্তিকে তৈরি করা হয়।

গার্ডিয়ানকে সাক্ষাৎকার দেওয়া ৬৭ বছরের ইউরি শেভেৎস ১৯৮০'র দশকে ওয়াশিংটনে চর হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি ট্রাম্পকে 'কেমব্রিজ ফাইভ' খ্যাত এক গুপ্তচর চক্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ বলে উল্লেখ করেছেন। এই চক্রটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এবং স্নায়ুযুদ্ধের শুরুর দিকে ব্রিটিশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মস্কোতে পাচার করতো।

শেভেৎস- এর কাছ থেকে মূল তথ্য সংগ্রহ করেই 'আমেরিকান কম্প্রোমাত' নামের একটি নতুন বই লিখেছেন মার্কিন সাংবাদিক ক্রেইগ উঙ্গার। ইতোপূর্বে তিনি 'হাউজ অব ট্রাম্প অ্যান্ড হাউজ অব পুতিন' নামে আরেকটি বই লেখেন।

'আমেরিকান কম্প্রোমাত' গ্রন্থে স্থান পেয়েছে ট্রাম্প এবং তার কলঙ্কিত অর্থদাতা জেফ্রি এপসটেইন- এর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার এবং শিশুদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু, কারাগারে তার রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে।

শেভেৎস বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাস করছেন। গত সোমবার নিজ বাসভবন থেকে করা ফোনকলে তিনি বলেন, "ছাত্রাবস্থাতেই কাউকে নিয়োগ দেওয়ার এটি আদর্শ উদাহরণ। এরপর সেই ছাত্রদের অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভ করে।"

১৯৮০'র দশকে কেজিবির তৎকালীন এই মেজর ওয়াশিংটনে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকাকালে রুশ বার্তা সংস্থা তাস- এর একজন মার্কিন প্রতিনিধির ছদ্মপরিচয় ব্যবহার করতেন। ১৯৯৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাকে সাহায্য করার শর্তে স্থায়ীভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব নেন। ২০০৬ সালে লন্ডনে এফএসবির হাতে নিহত অ্যালেক্সান্ডার লিটভিশেঙ্কোও ছিলেন তার সহযোগী আরেক দলত্যাগকারী রুশ গুপ্তচর।

উঙ্গারের নতুন বইটিতে ১৯৭৭ সালে ট্রাম্প কীভাবে রুশ গোয়েন্দাদের নজরে আসেন- সেটা উঠে আসে। ওই সময় ট্রাম্প প্রথম বিয়ে করেন ইভানা জেলিনিকোভা নামের চেক মডেলকে। ইভানা চেকোস্লোভাক গুপ্তচর সংস্থার সদস্য ছিলেন এবং সংস্থাটির কার্যক্রমে সহায়তা দিত কেজিবি।

এর তিন বছর পর ট্রাম্প তখন পর্যন্ত তার সবচেয়ে বড় আবাসন প্রকল্প; গ্র্যান্ড হায়াত নিউইয়র্ক হোটেল তৈরির কাজ শুরু করেন। হোটেলটির জন্যে সিমন কিসলিন নামের এক সোভিয়েত অভিবাসীর কাছ থেকে ২শ' টেলিভিশন সেট কেনেন ট্রাম্প। কিসলিন জয়-লাড ইলেকট্রনিক্স নামের একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

শেভেৎসের মতে, জয়-লাড নিয়ন্ত্রণ করতো কেজিবি। আর কিসলিন টার্গেট শনাক্ত করার জন্য একজন 'স্পটার' এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। তিনিই উদীয়মান ব্যবসায়ী হিসেবে ট্রাম্পকে সম্ভাব্য 'সম্পদ' হিসেবে চিহ্নিত করেন। কিসলিন অবশ্য কেজিবির সঙ্গে জড়িত থাকার ব্যাপারটি বরাবরই অস্বীকার করেছেন।

যাই হোক, এরপর ১৯৮৭ সালে ট্রাম্প ও ইভানা প্রথমবারের মতো রাশিয়ার মস্কো এবং সেইন্ট পিটার্সবার্গ সফরে আসেন। শেভেৎস জানান, এই সময় ট্রাম্পকে কেজিবির ছদ্মবেশধারী কর্মীরা বেশ প্রশংসা করে। এবং তার মাথায় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বুদ্ধিটি দেয়।

প্রাক্তন মেজর শেভেৎসের ভাষায়, "কেজিবির জন্য এটা ছিল ট্রাম্পকে মুগ্ধ করার এক অপারেশন। কেজিবি চরেরা ট্রাম্পের সব ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন, এবং তিনি কেমন মানুষ সে সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট ধারণা ছিল। তার বুঝতে পেরেছিলেন, বুদ্ধিশুদ্ধির দিক থেকে ট্রাম্প ততোটা অগ্রসর নন, এবং সহজেই তাকে চাটুকারিতার মাধ্যমে প্রভাবিত করা সম্ভব।"

"তারা এই দুর্বলতাকে কাজে লাগায়। তারা এমন নাটক সাজায় যেখানে সবাই ট্রাম্পের ব্যক্তিত্ব আর বুদ্ধিতে মুগ্ধ। সকলেই অবাক, বিস্মিত আর উৎফুল্ল। যেন সকলেই ভাবছে; আরে এই লোকটাই তো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার উপযুক্ত। এমন লোকের পক্ষেই তো পৃথিবীকে বদলে দেওয়া সম্ভব। এভাবে তারা ট্রাম্পকে ইতিবাচক প্রশংসায় ভাসায় এবং একসময় ট্রাম্প টোপটি গিলেও ফেলেন। কেজিবির জন্যে ওই সময়ে যা ছিল বড় ধরনের সফলতা।"

এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পরই রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন নিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীতা লাভের চেষ্টা করতে থাকেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি নিউ হ্যাম্পশায়ারের পোর্টসমাউথে একটি ছোটখাট প্রচারণা র‍্যালিও করেন।

সেবছরের পহেলা সেপ্টেম্বর তিনি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং বোস্টন গ্লোবের মতো প্রভাবশালী দৈনিকে পুরো এক পাতার একটি বিজ্ঞাপন দেন। বিজ্ঞাপনের শিরোনাম ছিল, 'আমেরিকার পররাষ্ট্র প্রতিরক্ষা নীতির শিরদাঁড়া আরও মজবুত করার চেষ্টায় কোনো ক্ষতি নেই।"

রোনাল্ড রিগ্যানের শাসনামলের ওই বিজ্ঞাপন ছিল শীতল যুদ্ধের চরম অবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত ভবিষ্যতের ইঙ্গিত। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো জোটে অংশ দেওয়া নিয়ে সমালোচনা-সহ, মিত্র জাপানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অন্যায্য সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

এসব ঘটনায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ট্রাম্পের থেকে আসন্ন হুমকির বিষয়ে সতর্ক করার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু, ট্রাম্পের মতো অস্থিরমতি মানুষ শত্রুদেশের চর হতে পারেন বা একসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন- সেটা হয়তো ছিল সকলের কল্পনার বাইরে। আর সেখানেই বাজিমাৎ করে কেজিবি।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ভায়া দ্য গার্ডিয়ান।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/৩০ জানুয়ারি, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর