thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ১৮ জমাদিউল আউয়াল 1446

শুভ জন্মদিন সত্যজিৎ রায়

২০২১ মে ০২ ০৯:২৮:৩১
শুভ জন্মদিন সত্যজিৎ রায়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: সত্যজিৎ রায় উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার হিসেবে গেঁথে আছেন সংস্কৃতিপ্রেমীদের অন্তর গহিনে। তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা। শিল্পকলার নানা শাখায় ছিল সত্যজিৎ রায়ের বিচরণ। চলচ্চিত্র, নাটক, সাহিত্য, চিত্রকলা এমনকি সঙ্গীতে তার কৃতিত্ব সবাইকে বিস্মিত করেছে। বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে তিনি পালন করেছেন অগ্রণী ভূমিকা। চলচ্চিত্রে যোগ করেছেন নিজস্ব একটি ভাষা।

সত্যজিৎ রায় যেমন ছিলেন একজন বিখ্যাত বাঙালি ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক, তেমনই তিনি বাংলা সাহিত্যে তার অবদানের জন্যও বিখ্যাত। তার সৃষ্ট বিখ্যাত চরিত্র হলো- গোয়েন্দা ফেলুদা, বৈজ্ঞানিক প্রফেসর শঙ্কু ও তারিনীখুড়ো। তিনি এই তিনটি চরিত্র ছড়াও অনেক ছোটউপন্যাস ও ছোটগল্প রচনা করেছেন।

আজ ২ মে, বাংলা চলচ্চিত্রের এই মহান প্রবাদপুরুষের জন্মদিন। ১৯২১ সালের এই বিশেষ দিনে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন ক্ষণজন্মা এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। তার ডাক নাম মাণিক। সত্যজিতের পিতামহ ছিলেন সুকুমার রায় চৌধুরী (ছিলেন একজন বাঙালি শিশুসাহিত্যিক ও ভারতীয় সাহিত্যে "ননসেন্স ছড়া"র প্রবর্তক। তিনি একাধারে লেখক, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও সম্পাদক)।মায়ের নাম সুপ্রভা রায়। তাদের আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশে।

প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেন সত্যজিৎ রায়। কর্মজীবনে কলকাতায় ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি জে কিমারে জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে নিজেই চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং একের পর এক নির্মাণ করেন কালজয়ী সব চলচ্চিত্র।

বিভূতিভূষণের অনবদ্য সৃষ্টি ‘পথের পাঁচালী’ নিয়ে একই নামে তিনি তৈরি করেন তার জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র, যা ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। সত্যজিৎ রায় নির্মিত পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার- এই তিনটি চলচ্চিত্রকে ‘অপু ত্রয়ী’ বলা হয়, যা তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ম হিসেবে স্বীকৃত।

ডকুমেন্টারি ফিল্ম, শর্ট ফিল্ম, ফিচার ফিল্মসহ সত্যজিৎ পরিচালনা করেছেন মোট ৩৭টি ছবি। ৩৭ বছরের কর্মজীবনে তিনি নির্মাণ করেন অপুর সংসার, পরশপাথর, জলসাঘর, কাঞ্চনজঙ্ঘা, চারুলতা, দেবী, মহানগর, অভিযান, কাপুরুষ, মহাপুরুষ, গুপী গাইন বাঘা বাইন, প্রতিদ্বন্দ্বী, সীমাবদ্ধ, জনারণ্য, হীরক রাজার দেশ, গণশত্রু, আগন্তুক, শাখা-প্রশাখা, সোনার কেল্লা, জয়বাবা ফেলুনাথ প্রভৃতি চলচ্চিত্র। তার পরিচালিত অশনি সংকেত-এ বাংলাদেশের অভিনেত্রী ববিতা অভিনয় করেন এবং প্রশংসিত হন।

চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। চিত্রনাট্য রচনা, চরিত্রায়ন, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, চিত্রগ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা, সম্পাদনা, শিল্পী-কুশলীদের নামের তালিকা ও প্রচারণাপত্র নকশা করা- সবই করেছেন তিনি। গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদা ও বিজ্ঞানী প্রফেসর শঙ্কু চরিত্রগুলোর মাধ্যমে তিনি একাধারে গোয়েন্দা উপন্যাস ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লেখায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এর বাইরেও তিনি রচনা করেছেন বহু ছোটগল্প, ছড়া প্রভৃতি। আঁকাআঁকিতেও দক্ষ ছিলেন সত্যজিৎ। নিজের বইগুলোর প্রচ্ছদ ও অলংকরণ তিনি নিজেই করতেন।

সত্যজিৎ রায় তার জীবদ্দশায় অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনিই দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব যাকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। প্রথম চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে অক্সফোর্ডের ডিলিট পেয়েছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। ১৯৮৭ সালে ফ্রান্সের সরকার সত্যজিৎ সেদেশের বিশেষ সম্মানসূচক পুরস্কার লেজিওঁ দনরে ভূষিত করে। ১৯৮৫ সালে পান ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। এ ছাড়াও অসংখ্য সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন তিনি, যার মধ্যে রয়েছে অস্কার লাভ, যা তার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে গণ্য হয়।

১৯৮৩ সালে ঘরে বাইরে ছবির কাজ করার সময় সত্যজিৎ রায়ের হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর থেকে তার কাজের গতি ধীর হতে থাকে। ১৯৯২ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সত্যজিৎ রায় হাসপাতালে ভর্তি হন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের বেডে কাটে তার জীবনের শেষ দিনগুলো। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল এই মহান চলচ্চিত্রকার মৃত্যুবরণ করেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০২ মে, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জলসা ঘর এর সর্বশেষ খবর

জলসা ঘর - এর সব খবর