thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

পরীমনিই প্রথম নয়, এই বিখ্যাত নায়িকার সাথেও ঘটেছিল যৌন নির্যাতনের ঘটনা

২০২১ জুন ২৪ ১৮:৫৮:৪৪
পরীমনিই প্রথম নয়, এই বিখ্যাত নায়িকার সাথেও ঘটেছিল যৌন নির্যাতনের ঘটনা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: এই মুহুর্তে দেশের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা চিত্রনায়িকা পরীমনি হত্যাচেষ্টা ও ধর্ষণ মামলা। অভিনেত্রীর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সরব এখন পুরো সোশ্যাল মিডিয়া। সব পত্রিকার শিরোনাম এখন এই নায়িকা। হবে নাই বা কেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় নায়িকার উপর এমন যৌন নির্যাতনের ঘটনার এর আগে কখনো দেখেনি বাংলাদেশ । কিন্তু জানেন কী উপমহাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে হাইপ্রোফাইল ভিকটিম বাংলাদেশি অভিনেত্রী ঝর্ণা বসাক। শীর্ষস্থানীয় এই নায়িকার সাথে পাকিস্তানে ঘটেছিল এমনই বর্বরতা। যে ঘটনা কাঁপিয়ে দিয়েছিল গোটা পাকিস্তান সরকারকে।

ঝর্ণা বসাক বাংলাদেশের প্রখ্যাত নায়িকা ও অভিনেত্রী। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তিনি শবনম নামেই পরিচিত।

‘আমি রূপনগরের রাজকন্যা রূপের জাদু এনেছি, ইরান-তুরান পার হয়ে আজ তোমার দেশে এসেছি’...কিংবদন্তি অভিনেত্রী শবনম এই গানে ঠোঁট মিলিয়ে এদেশের চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। দর্শক মনে শিহরণ জাগান। এটি ছিল তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘হারানো দিন’ এর গান। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৬১ সালে পরিচালনা করেন ছবিটি। প্রথম ছবিই সুপার হিট। তারপর শুধুই দর্শকমন জয় করে এগিয়ে যাওয়া। নব্বই দশক পর্যন্ত পাকিস্তান আর বাংলাদেশে প্রায় ১৮৫টি ছবিতে অভিনয় করেন। তিনিই একমাত্র অভিনেত্রী যিনি কিনা পাকিস্তান চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা নিগার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন ১২ বার। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তান মিলিয়ে অসংখ্য নানা সম্মাননায় সমৃদ্ধ হয় তার অর্জনের ঝুলি।

কিন্তু অনেকের কাছে হয়তো এখন ধোঁয়াশা, ভাবছেন কে এই ঝর্ণা বসাক? এবার তাহলে আপনাদের জন্য আর একটু সহজ করে দেই। সুপারস্টার মান্না অভিনীত আম্মাজান সিনেমার কথা মনে আছে? ভাবছেন সেই সিনেমার নায়িকা তো ছিলো মৌসুমী, তাহলে আমি কার কথা বলছি! বলছি আম্মাজান চরিত্রটির কথা। মান্নার সেই আম্মাজানই আসলে ঝর্ণা বসাক অর্থাৎ শবনম। এটিই ছিল শবনম অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা।

একসময় শবনম বলতে মুগ্ধ ছিলো গোটা দুনিয়া। রুপালি পর্দায় শুধুই সাফল্যের সিঁড়িতে উঠেছেন তিনি।সেই সময় নাদিম শবনম জুটি ছিলো খুবই জনপ্রিয়।তার ১৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার রেকর্ড এখনও কেউ ভাঙতে পারেনি। রুপের মাধুর্য্য আর অভিনয়ের গুণে ললিউডে তিন যুগ ধরে রাজত্ব করেছেন এই নায়িকা।

কিন্তু শীর্ষে থাকা এই নায়িকার জীবনে ঘটে যাওয়া এক ঘটনা আলো ঝলঝলে ক্যারিয়ারে নিয়ে আসে অমাবশ্যা। দুর্বিষহ সেই রাত কেটে গেলেও শবনমের জীবনে দাগ থেকে গেছে সেই কালো রাতের। তবে সেই রাতে কী ঘটেছিল শবনমের সাথে, যা তাসের ঘরের মতো ভেঙে দিয়েছিল শবনমের ক্যারিয়ার?

১৯৭৮ সালের ১৩ই মে। লাহোরে নিজ বাড়িতেই স্বামী রবিন ঘোষ আর একমাত্র ছেলে রবি ঘোষকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন অভিনেত্রী। গভীর রাতে হঠাৎ দরজায় সজোরে কড়া নানার আওয়াজে ঘুম ভাঙে রবিনের। উঠে দরজা খুলতেই ৫ জন ডাকাত হামলা করে শবনমের স্বামীর উপর। রবিন বুঝতে পারে তারা ডাকাতের কবলে পরেছেন। ডাকাত দল আর কী করবে, সর্বোচ্চ গহনা আর টাকা নিয়ে চলে যাবে। যা নিবে শবনম তা দুইটি সিনেমায় অভিনয় করেই কামিয়ে নিবে। তাই লুটপাটে বাধা দেয়নি তারা। কিন্তু কেবল লুটপাট নয়, ডাকাতদের উদ্দেশ্যে ছিলো অন্য কিছু। লক্ষ্যাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর তারা শবনমের স্বামী আর ছেলেকে বেঁধে ফেলে। এরপর স্বামী সন্তানের সামনেই শবনমকে সারা রাত গণধর্ষণ করে। শুধু তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার ছিলো না সেই সময়ের জন প্রিয় সঙ্গীত পরিচালক রবিন ঘোষের।

প্রাথমিক ভাবে এদের ডাকাত মনে হলেও, ধীরে ধীরে খুলতে থাকে রহস্যের জট। কেঁচো খুঁড়তে যেন সাপ বেড়িয়ে আসে এই ঘটনায়। আসলে ডাকাতির কোনো উদ্দেশ্যে ছিলো না তাদের। আর তারা কোন ডাকাত দলের সদস্যও ছিলো না। তারা ছিলো উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক পরিবার থেকে আগত। টাকা পয়সার কোনো অভাব এদের ছিলো না। শবনমের ক্ষতি করাই ছিলো এদের মূল উদ্দেশ্যে।

তবে এ ঘটনার পর ক্যারিয়ারের কথা ভেবে চুপ থাকেননি শবনম। আওয়াজ তুলেছিলেন তিনি। মামলা করেছিলেন তাদের নামে। তবে ন্যায়বিচার যেন সহজ ছিলো না। মামলা করার পর জটিলতা আরও বাড়তে থাকে।

তৎকালীন পাঞ্জাবের মুখ্য সচিত এফ কে বান্দিয়ালের ভাগ্নি ফারুক বান্দিয়াল। সেই ছিলো মুখ্য আসামী। ক্ষমতার জোরে দমানোর চেষ্টা করে শবনমকে। কিন্তু শবনম দমে যাওয়ার পাত্রী ছিলো না। ভয়ে না পেয়ে তিনি তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। একে একে সিনেমা অঙ্গনের সবাই পাশে দাঁড়ায় শবনমের। ফলে একনায়ক জিয়াউল সরকার বাধ্য হন বিশেষ সামরিক ট্রাইবুলান ঘটন করতে। পাচ আসামীকেই দেওয়া ফাঁসির ফাঁসিত দণ্ডাদেশ।

কী ভাবছেন ন্যায়বিচার পেয়ে গেছেন শবনম। কিন্তু ফাসির রায় হওয়া আর কার্যকর হওয়া এক নয়। প্রধান আসামি ফারুকের মামা মুখ্যসচিব থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার সাথে সাথে সব কিছু পালটে যেতে শুরু করে। আবার চাপ দেওয়া হয় শবনমের পরিবারের উপর। তাদের পাকিস্তান ছাড়া করা হয়। এই সময় আর এক অপরাধী সামনে সে। সে হলো শবনমের আইনজীবি। মোটা অংকের টাকা পেয়ে সে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানায় ফাঁসির আদেশ মাফ করার জন্য। এক্ষেত্রে সে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ভুট্টো সরকারের আমলে হয়ে আসা নোংরা সাংস্কৃতিক চর্চাকে। পরে এই আসামীদের ফাঁসির আদেশ মৌকুফ করে দেওয়া হয়। ধর্ষন মামলা থেকে বাধ দিয়ে এটিকে সাধারণ ডাকাতির মামলা বলে নথি পত্রে উল্লেখ করা হয়। প্রতিপক্ষ অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়ায় এই রায় নীরবে মেনে নিতে হয় শবনমকে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ ২৪ জুন, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জলসা ঘর এর সর্বশেষ খবর

জলসা ঘর - এর সব খবর